লিভারপুল ২০২২-২৩: দুঃস্বপ্নের মৌসুম শেষে আলোর আভা
লিগ পজিশন: ৫ম।
কেমন গেল মৌসুম
পূর্বের মৌসুমে কোয়াড্রপলের দৌড়ে ছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। কিন্তু মৌসুমের শেষ দুই ম্যাচে গিয়ে বড় দুই শিরোপা (প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) হারিয়েছে তারা। এরকম হৃদয়বিদারক সমাপ্তির জন্য হোক, বা মৌসুমে অস্বাভাবিক পরিমাণ ম্যাচ খেলার জন্যই হোক, পূর্বের মৌসুমের অবসাদ ও ট্র্যাজেডি লিভারপুলকে গ্রাস করে রেখেছিল এ মৌসুমের শুরুতেও। এরসঙ্গে তাদের সাথী হয় একের পর এক ইনজুরি। লুইস ডিয়াজ, ডিয়গো জটা, থিয়াগো, জোয়েল মাতিপ মৌসুমের একটি বড় সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। আর ফ্যাবিনহো, জর্ডান হেন্ডারসন, ভার্জিল ভ্যান ডাইক, অ্যান্ডি রবার্টসন, ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ডরা একটি বড় সময় ভুগেছেন ফর্মহীনতায়। ফলশ্রুতিতে মৌসুমে কখনোই চেনা রূপে ফেরেনি অলরেডরা। ২০২০-২১ মৌসুমের মতো এবারও শেষ ১০-১২ ম্যাচে রেজাল্ট বের করে সম্মানজনকভাবে মৌসুম শেষ করলেও এই মৌসুম যে ক্লপ-যুগের সবচেয়ে বাজে মৌসুম, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শুধু মাঠের ফুটবল না, মাঠের বাইরেও টালমাটাল একটি মৌসুম পার করেছে তারা। বাজেভাবে মৌসুম শুরু করার পর নভেম্বরে ক্লাব বিক্রির ঘোষণা দেয় মালিকপক্ষ এফএসজি। পদত্যাগ করেন ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর, গবেষণা দলের প্রধান ও আরও বেশ কজন। বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার চার-পাঁচ মাসেও কোনো যুতসই অফার না পাওয়ায় মার্চে আবার থেকে যাওয়ার ঘোষণা দেয় এফএসজি।
মৌসুমে যা কিছু প্রাপ্তি
রবার্তো ফিরমিনোর চলে যাওয়ার সাথে সাথে লিভারপুলের ঐতিহাসিক আক্রমণ ত্রয়ী পুরোপুরি ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিন্তু এরপরও আক্রমণভাগ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত না লিভারপুল ভক্তরা। এই মৌসুমে দলে আসা ডারউইন নুনেজ ও কোডি গাকপো দুজনই খুব দ্রুত ভক্তদের মন জয় করেছেন। এই দুজনের সঙ্গে লুইস ডিয়াজ, ডিয়গো জটা ও মোহামেদ সালাহকে আনলে ভয়ঙ্কর এক এটাকিং লাইন-আপই দাঁড়ায়। রক্ষণ ও মিডফিল্ডে ঝামেলা থাকলেও লিভারপুলের আক্রমণভাগ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই ক্লাব-সংশ্লিষ্ট কারো। সামনে এই নিউ-লুক আক্রমণভাগ কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, সেই ইঙ্গিত ম্যান ইউনাইটেড, টটেনহাম, বোর্নমাউথের মতো বেশ কিছু দলের সামনেই দিয়েছে তারা।
মৌসুমটা যে কারণে ভুলে যাওয়ার মতো
এ মৌসুমে লিভারপুলের সমস্যার অভাব ছিল না। মালিকানা ও বোর্ড পর্যায়ে ঝামেলা, ইনজুরি ও ফিটনেস সংক্রান্ত সমস্যা, খেলোয়াড়দের শারীরিক অবসাদ ও ফর্মহীনতা… এরকম আরও কত কী! তবে এরমধ্যে, ক্লাবের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ ছিল মিডফিল্ড। ফ্যাবিনহো, হেন্ডারসনের ফর্মহীনতা ও থিয়াগোর ইনজুরি, মৌসুমের এক পর্যায়ে মিডফিল্ডে খেলানোর মতো খেলোয়াড়ই খুঁজে পাচ্ছিল না লিভারপুল। শুধু মিডফিল্ড না, রক্ষণেও যথেষ্ট ভুগেছে অলরেডরা। মৌসুমে মোট ৪৭ গোল হজম করেছে তারা, যা গত মৌসুমের প্রায় দ্বিগুণ এবং ক্লপ আমলে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ।
সেরা খেলোয়াড়: অ্যালিসন বেকার।
দলের রক্ষণ ও মিডফিল্ড দুটোই মৌসুমের একটি বড় সময় ফর্মহীনতায় ভুগলেও গোলের সামনে অ্যালিসন ছিলেন দেয়ালের মতোই। তার দৃঢ়তা ও সেভগুলোর উপর ভর করেই মোটামুটি সম্মানজনক একটি পয়েন্ট টোটাল নিয়ে শেষ করতে পেরেছে অলরেডরা।
মৌসুমের সবচেয়ে বড় মুহূর্ত: লিভারপুল ৭:০ ম্যান ইউনাইটেড।
সামনে কী?
আবারও পরিচিত রূপে ফিরতে হলে ক্লাবের বেশকিছু জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে লিভারপুলের। ইতোমধ্যে স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে জর্জ সুমাদকেকে নিয়োগ দিয়েছে ক্লাবটি। বোর্ড পর্যায়ে আরও কিছু পদে আসবে নতুন নিয়োগ। আর দল ঢেলে সাজানো নিয়েও আশাবাদী ইয়ুর্গেন ক্লপ। মিডফিল্ড গুছাতে ইতোমধ্যে অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টার, ম্যাসন মাউন্ট ও রায়ান গ্রাভেনবাচের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ক্লাব।
তবে লিভারপুলের আদি ও আসল ক্রিপ্টোনাইট হিসেবে থাকছে বিনিয়োগই। প্রতিপক্ষ ক্লাবগুলোর সমান খরচ করার সামর্থ্য ঠিক কখনোই ছিল না লিভারপুলের। সর্বশেষ পাঁচ মৌসুমে লিভারপুলের চেয়ে বেশি খরচ করেছে অ্যাস্টন ভিলা, উলভস, ওয়েস্ট হামের মতো ক্লাব। বিনিয়োগের স্বল্পতা এখন দলের চেহারাতেও ফুটে উঠতে শুরু করেছে। সর্বশেষ তিন মৌসুমের মধ্যে দুটিতেই হোঁচট খেয়েছে ক্লাবটি। মালিকপক্ষ এফএসজি এরপরও যে রাইভালদের মতো খরচ করবে না, সেই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। সীমিত সম্পদ নিয়ে ইয়ুর্গেন ক্লপ কীভাবে দল গুছিয়ে আনেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।