এবাদত তান্ডবের পর শান্ত-জাকিরের শতরানের জুটিতে চালকের আসনে বাংলাদেশ
একমাত্র টেস্ট, মিরপুর (টস-আফগানিস্তান/বোলিং)
বাংলাদেশ- ৩৮২ (শান্ত ১৪৬, জয় ৭৬, মিরাজ ৪৮, মাসুদ ৫/৭৯, আহমাদযাই ২/৩৯, রহমত ১/৩০) ও ১৩৪/১ (শান্ত ৫৪*, জাকির ৫৪*, আমির ১/২৭)
আফগানিস্তান- ১৪৬ (জাযাই ৩৬, জামাল ৩৫, জানাত ২৩, এবাদত ৪/৪৭, তাইজুল ২/৭, মিরাজ ২/১৫)
২য় দিন, স্টাম্পস
দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ ব্যাট করল দুই বার, আর তাতেই পুরোপুরিভাবে চালকের আসনে তারা। সকালের সেশনে আফগানিস্তানের শুরুটা যতটা ভাল হয়েছিল দিনের শেষটা হল ততটাই দুর্বিষহ। অভিজ্ঞতার অভাবের চওড়া মূল্য দিয়ে আফগানদের সামনে এখন ৩৭০ রানের লিডের পাহাড়।
অথচ দিনের শুরুতে খেলা বিশ মিনিটও টেকেনি সেই অর্থে। আগের দিনেই ট্রট বলেছিলেন ১০ রানের মধ্যে বাংলাদেশের বাকি পাঁচ উইকেট ফেলে দিতে চান তারা। ১০ না হলেও, ২০ রানেই সেটা হয়েছে। আবার গাণিতিক হিসেবের খুটিনাটি বিবেচনা করলে সেটা হয়েছে আসলে ৯ রানের ব্যবধানেই। ৩৭৩ রানের মাথায় ইয়ামিন আহমাদজাইয়ের প্রথম শিকার হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৮ রানেই থামার পরের ওভারে ৪৭ রানে থামলেন মুশফিকুর রহিমও, নিজাত মাসুদের শিকার হয়ে। সেখান থেকে মাসুদ যেন হয়ে উঠলেন দুর্বোধ্য। ওই ওভারেই তাইজুল ইসলামকে ফেরানোর পর শেষে এসে শরিফুল ইসলামকেও ফিরিয়ে মাত্র দ্বিতীয় আফগান হিসেবে অভিষেকেই পাঁচ-উইকেট পেয়েছেন এই পেসার।
তবে আফগানদের জন্য সুখবরটা টিকেছিল ওই মিনিট বিশেকই। ব্যাটিংয়ে নেমেই শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৬ রানে ফিরলেন তাদের সবচেয়ে বড় ভরসা ইব্রাহিম জাদরান। বল হাতে তাসকিন ওপেন করলেও লাইন কিছুটা এলোমেলো হওয়ায় দ্রুতই এবাদতকে আনা হলে যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন এই পেসার। সকালের স্পেলের অংকটা আসলে তার পারফর্ম্যান্সের প্রতি সুবিচার করেনি। আফগানিস্তান যে লাঞ্চে গেল ৩৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তাতে শরিফুলের আঁটসাঁট বোলিংয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে উইকেট নেওয়ার বল অন্য প্রান্ত থেকে এবাদত করে গিয়েছেন মুহুর্মুহু আক্রমণে। ১৭ রানে আব্দুল মালিককে ফেরানোর পর ৬ রানেই রহমত শাহকে ফেরান এবাদত। তবে ওই রহমত যে এর আগেও এবাদতের বল টানা দুইবার তার ব্যাটের কানা ছুঁলেও বেঁচে গিয়েছিলেন।
লাঞ্চের পর ফিরে এসেও নিস্তার মেলেনি আফগানদের। কিছুটা বাংলাদেশের পথে হেঁটেই পাঁচ রান রেটে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন তারা। আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদী গালিতে ওঁত পেতে থাকা মিরাজকে ক্যাচ দিয়ে ৯ রানে ফেরার পর বিপদ সামলে দ্রুত গতিতেই রান তুলছিলেন আফসার জাযাই ও নাসির জামাল। জুটি ভেঙে ৪৩ বলে ৩৫ রান করা নাসির জামালকে যখন এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন মিরাজ, তখনই আবারও হন্তারকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেন এবাদত। ৪০ বলে ৩৬ রান করা জাযাইকে তিনি প্যাভিলিয়নের পথ দেখালেন।একই জায়গায় বল করে এরপর আমির হামজাকে ক্লান্ত করে মুমিনুল হকের ক্যাচে বাড়ির পথ দেখান এবাদত। অন্যদিকে বোলিংয়ে ফেরত এসে প্রথম বলেই দারুণ এক বলে উইকেটের পেছনে আহমাদযাইকে তালুবদ্ধ করেন তাইজুল। চা-বিরতির আগেই যেখানে মনে হচ্ছিল আফগানরা গুটিয়ে যাবে, শেষমেশ তা হয়নি।
সেটা না হলেও চা-বিরতির পর ৩ রান তুলতেই নেই তাদের ২ উইকেট। শেষ উইকেট দুট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তাইজুল ও মিরাজ। আর তাতেই ৩৯ ম্যাচে ১৫০ টেস্ট উইকেটর মাইলফলক স্পর্শ করেন মিরাজ; যা বাংলাদেশি হিসেবে দ্বিতীয় দ্রুততম। রেকর্ডটা স্পিন বোলিং সঙ্গী তাইজুলের (৩৬ ম্যাচে)।
বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে এরপর বাংলাদেশ অবশ্য আফগানদের ফলোঅনে পাঠায়নি। তাতেই কি না বেপরোয়াভাবে খেলতে গিয়ে জয় একবার স্লিপে ক্যাচ দিয়ও বেঁচে যান, একবার বেঁচে যান সহজ রান আউটের সুযোগ দিয়েও। তবে তার উইকেটে সময়টা বেশিক্ষণ টেকেনি। ১৩ বলে ১৭ রানে আমিরের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েই ফিরেছেন জয়। সেখান থেকে ইতিহাস গড়তে সাহায্য করেছেন শান্ত-জাকির জুটি। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার দ্বিতীয় উইকেটে দুই ইনিংসেই দেখা মিলেছে শতরানের জুটি। জাকির ও শান্তকে দেখে মনে হল উইকেটে যেন এখনও প্রাণ আছে, ব্যাটিংটাও অতটা কঠিন নয়; যেমনটা গতকাল মনে হয়েছিল অনেকের। বল বাহুল্য সেটা মনে হতে বাধ্য করেছেন শান্ত, আর এবার সাথে জাকিরও। মজার ব্যাপার, দুজনেই আজ শেষ করেছেন হুবহু একই ব্যাটিং কার্ড নিয়ে - ৬৪ বলে ৫৪ রান!