আফগানদের আগুনে ওপেনিং জুটি, আগ্রাসী বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ
২য় ওয়ানডে, চট্টগ্রাম (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
আফগানিস্তান-৩৩১/৯, ৫০ ওভার (গুরবাজ ১৪৫, ইব্রাহিম ১০০, নবী ২৫*, সাকিব ২/৫০, মোস্তাফিজ২/৬০, মিরাজ ২/৬০)
বাংলাদেশ- ১৮৯, ৪৩.২ ওভার (মুশফিক ৬৯, সাকিব ২৫, মিরাজ ২৫, ফারুকী ৩/২২, মুজিব ৩/৪০, রশিদ ২/২৮)
ফলাফল: আফগানিস্তান ১৪২ রানে জয়ী
মাঠের পারফরম্যান্স, মাঠের বাইরের অস্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের টালমাটাল অবস্থার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে তাদের ঘরের মাঠে এসেই নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল আফগানিস্তান। রহমানউল্লাহ গুরবাজের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, ধারাবাহিক ইব্রাহিম জাদরানের সেঞ্চুরি, রেকর্ড জুটিতে প্রথম ইনিংসেই যেন বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন আফগানরা। বল হাতে ফজলহক ফারুকী, মুজিব-উর-রহমান, রশিদ খানরা আরও একবার জ্বলে উঠে এরপর রীতিমত ছেলেখেলা করেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে তারা।
৩৩২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে বাংলাদেশকে গড়তে হত তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সেই লক্ষ্যে শুরুতেই বাংলাদেশের সমাধি সাজিয়ে ফেলেছিল আফগানরা। এক প্রান্তে রীতিমত ধুঁকতে থাকা নাঈম শেখকে বেঁধে ফেলে মেইডেন দিয়ে শুরু করেন ফারুকী। মুজিবের বলে এরপর এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তের পর রিভিউ নিয়ে লিটন বেঁচে গেলেও কিছুক্ষণ পরেই ফারুকীর বলে মিড উইকেটে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ১৩ রানে ফেরেন লিটন। মুজিবের দারুণ এক বল পড়তে না পেরে পরের ওভারেই স্টাম্প খুইয়ে ১ রানে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রীতিমত খাবি খেতে থাকা নাঈমের দুঃসহ ইনিংসের সমাপ্তি এরপর টানেন ফারুকী। নাঈমের ২১ বলে ৯ রানের সেই ইনিংসের পর পাওয়ারপ্লে শেষ হতে না হতেই নেই তিন উইকেট। ফারুকী-মুজিবের দুর্দান্ত ওপেনিং স্পেলে হাঁসফাঁস করতে থাকা বাংলাদেশ কোথায় একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে, না তো বল হাতে নিয়েই দারুণ এক গুগলিতে ৩৪ বলে ১৬ রানে থাকা তাওহিদ হৃদয়ের স্টাম্প উপড়ে ফেললেন রশিদ। পরের ওভারেই মোহাম্মদ নবীর পাতা এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ২৯ বলে ২৫ রানে থামেন সাকিব আল হাসান। পরের ওভারে আফিফ হোসেনকে গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ দিয়ে রশিদ যেন কার্যত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে ফেলেন।
মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ এরপর কেবল ফলাফলটা বিলম্বিত করতে পেরেছেন। জুটির কোনও পর্যায়েই রান রেট ঊর্ধ্বগামী হয়নি। ম্যাচে ফেরার কোনও আশাও তাই দেখেনি বাংলাদেশ। মুশফিক এক প্রান্ত আগলে ৪৫-তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নিলেও ৪৮ বলে ২৫ রান করা মিরাজকে থামিয়ে মুজিব ভাঙেন ৮৭ রানের জুটি। নিজের স্পেলের শেষ বলে হাসান মাহমুদকে ফিরিয়ে মুজিব আরও একবার বাংলাদেশের জন্য এক ভীতির নাম হয়েই থাকলেন। একা লড়তে থাকা মুশফিক আক্রমণে যেতে গিয়ে ফারুকীর শিকার হয়ে শেষ ব্যাটার হিসেবে ৮৫ বলে ৬৯ রান করে থামলে আফগানিস্তান পেয়ে যায় তাদের ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম জয়।
এর আগে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম দলীয় সংগ্রহ গড়ে জয়ের ভিতটা শক্তভাবেই গড়ে ফেলেছিল আফগানিস্তান। বল ভাল, গড়েছিলেন দুই ওপেনার। রেকর্ড বই তছনছ করে গুরবাজ-জাদরান বাংলাদেশের বোলারদের নাকের পানি, চোখের পানি এক করে ছেড়েছেন। এক প্রান্তে ইব্রাহিমের শান্ত, ধৈর্যশীলও ব্যাটিং; অন্য প্রান্তে গুরবাজের ছক কাটা আক্রমণে বাংলাদেশ বোলাররা যেন একেবারে দিশেহারা। নবম ওভারে ইব্রাহিম একবার আধা সুযোগ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন। এরপর এই দুজনকে টলানোই যায়নি। ৪৮ বলে দারুণ এক ছয় দিয় নিজের ফিফটি পান গুরবাজ। অন্য প্রান্তে ইব্রাহিম যখন ৪০-এর ঘরে তখন গুরবাজ সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। ২৮-তম ওভারে সাকিবের বল মিড উইকেটে ঠেলে দিয়েই বলপ্রতি সেঞ্চুরি পেয়ে যান গুরবাজ। পরের ওভারে ফিফটি পেয়ে যান ইব্রাহিমও। দুজনে মিলে আফগানিস্তানের ওপেনিং ইতিহাসে প্রথমবারের মত ছুঁয়ে ফেলেন ২০০ রান। ৩৭-তম ওভারে গিয়ে অবশেষে সাকিবের সোজা এক বল মিস করে ১২৫ বলে ১৪৫ রানে থামেন গুরবাজ। তবে তার আগে দুজনে মিলে গড়েছেন আফগানিস্তানের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড (২৫৫)। পরের দুই ওভারে রহমত শাহ ও শহীদী ফিরলে হুট করেই গতি হারায় আফগানদের ইনিংস। মাঝে ২৬ বল ধরে কোনও বাউন্ডারিও পায়নি তারা। ডেথে দারুণ করলেও ইব্রাহিম ঠিকই তুলে নেন তার চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি। যদিও এক বল পরেই মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার হয়ে থামতে হয় তাকে। সাকিব, হাসান, মোস্তাফিজদের বিচক্ষণ ডেথ বোলিংয়ে আফগানদের ইনিংস মুখ থুবড়ে পড়লে শেষদিকে ১৫ বলে ২৫* রান করে নবী এনে দিয়েছিলেন তাদের সেই সুবিশাল সংগ্রহ। দিন শেষে অবশ্য সেই সংগ্রহের আশেপাশেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ।