বোলারদের দাপটের পর লিটনের রানে ফেরায় শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের স্বস্তির জয়
৩য় ওয়ানডে, চট্টগ্রাম (টস-আফগানিস্তান/ব্যাটিং)
আফগানিস্তান-১২৬, ৪৫.১ ওভার (ওমরযাই ৫৬, শহীদি ২২, মুজিব ১১, শরিফুল ৪/২১, তাসকিন ২/২৩, তাইজুল ২/৩৩)
বাংলাদেশ- ১২৯/৩, ২৩.৩ ওভার (লিটন ৫৩*, সাকিব ৩৯, হৃদয় ২২*, ফারুকী ২/২৬, নবী ১/৭)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
শেষ ম্যাচে স্বস্তির জয় পেল বাংলাদেশ, সেটাও পেল দাপটের সাথেই। সিরিজের ফল আগেই নির্ধারিত হয়ে যাওয়ায় মাঠ ও মাঠের বাইরের সব ঝক্কি পোহানোর পর এই প্রত্যাবর্তনটা যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড্ড জরুরী ছিল। জরুরী সেই জয়টা দলে ফেরা তিন বোলারের সৌজন্যেই এলো বলা চলে। শরিফুল ইসলাম পেলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগারের দেখা, সেই সাথে একাদশে ফেরা তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম নিজেদের মেলে ধরায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড গড়েছে আফগানিস্তান। ছোট সেই লক্ষ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাসের অনবদ্য ফিফটিতে সহজেই উতরে গিয়েছে স্বাগতিকরা।
১২৭ রানের লক্ষ্যে শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি বাংলাদেশের। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ফজলহক ফারুকীর শিকার হয়ে ফিরলেন নাঈম শেখ। এই সিরিজে তাকে নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন কোচ। তবে এবারের ডিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক দুই ম্যাচেই হতাশ করলেন; আজ তো ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারলেন না। নাঈম ফেরার পর আবারও ফারুকীর আঘাতে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ১৫ বলে ১১ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত। বিপদ সামলে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এরপর পথটা সহজ করে তোলেন অধিনায়ক লিটন দাস। জয়ের কাছাকাছি এসে অবশ্য নবীর সাদামাটা এক বল টেনে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বলপ্রতি ৩৯ রান করে। তবে নিজের মনোযোগ অক্ষুণ্ণ রেখে ঠিকই ১০ম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন লিটন। অন্য প্রান্তে ১৯ বলে তাওহিদ হৃদয় ২২* রান করলে লিটনের ৬০ বলে ৫৩* রানে সহজেই পথ পাড়ি দিয়ে শেষ ম্যাচটায় হাঁফ ছাড়ার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
এর আগে সিরিজটা হয়ত আগেই খুইয়ে বসেছে বাংলাদেশ। তবে একাদশে ফেরা শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম ও সেই সাথে তাসকিন আহমেদ যেন মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপের তেজটা এখনও কমেনি। এই তিন জনের দাপটে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের সর্বনিম্ন ওয়ানডে সংগ্রহের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড গড়তে হল আফগানদের, সেটাও বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে সংগ্রহের রেকর্ড গড়ার পরের ম্যাচেই।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বসে থাকার পর আজ ফিরেই যেন বাইশ গজে আগুন ঝরালেন তাসকিন; সেই সাথে শরিফুলও যেন আসা যাওয়ার মাঝে থাকার ক্ষোভটা ঝাড়লেন ওই বাইশ গজেই। ব্যাটিং নেওয়ার পরেও শুরু থেকেই খাবি খেতে থাকা আফগানদের ওপর রাজত্ব বিস্তার করে তৃতীয় ওভারে শরিফুল হানেন জোড়া আঘাত। ইব্রাহিম জাদরানের পর রহমত শাহকেও শরিফুল ফেরালেন উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করেই। আফগানদের ভিত অবশ্য শুরুতেই একেবারে নড়ে গেল ষষ্ঠ ওভারেই তাদের গত ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান রহমানউল্লাহ গুরবাজ ফিরলে; হন্তারক এবার তাসকিন। সেই মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়েই ২২ বলে ৬ রানের দুঃসহ এক ইনিংস শেষে থামতে হয় গুরবাজকে। তবে এদিন যেন নিজেকে প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর শরিফুল আফগানদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখার পণ করেই নেমেছেন। হাঁফ ছাড়ার সুযোগ না দিয়ে নবম ওভারেই মোহাম্মদ নবীকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েও প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই চার উইকেট খুইয়ে বসার ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি আফগানিস্তান।
সাগরিকায় পেসারদের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই আফগানদের নাভিশ্বাস ছুটিয়ে ছাড়েন এরপর স্পিনাররা। সাকিব আল হাসানের স্পেলের জন্য তো কোনও জবাবই যেন ছিল না আজ আফগানদের কাছে। সাকিবের সাথে আঁটসাঁট লাইনে বলে করে যাওয়া তাইজুল ইসলামের সৌজন্যে তাই আফগানরা আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়নি। সাকিবের পাতা এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে নাজিবউল্লাহ জাদরান ফেরার পর ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করতে থাকা হাশমতউল্লাহ শহীদির স্টাম উপড়ে তার ৫৪ বলে ২২ রানের ইনিংসের ইতি টানেন তাইজুল। শরিফুলের চতুর্থ শিকার হয়ে এরপর আব্দুল রহমান ফিরলে লোয়ার অর্ডার নিয়ে শেষ একটা চেষ্টা করেছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরযাই।
অন্য প্রান্তে আসাযাওয়ার মাঝে অনড় থেকে দলকে সম্মানজনক অবস্থানে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন এই বোলিং অলরাউন্ডার। সাকিবের ওভারের কোটা পূর্ণ করে মাত্র ১৩ রান দেওয়া অসামান্য এক স্পেলের বিপরীতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়ে ফিফটিও পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে তাসকিন আহমেদের শিকার হয়ে শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন থামলেন, তখন তার ৭১ বলে ৫৬ রানের ইনিংসটাও আফগানদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড গড়া থেকে রেহাই দিতে পারেনি। মামুলি সেই সংগ্রহ দিন শেষে সহজেই পার করে গিয়েছে বাংলাদেশ। ১৫৯ বল হাতে রেখে অবশিষ্ট বলের হিসেবে আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ তাই পেয়েছে ওয়ানডেতে তাদের সবচেয়ে বড় জয়।