গরীয়ান গিলের পর মোহিতে মুম্বাইয়ের মাতম, গুজরাটের গর্জন
কোয়ালিফায়ার ২, আহমেদাবাদ (টস-মুম্বাই/বোলিং)
গুজরাট টাইটানস- ২৩৩/৩, ২০ ওভার (গিল ১২৯, সুদর্শন ৪৩, হার্দিক ২৮*, চাওলা ১/৪৫, মাধওয়াল ১/৫২)
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস- ১৭১, ১৮.৩ ওভার (সূর্যকুমার ৬১, তিলক ৪৩, গ্রিন ৩০, মোহিত ৫/১০, রশিদ ২/৩৩, শামি ২/৪১)
ফলাফল: গুজরাট ৬২ রানে জয়ী
মুম্বাইকে রানের পাহাড়ে পিষ্ট করে দাপটের সাথে টানা দ্বিতীয় ফাইনালে জায়গা করে নিল গুজরাট। শুবমান গিলের অসামান্য সেঞ্চুরিতে মুম্বাইকে আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল গুজরাট। সূর্যকুমার যাদবের ফিফটিতে ম্যাচে মুম্বাই ভালভাবেই থাকলেও মোহিত শর্মার ক্ষণিকের তান্ডবে উড়েই গিয়েছে মুম্বাই।
২৩৪ রানের পাহাড় টপকাতে গিয়ে মুম্বাইয়ের শুরুটা হয় ভয়াবহ। ঈশান কিষান মাথায় আঘাত পেলে ওপেন করতে নামা নেহাল ওয়াধেরার সাথে রোহিত শর্মাও ফিরে যান শুরুতেই, মোহাম্মদ শামির শিকার হয়ে। সেই শামিকেই ৫ম ওভারে তুলোধোনা করে ২৪ রান তোলেন তিলক ভার্মা। তিলকের ঝড় পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে এসে থামান রশিদ খান। ১৪ বলে ৪৩ রানে থাকা তিলক স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে গুগলি মিস করে স্টাম্প খোয়ালে এর আগে বাউন্সারে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়া ক্যামেরন গ্রিন মাঠে ফেরেন আবার। সূর্যকুমারের সাথে জুটি বেঁধে রশিদের করা দশম ওভারে ১৫ রান নিয়ে দুজনে মিলে দলের শতরান পূর্ণ করেন।
১০ ওভারে যেখানে গুজরাটের রান ছিল ৯১, সেখানে মুম্বাই তুলে ফেলে ১১০ রান। তবে ১২-তম ওভারে ২০ বলে ৩০ রান করে লিটলের বলে স্টাম্প খুইয়ে গ্রিন ফিরলে ম্যাচটাও ঘুরতে থাকে গুজরাটের দিকেই। ৩৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করে একবার সুযোগ পাওয়া সূর্যকুমার তখনও মুম্বাইকে দেখাচ্ছেন আশা। তবে ১৫-তম ওভারে প্রথম বল করতে এসে মোহিত এরপর যা করলেন সেটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না মুম্বাই। ৩৮ বলে ৬১ রানে থাকা সূর্যকুমারের লেগ স্টাম্প উপড়ে ফেললেন দারুণ এক বলে, সেই ওভারেই মোহিত এরপর ফেরালেন বিষ্ণু বিনোদকেও। সেখান থেকেই তাসের ঘরের মত লুটিয়ে পড়ে মুম্বাই। পরের ওভারে রশিদ এসে টিম ডেভিডকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললে ম্যাচ সেখানেই কার্যত শেষ হয়ে যায়। পরের ওভারে এসে মোহিত আবারও জোড়া আঘাত হানার পর তুলির শেষ আঁচড়টাও তিনি টানলেন ৫-উইকেট পূর্ণ করে। মাত্র ১৪ বলেই ৫-উইকেট পূর্ণ করে ১৫৫-৪ থেকে মুম্বাইকে গুটিয়ে ফেললেন ১৭১ রানেই!
এর আগে আহমেদাবাদের স্টেডিয়াম একাই মাতিয়ে রেখেছিলেন গিল। ঋদ্ধিমান সাহার সাথে জুটি বেঁধে পাওয়ারপ্লেতে ৫০ রান তুললে পরের ওভারে পীযুষ চাওলা ফেরান ১৮ রানে থাকা ঋদ্ধিমানকে। রয়েসয়ে খেলে এরপর গিল ফিফটি তুলে নেন ৩২ বলে। ১২-তম ওভারে টানা দুই বলে আকাশ মাধওয়ালকে যেই দুটি ছয় মারলেন গিল, তাতে মাঠে থাকা শচীনও যেন হয়ে গেলেন বাকরুদ্ধ। ওই ওভারে পরে আরেকটা দৃষ্টিনন্দন কব্জির মোচড়ে ছয় মেরে ওভারে তোলেন ২১ রান।
৩০ রানে থাকার সময় ডেভিড যেই ক্যাচটা ফেলেছিলেন সেটা যে আইপিএল শিরোপা ফেলে দেওয়ার সমতুল্য, সেটা প্রমাণ করতেই যেন এরপর উঠেপড়ে লাগলেন গিল। আগের ম্যাচে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়া সেই মাধওয়ালকেই আবার বানালেন লক্ষ্য। চোখের পলক ফেলার আগে ৪৯ বলে পূর্ণ করে ফেললেন আসরের ৩য় সেঞ্চুরি, যেটা আবার মাত্র ৪ ম্যাচের মধ্যেই তৃতীয়! ১০-১৬ ওভারে গিলের কল্যাণে গুজরাট তুলল ৯২ রান! পরের ওভারে মাধওয়াল কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পান গিলের রাজসিক.৬০ বলে ১২৯ রানের ইনিংস থামিয়ে। তবে ম্যাচ যে ততক্ষণে ছিনিয়েই নিয়ে গিয়েছেন গিল। অন্য প্রান্তে দর্শকের ভুমিকায় থাকা সুদর্শনকে ৩১ বলে ৪৩ রান শেষে ‘রিটায়ার্ড আউট’ করার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট। আর মুম্বাইকে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে ম্যাচ থেকে ছুঁড়ে ফেলেন অধিনায়ক হার্দিক শেষদিকে ১৩ বলে ২৮* রান তুলে, যার মধ্যে জর্ডানের করা শেষ ওভারেই আসে ১৯ রান। ২৩৩ রানের সেই সংগ্রহটা মুম্বাইয়ের জন্য দিনশেষে দূর আকাশের তারা হয়ে থেকেছে মোহিতের মহিমায়।