অবসর ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন যে সাত ক্রিকেটার
একদিনের মাথায় অবসর ভেঙে ফিরলেন তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাকে ফেরানো গেল প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। অবসর ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের ফেরানোর ঘটনা যেমন আগে ঘটেছে, তেমনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের ঘটনাটাও নতুন নয়। জেনে আসা যাক ৭ জন ক্রিকেটারের ঘটনা যারা অবসর ভেঙে ক্রিকেটে ফিরেছিলেন।
ইমরান খান
অবসর ভেঙে ফুটবল বিশ্বে নিজের রাজত্ব চিরকালের জন্য অটুট করেছেন ফুটবলের এক অনন্য কিংবদন্তি, এই গেলো বছরেই। ক্রিকেটে এমনটা ঘটেছিল সেই ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে। ঠিকই ধরেছেন; পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তো পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিসংবাদিত সেরা নেতা। তবে তার এই নেতৃত্বের মহিমা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে সুযোগ নেই, সেটা তো অবসর ভেঙে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোণঠাসা বাঘের মত গর্জে উঠে অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্যই।
১৯৮৭ সালে ভারত, ইংল্যান্ডের সাথে টেস্ট সিরিজ জয়, প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর তিনটি ড্রয়ের পর ইমরান খানের নেতৃত্ব নিয়ে চারদিকে প্রশংসার জোয়ার। তবে সেই ‘৮৭ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক পাকিস্তানের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে বিশ্বকাপের পরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ইমরান। ইমরানের এই সিদ্ধান্ত যেমন জনগণের মানতে কষ্ট হল, তেমনি মেনে নিতে পারেননি তৎকালীন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী জেনারেল জিয়া-উল-হক। তার ডাকেই অবশেষে ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে অবসর ভেঙে ফিরলেন ইমরান। এরপর যখন অবসর নিলেন, নিলেন শেষবারের মতই, তবে সেটা তো নিয়েছেন বীরের বেশে, বিশ্বজয়ী হিসেবে।
জাভেদ মিয়াঁদাদ
পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপটা উঁচিয়ে ধরেছিলেন ইমরান, আর তাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বোধহয় তার সাথে ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার মনোমালিন্য নিয়ে আলোচনায় আসা পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার জাভেদ মিয়াঁদাদ। ‘৯২ বিশ্বকাপে ‘বড়ে মিয়াঁ’ পিঠের সমস্যা নিয়েও হলেন দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, পেলেন ৬টি ফিফটি। ওই বিশ্বকাপের পর ইনজুরির সমস্যার কারণে টেস্টকে বিদায় বললেন ১৯৯২ সালে। ওয়ানডেটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে শরীর যে সাই দিচ্ছে না সেটা বুঝেই বিশ্বকাপের আগে দল থেকে সরে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় বললেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর আবেদনে দশ দিনের মাথায় অবসর ভেঙে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ছয় বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড গড়লেন ১৯৯৬ বিশ্বকাপে খেলে। তবে বুড়ো শরীরে সেই বিশ্বকাপে তেমন কিছু একটা করতে না পারায় ওই বিশ্বকাপের পরেই চিরবিদায় জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনকে।
শহীদ আফ্রিদি
পাকিস্তানের একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক অবসরে গিয়েছেন বেশ কয়েকবার। ২০০৬ সালে টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ আফ্রিদি, পরে ফিরেছিলেন, ২০১০ সালে তো হলেন টেস্ট অধিনায়কও। অধিনায়ক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পেলেন ২০১১ সালে, বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে। তবে সেমি-ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে বিদায়ের পর ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। কয়েক মাসের মাথায়ই অবশ্য অনভিজ্ঞ দলের কথা ভেবে আবার ফিরলেন। বোর্ডের সাথে মান অভিমানের পর ২০১৭ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকেই বিদায় বললেন আফ্রিদি। ২০১৮ সালে অবশ্য ফিরেছিলেন আবার, তবে এক ম্যাচ খেলে আর খেলা হয়নি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
কেভিন পিটারসেন
ইসিবির সাথে কেভিন পিটারসেনের বাদানুবাদের ইতিহাসটা বেশ লম্বা। মাঠে যেমন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য, তেমনটাই দুর্বোধ্য। মাঠে ও মাঠের বাইরে তার আচরণের জন্য বেশ কয়েকবারই আলোচনায় এসেছেন। তবে ২০১১ বিশ্বকাপের পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন সাদা বলের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর। তবে কয়েক মাসের মাথায় সেই সিদ্ধান্ত বদলে ফিরলেন, সাথে সাথেই ফিরেছিলেন রঙিন জার্সিতেও। তবে বোর্ডের সাথে ঝামেলার পরিক্রমায় ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে বিদায় জানানোর পর আর ফেরেননি ‘কেপি’।
ব্রেন্ডান টেইলর
২০১৫ বিশ্বকাপে দারুণ খেললেন জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার ব্রেন্ডান টেইলর। তবে আকস্মিকভাবে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি দিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর বিদায় বললেন জিম্বাবুয়েকে। কারণ হল কাউন্টি, তবে ২০১৭ সালে নটিংহামশায়ারের সাথে চুক্তি বাতিলের পর আবারও ফিরেছিলেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। ফেরাটা রঙিন না হলেও জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি হিসেবেই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন নিজের।
স্টিভ টিকোলো
কেনিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক হিসেবে এক নামে তাকে চেনে ক্রিকেট বিশ্ব। ২০০৩ বিশ্বকাপে নিজেদের সেরাটা এসেছিল তার অধিনায়কত্বে। স্টিভ টিকোলো ২০১১ বিশ্বকাপের পর নিজের বুটজোড়া তুলে রেখেছিলেন। তবে বোর্ডের অনুরোধে ২০১৩ সালে ৪২ বছর বয়সে এই অলরাউন্ডার ফিরেছিলেন আবারও। ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের পর আর এরপর কেনিয়ার জার্সি গায়ে চড়ানো হয়নি তার।
কার্ল হুপার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের তখন অবিচ্ছেদ্য এক অংশ তিনি। অথচ ১৯৯৯ বিশ্বকাপের মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই ক্রিকেটকে বিদায় বললেন কার্ল হুপার! ১৯৯৯ বিশ্বকাপটা মোটেও ভাল গেল না ক্যারিবিয়ানদের। ২০০১ সালে হুট করেই এতদিন আড়ালে থাকা হুপার ফিরলেন ক্রিকেটে। সেই সাথে ২০০৩ বিশ্বকাপে পেলেন অধিনায়কের দায়িত্ব। তবে ২০০৩ বিশ্বকাপটা দুর্বিষহ এক টুর্নামেন্ট হয়ে থাকল ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। সেই বেদনাতেই বিশ্বকাপের পরপরই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার সেই সিদ্ধান্ত থেকে আর সরে আসেননি কখনই।