• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    সিজন প্রিভিউ: মালিকপক্ষের অসাড়তায় আবার ধুঁকবে লিভারপুল?

    সিজন প্রিভিউ: মালিকপক্ষের অসাড়তায় আবার ধুঁকবে লিভারপুল?    

    যারা এলেন: অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টার, ডমিনিক শবজলাই।  

    যারা গেলেন: রবার্তো ফিরমিনো, জর্ডান হেন্ডারসন, ফাবিনহো, জেমস মিলনার, নাবি কেইটা, অ্যালেক্স অক্সালেড চ্যাম্বারলিন, ফাবিও কারভালিও। 

    উপরের তালিকাটি দেখেই বুঝতে পারছেন, আসা-যাওয়ার মধ্যে কোনো ভারসাম্য নেই লিভারপুলের। মূল দলের ৮ জন খেলোয়াড় ক্লাব ছেড়েছে এই মৌসুমে। ক্লাবে যোগ দিয়েছেন মাত্র দুজন। গত মৌসুমের দুর্যোগের পর এবার দল ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ। কিন্তু বর্তমানে লিগের সবচেয়ে ছোট স্কোয়াড (২২ জন) নিয়ে মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে তার দল। মূল একাদশে খেলার মতো নেই কোনো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। 

    রাইভাল ক্লাবদের তুলনায় বরাবরই কম খরচ করে এসেছে লিভারপুলের মালিকপক্ষ, এফএসজি (ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ)। এরিক টেন হাগ  ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর গত এক বছরে ম্যান ইউনাইটেড নেট খরচ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ মিলিয়ন ইউরোয়, যা ক্লপের আট মৌসুমের নেট খরচের (৩৫৬ মিলিয়ন) চেয়েও বেশি। ম্যান সিটি, আর্সেনাল, নিউক্যাসলের মতো সব বড় ক্লাবই লিভারপুলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি খরচ করে দল সাজিয়েছে। লিভারপুলের গত মৌসুমের দুর্যোগের সবচেয়ে বড় কারণ ছিল যথার্থ বিনিয়োগের অভাব। দল ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েও এবার এফএসজির স্বভাবসুলভ অসাড়তা লিভারপুলকে আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

    যা জানা আছে 

    এ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নেই লিভারপুল। তাদের জায়গা হয়েছে ইউরোপায়। যার মানে, বৃহস্পতিবার রাতে মাঠে নামবে তারা। লিগ-প্রত্যাশী যেকোনো দলের জন্যই এই ফিক্সচার একটি বড় বাঁধা। ছোট স্কোয়াড নিয়ে এই দুই প্রতিযোগিতা ও দুই কাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিন হয়ে যাবে অলরেডদের জন্য। তবে এখনো দলবদল বাজারে সরব আছে লিভারপুল। সাউদাম্পটন মিডফিল্ডার রোমিও লাভিয়া ও আরও একজন মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। 

    প্রথম কয়েক ম্যাচে কোনো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছাড়া মাঠে নামতে হবে লিভারপুলের। তবে ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হওয়ার আগে আরও এক-দুজন খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে শিরোপা লড়াইয়েও যোগ দিতে পারে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তার ৩-২-২-৩’এর নতুন ফরমেশন গত মৌসুমের শেষাংশের মতো এবারের প্রিসিজনেও ভালো ফল এনে দিয়েছে। দুই নতুন সাইনিং ম্যাক আলিস্টার ও শবজলাই, দুজনই ইতোমধ্যে দলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন অনেকটা। নতুন ফরমেশনে মিডফিল্ডের মূল কারিগর হয়ে উঠতে পারেন ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ড, লিভারপুলের ফ্রন্টলাইনও হুঙ্কার তুলতে পারে ক্লপের ডর্টমুন্ডের মতো। 

    যা নিয়ে সংশয় 

    দলবদল। এখনো একটি পরিপূর্ণ একাদশই নেই লিভারপুলের। ফাবিনহো, হেন্ডারসনের বিদায়ের পর এখন দলে নেই কোনো সিনিয়র ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। প্রিসিজনে ট্রেন্ট, ম্যাক আলিস্টার, কার্টিস জোন্সের মতো বেশ কয়েকজনকে নাম্বার সিক্স হিসেবে খেলিয়েছেন ক্লপ। কিন্তু খুব একটা কাজে দেয়নি। ট্রান্সফার উইন্ডো শেষ হওয়ার আগে অন্তত একজন নাম্বার সিক্স দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে প্রতিজ্ঞ লিভারপুল। সেটি করতে না পারলে আবারও একটি দুর্যোগময় মৌসুমের দিকে হাঁটবে তারা। নতুন নাম্বার সিক্স নিয়েও থাকছে ঝুঁকি। সে দলে মানিয়ে নিতে না পারলে, কিংবা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে না পারলে, কিংবা বড় ইনজুরির শিকার হলেও পণ্ড হয়ে যেতে পারে অলরেডদের মৌসুম। এবং ভুলে গেলে চলবে না, এই পজিশনের জন্য লিভারপুলের মূল টার্গেট লাভিয়া দ্বিতীয় ডিভিশনে থাকা একজন ১৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার।  

    লিভারপুলের রক্ষণের গভীরতা নিয়েও রয়েছে সংশয়। ভ্যান ডাইক ও কোনাতের যেকোনো ইনজুরি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে ক্লপের জন্য।    

    প্রাক মৌসুমে 

    ক্লপের ৩-২-২-৩ ফরমেশনে প্রিসিজনে উদ্যমী ফুটবল খেলেছে লিভারপুল। পাঁচ ম্যাচে সালাহ-নুনেজরা গোল করেছেন মোট ১৮টি। কিন্তু সব ম্যাচেই ভ্যান ডাইক-কোনাতে জুটি বদলি হওয়ার পর রক্ষণে ভুগেছে দল। কোনো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার না থাকাটাও সাহায্য করেনি। জার্মান দ্বিতীয় ডিভিশনের তিন দলের বিপক্ষে খেলা তিন প্রীতি ম্যাচেই মোট সাত গোল হজম করেছে তারা।  

    শেষ পাঁচ মৌসুমে লিভারপুল    

    ২০২২-২৪: ৫ম 

    ২০২১-২২: ২য় 

    ২০২০-২১: ৩য়  

    ২০১৯-২০: ১ম   

    ২০১৮-১৯: ২য় 

    প্যাভিলিয়নের প্রেডিকশন: দ্বিতীয়। 

    গত মৌসুমের হতাশার পর এবার ঘুরে দাঁড়ানোর একটি উদ্যম দেখা যাবে ইয়ুর্গেন ক্লপের দলে। দলবদল নিয়ে থাকা ‘যদি/কিন্তু’-গুলো পূরণ করতে পারলে আবার ম্যান সিটির সঙ্গে লড়াইয়ে নামবে তারা। কিন্তু পূর্বে দুবার এক পয়েন্টের জন্য লিগ হারানো লিভারপুল এবার দলবদল বাজারে হওয়া দেরির জন্য মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হারিয়ে বসতে পারে শিরোপা।