রুশো, লিভিংস্টোনের ঝড়, নাটকের অবসান পাঞ্জাবের হারে
পাঞ্জাব-দিল্লি, ধর্মশালা (টস-পাঞ্জাব/বোলিং)
দিল্লি ক্যাপিটালস- ২১৩/২, ২০ ওভার (রুশো ৮২*, পৃথ্বী ৫৪, ওয়ার্নার ৪৬, কারান ২/৩৬)
পাঞ্জাব কিংস- ১৯৮/৮, ২০ ওভার (লিভিংস্টোন ৯৪, তাইদে ৫৫, প্রাভসিমরান ২২, নরকিয়া ২/৩৬, ইশান্ত ২/৩৬, খলিল ১/২০)
ফলাফল: দিল্লি ১৫ রানে জয়ী
ধর্মশালায় আইপিএল ফেরার দিনে পরতে পরতে দেখা মিলল নাটকীয়তার। ডেভিড ওয়ার্নার-পৃথ্বী শয়ের দারুণ ওপেনিং জুটির পর রাইলি রুশোর ঝড়ে প্রথমবারের মত এই মৌসুমে দুইশো-পেরুনো দিল্লি বল হাতেও পাঞ্জাবকে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই দিয়েছিল। তবে হাল ছাড়ার আগেই হাল ছাড়তে নারাজ লিয়াম লিভিংস্টোন প্রায় একাই ম্যাচ বের করে ফেলেছিলেন। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখিয়ে ইশান্ত শর্মা শেষ যেই ওভারটা করলেন দুর্বল চিত্তের যে কারও সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেই যেতে পারত। নাটকীয় সেই ম্যাচে লিভিংস্টোনকে শেষমেশ থাকতে হয়েছে ট্র্যাজিক হিরো হিসেবে। পাঞ্জাবের প্লে-অফের আশাও কার্যত তাই শেষ করে দিয়েছে ইতোমধ্যে প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে পড়া দিল্লি।
২১৪ রানের লক্ষ্য দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই ইশান্ত ফিরিয়েছিলেন শিখর ধাওয়ানকে। পাওয়ারপ্লেটা এরপর ৪৭ রান তুলে ভালবভাবেই পাঞ্জাব পার করলেও পরের ওভারেই অক্ষর পাটেলের শিকার হয়ে ২২ রানে প্রাভসিমরান ফেরার পর উইকেটে এসে মাত্র ৩ রানেই ফিরতে পারতেন লিভিংস্টোন। ডিপ মিড উইকেটে নরকিয়া সেই ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়ে অথর্ব তাইদের সাথে জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন লিভিংস্টোন। বেশ কয়েকবার সুযোগ পেয়ে তাইদে ৩৮ বলে ফিফটি পেলেও আখেরে সেটা কাজে আসছিল না। ৪২ বলে ৫৫ রানে থাকতে তাইদে তাই আহত অবসরে যান; কিছুটা ট্যাকটিকাল সিদ্ধান্তেই। উইকেটে এসে জিতেশ শর্মাও অবশ্য ফিরলেন রানের খাতা খোলার আগেই।
১৬ ওভারে পাঞ্জাবের স্কোর তখন ১৩৫/৪। হুট করে তখনই জ্বলে উঠলেন লিভিংস্টোন। এদিন দারুণ বল করা খলিলকে পরের ওভারে একহাত নিয়ে তুললেন ২০ রান; যেই ওভারে আবার ফিরেছিলেন শাহরুখ খান। মুকেশ কুমারের করা পরের ওভারে স্যাম কারানকে সঙ্গী করে ২৯ বলে ফিফটি করা লিভিংস্টোন তুললেন ২১ রান। তবে পরের ওভারে ক্যাচ ফেলা সেই নরকিয়াই কারানকে ফেরালেন; পরের বলে রান আউট হলেন ব্রার আর ওভারে এলো মোটে ৫ রান! ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল পাঞ্জাবের জন্য। ইশান্তের শেষ ওভারের প্রথম বলটা ডট হলে গাণিতিকভাবেও শেষ আশা। তবে সেই আশা সঞ্চার করলেন ইশান্ত নিজেই পরের দুই বলে ১০ রান দেওয়ার পর কোমরের উপরে করলেন নো বল, সেই সাথে খেলেন ছয়! ম্যাচে লিভিংস্টোন আবারও ফিরিয়ে আনলেন পাঞ্জাবকে; শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ১৫ রান। সেখান থেকে ইশান্ত আর কোনও রান তো দিলেন নাই, শেষ বলে উল্টো থামালেন লিভিংস্টোনের ৪৮ বলে ৯৪ রানের অসামান্য ইনিংস।
এর আগে শকে নিয়ে দারুণ শুরু করেছিলেন ওয়ার্নার। দুজনে মিলে পাওয়ারপ্লেতে ৬১ রান তুলে ফেলার পর মাঝে আরশদিপ সিং-রাহুল চাহারের দুই ওভারে কিছুটা চাপে পড়ে ন্যাথান এলিসের ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ৩৯ রানে থাকা ওয়ার্নার। চাহারের বদৌলতে জীবন পেলেও এর পরের ওভারেই কারানের শিকার হয়ে ৩১ বলে ৪৬ রান শেষে থামতে হয় তাকে। উইকেটে এসেই এরপর মারমুখী হয়ে উঠেন রুশো। ৩৬ বলে এরপর শও পেয়ে যান এবারে নিজের প্রথম ফিফটি। পরের ওভারে এসে অবশ্য কারানই আবার তাকে থামান ৩৮ বলে ৫৪ রানের ইনিংস শেষে।
এরপরের গল্পটুকু শুধুই রুশোময়। ১৫ ওভারে দলের রান ছিল ১৪৮; সেখান থেকে ব্রারের দারুণ এক ওভারের পর রুশো ফিফটি করলেন ২৫ বলে। সেখানেই শুরু ঝড়। শেষ দুই ওভারে ফিল সল্টকে সঙ্গী করে নিলেন ৪১ রান। এক প্রান্তে সল্ট ১৪ বলে ২৬* রান করে অপরাজিত থাকলে রুশো মাঠ ছাড়েন ৩৭ বলে ৮২* রানের বিধ্বংসী ইনিংস শেষে। ম্যাচটাও যেন ওখানেই ছিনিয়ে নিয়েছিলেন রুশো।