আইপিএলের ভবিষ্যত রিটায়ার্ড আউট?
২১৪ রানের লক্ষ্যে দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ব্যাট করছিলেন পাঞ্জাব কিংসের অথর্ভ তাইদে আর লিয়াম লিভিংস্টোন। জয়ের জন্য শেষ পাঁচ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৮৬ রান। তখনই আচমকা ট্যাকটিক্যাল এক পরিবর্তন করে পাঞ্জাব। আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে রিটায়ার্ড আউট হয়ে নিজে মাঠ ছাড়লেও আদৌতে সেটা ছিল পাঞ্জাব ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত।
ফিফটি করলেও তার ব্যাটিং পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেনি। তার ধীরগতির ইনিংসে বাড়ছিল আস্কিং রান রেট । পাঞ্জাবকে ওভারপ্রতি তুলতে হত ১০.৭ রান করে। তাইদে খেলেছেন মোট ৪২ বল। অর্থাৎ সাত ওভারে বাঁহাতি এই ব্যাটার রান তুলেছেন ৬.৩ রানের কিছু বেশি। আর যখন রিটায়ার্ড আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন তখন আস্কিং রান রান রেটে বেড়ে দাঁড়ায় ওভারপ্রতি ১৭-তে বলা চলে বাধ্য হয়েই এই ট্যাকটিক্যাল মুভে গিয়েছে পাঞ্জাব ম্যানেজমেন্ট।
তাইদের পর ব্যাটিং অর্ডারে অপেক্ষা করছিলেন জিতেশ শর্মা, শাহরুখ খান, স্যাম কারানের মতো পাওয়ার হিটাররা। তাদের দিয়ে আস্কিং রান রেটের চাপ কমাতে চেয়েছিল পাঞ্জাব । কিন্তু তাদের কেউই সফল হননি, স্যাম কারান ডাবল ফিগারে গেলেও, জিতেশ-শাহরুখ দুজনই ফিরেছেন সিংগেল ডিজিটে। দুশো ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ায় তাইদের এমন ইনিংস টি-টোয়েন্টির সাথে বেমানানই বলা চলে। বাঁহাতি এই ব্যাটার জীবন পেয়েছেন দুবার।
স্ট্রাইকরেট ১৩০ হলেও এই ইনিংসে তার নিয়ন্ত্রন ছিল ৭০ ভাগেরও কম। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত মোট ১৪ বার রিটায়ার্ড আউটের ঘটনা ঘটেছে। রিটায়ার্ড আউট হওয়া ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস অবশ্য এই তাইদেরই।
এর আগে ফ্রান্সের ব্যাটার হেভিট জ্যাকসনের ইনিংস ছিল সর্বোচ্চ। ফ্রান্স সেই ম্যাচটা জিতলেও পাঞ্জাব হেরেছে। এক লিভিংস্টোন ছাড়া আর কেউই সেভাবে খেলতে পারেননি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, অথর্ভ তাইদেকে এত লম্বা সময় ব্যাট করতে না দিয়ে আরও আগে রিটায়ার্ড আউট হিসেবে তুলে নেওয়া যেত কিনা ?
ইয়ান বিশপ, দীপ দাসগুপ্তের মতো সাবেক ক্রিকেটার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন তাইদেকে আরও আগেই তুলে নিতে পারত পাঞ্জাব। সেক্ষেত্রে পাঞ্জাবের ফিনিশারদের হয়তো আস্কিং রান রেটের চাপে পড়তে হতো না সেভাবে। বিশপ অবশ্য প্রশংসা করেছেন পাঞ্জাবের এই সিদ্ধান্তের। সাবেক এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার মনে করেন, টি-টোয়েন্টিতে অদূর ভবিষ্যতে এমন দৃশ্য হয়তো প্রায়ই দেখা যাবে। আইপিএলের গত আসরে অশ্বিন মাঠ ছেড়েছিলেন লক্ষ্ণৌর বিপক্ষে। তারপর উইকেটে গিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন রিয়ান পরাগ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই ছক্কাতেই ম্যাচ জিতেছিল রাজস্থান। লক্ষ্ণৌ হেরেছিল মাত্র ৩ রানে। আইপিএলে ইতোমধ্যে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম চালু হয়েছে। ব্যাটিংয়ে রিটায়ার্ড আউটও সেরকম ট্যাকটিক্যাল সাবস্টিটিউশনের মতোই। কেউ ধীরগতিতে ব্যাট করলে অথবা টিম ম্যানেজমেন্ট যদি ভাবে সেই পরিস্থিতিতে তার চেয়ে ভালো আরও কেউ আছেন, তবে তাকে রিটায়ার্ড আউট হিসেবে তুলে নিলে নতুন ব্যাটার সুযোগ পেতে পারেন। পাঞ্জাবের এই সিদ্ধান্ত কাজে আসেনি, তবে এর নেপথ্যে যে উদ্দেশ্য ছিল সেটা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেও দিতে পারে আইপিএল তথা টি-টোয়েন্টিতে।
ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের মতো এই নিয়মটাও এক্স ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে কিনা সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।