• লা লিগা
  • " />

     

    ভালভার্দের ঘুষি-কাণ্ড: কী হয়েছে, কী হতে যাচ্ছে?

    ভালভার্দের ঘুষি-কাণ্ড: কী হয়েছে, কী হতে যাচ্ছে?    

    ভিয়ারিয়ালের কাছে শেষ মুহূর্তে হেরে লা লিগা ধরে রাখার আশা একরকম জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু শনিবার (৯ এপ্রিল) পাঁচ গোলের থ্রিলারের চেয়েও নাটকীয় একটি ঘটনা ঘটেছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। ম্যাচ শেষে বার্নাব্যুর পার্কিং লটে ভিয়ারিয়াল মিডফিল্ডার অ্যালেক্স বায়েনার মুখে ঘুষি মেরে বসেছিলেন মাদ্রিদ মিডফিল্ডার ফেদে ভালভার্দে।

    যেহেতু কোনো রকম ক্যামেরার অনুপস্থিতিতে ঘটেছে এই ঘটনা, তাই আসলেই কী ঘটেছিল তা নিশ্চিতভাবে বলা অসম্ভব। তবে সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভালভার্দে ও বায়েনা, দুই পক্ষের বর্ণনাই দিয়েছে। 

    বায়েনার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ম্যাচের পর টিম বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল ভিয়ারিয়ালের খেলোয়াড়েরা। তখন ভালভার্দে সেখানে এসে বায়েনাকে ডাকেন, এবং কিছু না বলে তার মুখে একটি ঘুষি মারেন। বায়েনার দাবি, এই আঘাতের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। তবে ভালভার্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বায়েনাকে তিনি আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন কী আসতে যাচ্ছে। 

    ভালভার্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে কোপা দেল রে’র ম্যাচে তার অনাগত সন্তানকে নিয়ে কটু মন্তব্য করেছিলেন বায়েনা। তার প্রতিশোধ হিসেবেই শনিবার বায়েনার মুখে ঘুষি মেরেছিলেন এই উরুগুয়াইন। 

    ভালভার্দের স্ত্রী, মিনা বনিনোর গর্ভপাত হতে পারে, এমন একটি গুজব জানুয়ারি মাসে শোনা যাচ্ছিল। তবে গর্ভপাতের ভয় কাটিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে সুস্থভাবেই পৃথিবীতে আসে ভালভার্দে ও বনিনোর সন্তান। 

    শনিবারের ঘটনার পর স্পেনের অনেক সংবাদমাধ্যমই বায়েনা পার্কিং লটে কী বলেছিলেন, সেটি বিস্তারিত আকারে প্রচার করতে শুরু করে। তবে বায়েনার এজেন্সি এসব দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, ভালভার্দে কেন ঘুষি মেরেছেন সেটা জানতেনই না বায়েনা। 

    রোববার অ্যাথলেটিককে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভিয়ারিয়াল বলে, “এই ব্যাপারে আমরা বায়েনাকে সমর্থন করি এবং করে যাব। ভালভার্দের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা বা না করা; বায়েনা যে সিদ্ধান্তই নিক, ক্লাব তার পাশে থাকবে। 

    “এই বিষয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে নিন্দা জানাবে না ক্লাব। এই আগ্রাসন ও আগ্রাসনের পিছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, উভয় দ্বারাই বায়েনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভালভার্দের পারিবারিক পরিস্থিতি নিয়ে সে কিছু জানত না।”

    এদিকে, ঘটনার পর পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করা মিশনে নামে ভালভার্দের এজেন্সি। ভালভার্দের একজন প্রতিনিধি পরদিনই বায়েনার এজেন্টকে ফোন দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ না জানাতে অনুরোধ করে। 

    জবাবে বায়েনার এজেন্ট বলেন, ভালভার্দে যেসব কথা বলার অভিযোগ এনেছেন বায়েনার বিপক্ষে, সেগুলো মিথ্যে। এবং এই অভিযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা শুনতে হচ্ছে বায়েনাকে, সেদিকে তাকিয়েই পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা ভাবছে তারা। 

    সোমবার ইন্সটাগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে বায়েনা বলেন, তিনি ও তার পরিবার অনলাইনে মৃত্যুর হুমকিও পাচ্ছেন। 

    বায়েনা লিখেন, “গত শনিবার, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচের পর একজন সহকর্মী দ্বারা আঘাতের শিকার হই আমি। ওই ঘটনার পর তার দলবল থেকে কিছু বিবৃতি এসেছে, যাতে বলা হয়েছে আমি পরিবারের একজন সদস্যের মৃত্যু কামনা করেছি। 

    “এই দাবির পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি তারা। একটি ট্র্যাজেডিকে ব্যবহার করে এই আগ্রাসনকে ন্যায্যতা দেওয়া হচ্ছে। কিছু মিথ্যে আছে যেগুলো শারীরিক আঘাতের চেয়েও বেশি ব্যথা দেয়। 

    “হুমকি, অপমান, এমনকি মৃত্যু কামনা; আমার পরিবারের যে ক্ষতি করা হচ্ছে তা অপূরণীয় এবং অযৌক্তিক। গতকাল আমি পুলিশের কাছে জানিয়েছি বিষয়টি। এখন বিচার তার কাজ করবে। আমি শুধু আমার পেশার উপর মনোযোগ দিতে চাই এবং ক্লাবকে সাহায্য করতে চাই।”

    এখানে উল্লেখযোগ্য, স্পেনের ফুটবল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো তদন্তের সম্মুখীন হচ্ছেন না ভালভার্দে। কারণ, ঘটনাটি ঘটেছে মাঠের বাইরে। রেফারির রিপোর্টে এর কোনো উল্লেখ নেই। 

    তবে মাদ্রিদ এই ব্যাপারে কিছুটা ভীত। যে কারণে ভালভার্দে ও তার দলবলকে পুরোপুরি নীরব থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ক্লাবটি। কিন্তু ভালভার্দের স্ত্রী, বনিনো এরই মধ্যে দুবার ইন্সটাগ্রামে ভালভার্দে ও তার ছেলের ছবি পোস্ট করেছেন। এবং টুইটারে তার স্বামীর দাবির পক্ষে কথা বলে টুইট করেছেন। তবে, গত কয়েকদিনে এ সবগুলো পোস্টই ডিলিট করে ফেলেছেন তিনি। 

    ভালভার্দে নিজে ক্লাবের পরামর্শ অনুযায়ী নীরবই থাকছেন। তবে তার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বায়েনাকে ঘুষি দেওয়ার ব্যাপারে তার কোনো অনুশোচনা নেই। বিষয়টি আদালতেও গেলেও তিনি তার দাবির সপক্ষে লড়ে যাবেন। 

    এই দ্বন্দ্বে মাদ্রিদ ভক্তদের পাশে পাচ্ছেন ভালভার্দে। বুধবার রাতে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচে যথারীতি শুরুর একাদশে ছিলেন এই উরুগুইয়ান। ম্যাচে আগে লাইন-আপ ঘোষণার সময় তার নাম ডাকতেই বার্নাব্যুর দর্শকরা বাড়তি উল্লাসে করতালি দেয়। ম্যাচের ১৫তম মিনিটেও তার সম্মানে করতালি দেয় ভক্তরা (ভালভার্দের জার্সি নাম্বার ১৫)। 

    শাস্তি হতে পারে ভালভার্দের? 

    এখনো পর্যন্ত কোনো ফুটবলীয় শাস্তির ইঙ্গিত না পাওয়া গেলেও সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত নন ভালভার্দে। স্পেনের জাতীয় ক্রীড়া কাউন্সিল এই ব্যাপারে তাদের সহিংসতা-বিরোধী কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবে। তাদের আলোচনা শেষে বিষয়টি স্পেনের ফুটবল ফেডারেশনের কাছে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, বিশেষ ক্ষমতাবলে ভালভার্দেকে দুই থেকে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে ফেডারেশন। কিন্তু শাস্তির সিদ্ধান্ত আসতে আসতে এখনো অন্তত মাসখানেক সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে অ্যাথলেটিক। যার মানে, ৬ মার্চ কোপা দেল রে’র ফাইনালে খেলতে পারবেন ভালভার্দে। 

    স্পেনের ক্রীড়া কাউন্সিল নিজেও ভালভার্দেকে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। সেটি হবে সকল খেলাধুলার ভেন্যু থেকে নিষেধাজ্ঞা, এক থেকে ছয় মাসের জন্য। 

    তবে এসব হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। স্প্যানিশ ফেডারেশন নিজেই অ্যাথলেটিককে জানিয়েছে, এই ঘটনার জন্য ভালভার্দের নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে না তারা। কিন্তু ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ভালভার্দের ভালোভাবেই আছে।