লিভারপুল-স্পার্সের ‘গুড ব্যাড এন্ড দ্য আগলি’: একটি প্রিমিয়ার লিগ ক্লাসিক
লিভারপুল ৪:৩ টটেনহাম
১৫ মিনিটের মধ্যেই লিভারপুলের তিন গোল, একদম বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে এরপর ধীরে ধীরে স্পার্সের ম্যাচে ফেরা, যোগ করা সময়ে রিচার্লিসনের সমতাসূচক গোল ও উন্মত্ত উদযাপন, যার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে অপর প্রান্তে জোটার গোল। ৯০ মিনিটে নিজেদের ‘গুড ব্যাড এন্ড দ্য আগলি’ সব দিক দেখিয়ে একটি প্রিমিয়ার লিগ ক্লাসিক উপহার দিল লিভারপুল ও টটেনহাম হটস্পার।
একটি ম্যাচকে অনেকভাবেই বিশ্লেষণ করা যায়। আমরা যদি এই ম্যাচকে দুই দলের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি-
লিভারপুল ঘরের মাঠে তাদের বাকি সব ম্যাচের মতোই এই ম্যাচ শুরু করে আগ্রাসী ভূমিকায়। প্রেসিংয়ে তাদের আগ্রাসনের বদৌলতেই ছয় মিনিটের মধ্যে গোল করেন জোন্স ও ডিয়াজ। ডিয়াজ-গাকপোদের নিয়ে গড়া লিভারপুলের নতুন ফ্রন্টলাইন কতটা ভয়ঙ্কর হতে যাচ্ছে, সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই ম্যাচেও। ১৪ মিনিটে গাকপোর এনে দেওয়া পেনাল্টি থেকে ম্যাচের তৃতীয় গোল করেন ফ্রন্টলাইনের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মোহামেদ সালাহ। প্রথম ৩০ মিনিট ম্যাচ পুরোপুরি ডমিনেট করলেও প্রথমার্ধের শেষের দিকে রক্ষণে কিছু ভুল করতে শুরু করে স্বাগতিকরা। সেরকম একটি ভুল থেকেই একটি গোল পরিশোধ করেন হ্যারি কেইন। দ্বিতীয়ার্ধেও লিভারপুলের রক্ষণের দুর্বলতা বার বার ফুটে উঠতে শুরু করে। যেই ম্যাচে জয় ছাড়া কোনো ফলাফল অকল্পনীয় মনে হয়েছিল শুরুতে সেই ম্যাচ হাত ফসকে যাওয়ার ভয় পেতে শুরু করে তারা। এবং অ্যানফিল্ডের দুঃস্বপ্ন সত্যি সত্যিই বাস্তবে পরিণত হয় যখন রিচার্লিসন ৯৩ মিনিটে গোল করে বসে। অ্যানফিল্ডে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তির উন্মত্ত উদযাপনের প্রায় সাথে সাথেই নিজেদের ‘ক্লাচ হিরো’র কার্ড খেলে লিভারপুল। ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে অপর প্রান্তে গোল করেন ডিয়গো জোটা।
লিভারপুলের চেয়েও বেশি এই ম্যাচের গল্পটা আসলে স্পার্সের। গত সপ্তাহেই নিউক্যাসলের কাছে নাকানি-চুবানি খাওয়া, অন্তর্বর্তীকালীন কোচকে বরখাস্ত করা এবং তরুণ রায়ান ম্যাসনকে আবার দায়িত্ব দেওয়া দলটি অ্যানফিল্ডে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। হ্যারি কেইনদের চোখে দেখে যেতে শুরু করে গত সপ্তাহের মতো ‘বেইজ্জতি’ হওয়ার ভয়। রক্ষণ থেকে শুরু পুরো দল ম্যাচের শুরুতে যেন ফুটবল খেলতেই ভুলে যায়। প্রথম ৩০ মিনিটে মাত্র ১৮ শতাংশ বলের দখল পায় স্পার্স। সেই সীমিত টাচের অধিকাংশই আবার তাদের পা থেকে কেড়ে নিয়েছে প্রতিপক্ষ লিভারপুল।
প্রাথমিক এই ঝড়ের পর লিভারপুলের কল্যাণে ম্যাচে ফিরে আসে স্পার্স। টেবিলের শীর্ষ ১২ দলের মধ্যে মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল খেয়েছে স্পার্স (৫৭)। কিন্তু এরপরও তারা পুরো মৌসুম শীর্ষ ছয়ে ছিল কেবল সন-কেইন-কুলুসেভস্কিদের বদৌলতেই। প্রতিবারের মতো এবারও দলের ত্রাতা হয়ে আসে এই ফরওয়ার্ড ত্রয়ী। প্রথমার্ধের শেষদিকে কেইন, এবং দ্বিতীয়ার্ধের ৭৭ মিনিটে সনের গোলে ম্যাচে ফিরে আসে স্পার্স। এই দুই গোলের মাঝখানে মোট চারবার পোস্টে বল লাগিয়েছেন সন-কেইনরা। ম্যাচের একদম শেষপ্রান্তে এসে কামব্যাক সম্পন্ন করেন বদলি খেলোয়াড় রিচার্লিসন। কিন্তু মৌসুমে রিচার্লিসনের প্রথম গোল, অ্যানফিল্ডের দর্শকদের চুপ করতে বলে উদযাপন, পুরো স্পার্স ডাগআউটের উচ্ছ্বাস ম্লান হয়ে যায় ৬০ সেকেন্ডের মধ্যেই। এরকম অসাধারণ একটি কামব্যাক নিজেদের দোষেই ‘বটল’ করে স্পার্স। লুকাস মউরার ব্যাকপাস কুড়িয়ে অপর প্রান্তে গোল করে বসেন ডিয়গো জোটা। শূন্য পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা। জোটার এই গোলে টেবিলেও তাদেরকে টপকে যায় লিভারপুল।
নিজেদের স্বাভাবিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী লিভারপুল ও স্পার্স, দুই দলই ভুলে যাওয়ার মতো একটি মৌসুম পার করছে। দুই দলের জন্যই শীর্ষ চার এখন প্রায় অসম্ভব। তবে ম্যাচশেষে তিন পয়েন্ট বাক্সবন্দি করা ইয়ুর্গেন ক্লপের মুখ যথেষ্ট উজ্জ্বলই ছিল। সমস্যা-জর্জরিত মৌসুমের শেষে এসে আলোর দেখা পেতে শুরু করেছে তার দল। সর্বশেষ চার ম্যাচেই জয় তুলেছে অলরেডরা। দলে কিছু পরিবর্তন আনলে আগামী মৌসুমে আবার পূর্বের রূপে ফিরতে পারে লিভারপুল, এই ইঙ্গিত এখন ভালোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে।
স্পার্সের জন্য ভবিষ্যৎ অনেকটাই ধোঁয়াশা। এই ম্যাচেও কেইনরা দেখিয়েছে তারা লড়াই করতে সক্ষম। কিন্তু নিজেদের ভুলের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়াটা যে তাদের নিয়তি হয়ে বসেছে, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছে এই ম্যাচ। নতুন স্পোর্টিং ডিরেক্টর, নতুন কোচ, নতুন খেলোয়াড়; সামনে অনেক কিছুতেই বদল আসতে যাচ্ছে ক্লাবটিতে। কিন্তু সেসব বদলের পর তারা কোনদিকে হাঁটবে, সেটা অনুমান করা এখন প্রায় অসম্ভব।