যেসব জায়গায় ভারতকে কাবু করে টেস্ট রাজত্বের গদা জয় করেছে অস্ট্রেলিয়া
ভারতকে টানা দ্বিতীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবিয়ে নিজেদের প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম পুরুষ দল হিসেবে তারা জিতেছে আইসিসির আয়োজিত সব টুর্নামেন্ট। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয়টা শেষমেশ সহজেই এলেও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ম্যাচের পাল্লাটা ভারি হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায়।
টসে জিতে ভারতের বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত
ম্যাচটা এক অর্থে ভারত ছুঁড়ে ফেলেছে শুরুতেই। প্রথম দিন সকালে পিচের সামান্য ঘাস আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ফাঁদে পা দিয়ে রোহিত শর্মা নিলেন বোলিং। দিনের শুরুতে সেই অর্থে সাফল্যটাও ধরে দেয়নি। এক প্রান্তে উসমান খাওয়াজা খাবি খেলেও ডেভিড ওয়ার্নারের শুরুটা হয়েছিল স্বভাবসুলভ। পরে অবশ্য ৭৬ রানের মাথায় ৩ উইকেট ফেলে নিজেদের সিদ্ধান্তকে সঠিক ভাবতে শুরু করেছিল রোহিতের দল। সেই ভাবনা অবশ্য ধোপে টেকেনি বেশিক্ষণ; বলা বাহুল্য টিকতে দেননি ট্রাভিস হেড ও স্টিভ স্মিথ।
রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে ছাড়া ভারতের একাদশ সাজানো
ফাইনালের প্রথম ইনিংসে ন্যাথান লায়ন বল করলেন মাত্র ৪ ওভার; তাতেই পেয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ এক উইকেট। প্রথম ইনিংসে সেই সিদ্ধান্তে যা একটু স্বস্তির জায়গা ছিল ভারতের জন্য, দ্বিতীয় ইনিংসে সেটাও কেড়ে নিল অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চম দিনে ঠিকই নিজের কর্তৃত্ব বিস্তার করে লায়ন দ্বিতীয় ইনিংসে পেলেন ৪ উইকেট। লায়নের মোট ৫ উইকেট নিশ্চয় পুড়িয়েছে ডাগআউটে বসে থাকা ভারতের সেরা স্পিনার রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে। উইকেটের কথা ভেবে বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট বোলারকে যে সুযোগই দেয়নি ভারত!
স্মিথ-হেডের বিপরীত ধর্মী জুটি
৭৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বিপদে অস্ট্রেলিয়া। আর একটা উইকেট হারালে তখন ভারত হয়ত পেয়ে যাবে চেপে বসার সুযোগ। সেখানেই স্মিথ যখন মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন, মাঠে নেমেই আগুন ঝরালেন হেড। দুজনের এই উষ্ণ-শীতল জুটিতে দিশেহারা ভারত। হেড শর্ট বলে কিছুটা দুর্বলতা দেখাচ্ছেন। যেই তার জন্য খাটো লেংথের পরিকল্পনায় যেতে হচ্ছে ভারতের বোলারদের, সেই তখনই খোলসে ঢুকে যাওয়া স্মিথকে ফ্রন্টফুটে টেনে আনতে যেতে হচ্ছে ফুল লেংথের পরিকল্পনায়। ভারতীয় পেসাররা তাই নিমেষেই হয়ে যায় দিশেহারা। দুজনের ২৮১ রানের জুটিটাই শেষমেশ ভারতকে মনস্তাত্ত্বিকভাবেও হারের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
গ্রিনের অসামান্য ক্যাচে রাহানের বিদায়
টেস্ট আঙিনায় ফিরে নিজেকে প্রমানে রাহানে ছিলেন বদ্ধপরিকর। তবে বাইশ গজে তার সময়টা যাচ্ছিল বেশ চড়াই উৎরাই পেরিয়েই। একবার জীবন পেলেন কামিন্সের নো-বলে, এক বার পড়ল ক্যাচ। সেসব কাজে লাগিয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছিলেন রাহানে। ভারত তখন ৬ উইকেট হারিয়ে বস্লেও ঠাকুরের সাথে জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়ার মনোযোগ হারানোর পূর্ণ ফায়দা লুটছিলেন রাহানে; এগিয়ে যাচ্ছিলেন ১৩-তম সেঞ্চুরির পথে। অবশেষে বাঁধ সাধলেন সেই কামিন্স! বলা ভালো গ্রিন। কামিন্সের বলে কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে বল রাহানের ব্যাটের কানায় লাগলে অসামান্য ক্ষিপ্রতায় গালিতে ক্যাচ লুফে নেন গ্রিন! ৮৯ রানে গ্রিনের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রাহানের ফেরাটা যেন ভারতের জন্য কালই হয়ে দাঁড়িয়েছিল/
ক্যারি-স্টার্কের জুটি
দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতের সামনে সুযোগ ছিল লক্ষ্যটা ৩৫০ রানের নিচে রাখার। সেটা হতে দেননি ক্যারি-স্টার্কের জুটি। স্টার্কের ৫৭ বলে ৪১ রানের সাথে অ্যালেক্স ক্যারির ৬৬* রানটা দিনশেষে লিড নিয়ে গিয়েছিল ৪৪৩ রানে। ছয় উইকেট হারিয়ে যখন কিছুটা বিপদে অস্ট্রেলিয়া; তখন দুজনে মিলে গড়লেন ১২০ বলে ৯১ রানের জুটি। ভারতের কফিনেও চতুর্থ দিনে পেরেক ঠুকে দেওয়ার জন্য সেটাই ছিল যথেষ্ট।