বৃষ্টি, ব্যাটিং বিপর্যয়, বিষাক্ত আফগান বোলিংয়ে হার দিয়ে বাংলাদেশের শুরু
১ম ওয়ানডে, চট্টগ্রাম (টস-আফগানিস্তান/বোলিং)
বাংলাদেশ- ১৬৯/৯, ৪৩(৪৩) ওভার (হৃদয় ৫১, লিটন ২৬, সাকিব ১৫, ফারুকী ৩/২৪, রশিদ ২/২১, মুজিব ২/২৩)
আফগানিস্তান- ৮৩/২, ২১.৪ ওভার (ইব্রাহিম ৪১*, গুরবাজ ২২, শহীদি ৯*, সাকিব ১/৯, তাসকিন ১/২৬)
ফলাফল: আফগানিস্তান ১৭ রানে জয়ী (ডি/এল)
মাঠে লড়তে দল জিতবে নাকি আবহাওয়া হাসবে শেষ হাসি সেটা নিয়েই এক সময় ছিল চিন্তা। বৃষ্টি শেষমেশ হাসল ঠিকই, হাসাল আফগানিস্তানকেও। বলা ভাল আফগানরা সেই উপলক্ষ তৈরি করেছে নিজেরাই; বৃষ্টি কেবল জয়টা আগেভাগে এনে দিয়েছে। ফজলহক ফারুকীর দারুণ ওপেনিং স্পেল, রশিদ খান ও মুজিব-উর-রহমানের বিষাক্ত স্পিন জুটিতে রীতিমত নাকানিচুবানি খেয়েছে বাংলাদেশ। একাই লড়াই করা তাওহিদ হৃদয়ের ফিফটিতে বাংলাদেশকে শুধু কালক্ষেপণের পুঁজিই এনে দিয়েছিল। বৃষ্টিতে খেলা শেষমেশ বন্ধ হয়ে গেলে ডি/এল মেথডে এগিয়ে থাকাই জয়ের হাসি নিয়েই সিরিজ শুরু করেছে সফরকারীরা।
শুরু থেকেই ৪৩ ওভারে ১৬৪ রানের পরিবর্তিত লক্ষ্যে রয়েসয়ে এগিয়েছেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ১০ ওভারে দুজনে মিলে তুলেছিলেন ৩২ রান। তবে সাকিব আল হাসানের বলে হুট করেই লাগামছাড়া এক শট খেলতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দিয়ে ৪৫ বলে ২২ রান করে থামেন গুরবাজ। কিছুক্ষণ পরেই রহমত শাহকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করে যেই কিছুটা আশার যোগান দিলেন তাসকিন, তার এক ওভার পরেই সেই আশায় জল ঢেলে দিল আবহাওয়া। জাদরানের ৪১* রানে ততক্ষণে ২১.৪ ওভারে প্রয়োজনীয় ৬৭ রানের চেয়ে ১৬ রান এগিয়ে থাকায় শেষমেশ ওখানেই জয় পেয়ে গিয়েছে আফগানরা।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আরও একবার ফারুকীর শিকার হয়ে শুরুতে ফিরেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ওয়ানডেতে চার বারের মোকাবেলায় আজ চতুর্থ বারের মত এই আফগান পেসারের শিকার হয়ে তিনি ফেরেন ২১ বলে ১৩ রানের ইনিংস শেষে। শান্তকে নিয়ে এরপর ভাল শুরু করা লিটন বড় কিছু করার আশ্বাস দিচ্ছিলেন। তবে প্রথম পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার এক ওভার পরেই যেন উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসলেন লিটন। মুজিবের নিরীহ এক বল টেনে মেরে সরাসরি ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগে ক্যাচ তুলে দিয়ে তিনি ফিরলেন ৩৫ বলে ২৬ রান শেষে। একই পথে শান্ত হাঁটলেন পরের ওভারেই। এতক্ষণ সপ্রতিভ শান্ত বলের লেংথ না পড়ে সাধারণ এক বলে সুইপ করে আকাশে বলে ভাসিয়ে নবীর শিকার হয়ে ফিরলেন ১৬ বলে ১২ রান শেষে।
হৃদয়কে নিয়ে এরপর সাকিব আল হাসান ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করলে মাঝে বৃষ্টি বাগড়া দেয় এক দফায়। বৃষ্টির পরেও খোলসে ঢুকে থাকা সাকিব অবশ্য থামলেন দারুণ এক ক্যাচে। কাভারে উড়ন্ত নবীর দারুণ ক্যাচে আজমতউল্লাহ ওমরযাইয়ের শিকার হয়ে সাকিব ফেরেন ৩৮ বলে ১৫ রান করে। ঠিক পরের ওভারেই রশিদ খানের নিরীহ এক বলে স্টাম্পে ডেকে মাত্র ১ রানেই ফিরলেন মুশফিক। বিপদ আরও বাড়িয়ে একাদশে ফেরা আফিফ হোসেনও করতে পারেননি কিছুই। রশিদের লেগ ব্রেকে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে তিনি ফিরলেন মাত্র ৪ রানেই।
রশিদ-মুজিবের অসামান্য স্পেলের যেন কোনও জবাবই ছিল না বাংলাদেশের; উত্তর জানা ছিল না হৃদয় ও মাঠে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের। সেটার ফল পরে পেলেন আক্রমণে আসা ফারুকী। মিরাজকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফারুকী শেষ করেন তার ২৩ বলে ৫ রানের যন্ত্রণা। লড়াইটা তাই এক প্রান্তে একাই চালিয়েছেন হৃদয়। টপ অর্ডারই যেখানে খাবি খেয়েছে এই আফগান ত্রয়ীর কাছে সেখানে লোয়ার অর্ডারের কাছে কিছু আশা করাটাও বোধহয় অন্যায়; পারেননিও তারা। আরও একবার বৃষ্টির বাঁধা সামলে হৃদয় তার তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন ৬৭ বলে। তবে এক বল পরেই ওভারে তিনিও ফারুকীর শিকার হয়ে ৫১ রানে থামলে বাংলাদেশ যেতে পেরেছিল ৪৩ ওভারে ১৬৯ রান পর্যন্ত। শেষমেশ বৃষ্টিতে আফগানদের কাজ কিছুটা সহজ হয়ে গেলেও এই লক্ষ্য বেঁধে বাংলাদেশের আশাটাও হয়ত খুব একটা ছিল না।