নেইমার, বেনজেমা, মাহরেজ, কান্তে: দলবদল শেষে যেভাবে দল সাজিয়েছে সৌদি ক্লাবগুলো
এক গ্রীষ্মেই ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। নেইমার, করিম বেনজেমা, সাদিও মানে, রবার্তো ফিরমিনো মতো ইউরোপীয় লিগগুলোর অনেক বড় তারকাই এবার যোগ দিয়েছেন সৌদি প্রো লিগে। এই দলবদলে এক বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি খরচ করেছে সৌদি ক্লাবগুলো।
মোট খরচের ৮৭ শতাংশই করেছে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত চারটি ক্লাব- আল হিলাল, আল নাসর, আল ইত্তিহাদ, আল আহলি। চলুন দেখে নেওয়া যাক ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষে কীভাবে দল গুছিয়েছে ক্লাবগুলো।
আল হিলাল
সৌদি আরবের ও তর্কসাপেক্ষে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাব আল হিলাল। রিয়াদের ক্লাবটি সৌদি লিগ জিতেছে মোট ১৮ বার, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে রেকর্ড চার বার। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে রানার আপ হলেও সেই দলের সাত জন বিদেশী খেলোয়াড়কেই ছেড়ে দিয়েছে ক্লাবটি। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ক্লাব সর্বোচ্চ আট জন বিদেশী খেলোয়াড় রাখতে পারবে।
বিদায় নেওয়া সাত বিদেশীর জায়গায় এসেছেন ইউরোপে খেলা সাত তারকা ফুটবলার। গ্রীষ্মের শুরুতে লিওনেল মেসি ও বার্নার্দো সিলভাকে দলে ভেড়ানোর অনেক চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হয় তারা। তবে শেষ পর্যন্ত একজন সুপারস্টারের দেখা পেয়েছে ক্লাবটি। নেইমার। ব্রাজিল অধিনায়কের আগে অবশ্য ক্লাবে যোগ দিয়েছেন ফ্ল্যামেঙ্গো ম্যানেজার হোর্হে হেসুস।
সেভিয়ার হয়ে ইউরোপা জেতা গোলরক্ষক ইয়াসিন বনো যোগ দিচ্ছেন গোলে। রক্ষণ সামলাবেন সাবেক নাপোলি ও চেলসি ডিফেন্ডার কালিদু কুলিবালি। মধ্যমাঠে আনা হয়েছে রুবেন নেভেস ও মিলিয়োভিচ স্যাভিচকে। আর আক্রমণে নেইমারকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য এসেছেন আরেক ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ম্যালকম ও ফুলহামের সেন্টার-ফরওয়ার্ড আলেক্সান্দার মিট্রোভিচ।
এই উইন্ডোতে আল হিলালের নেট খরচ ছিল ৩০২ মিলিয়ন পাউন্ড, যা পুরো বিশ্বে সর্বোচ্চ।
আল নাসর
রাজধানীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্লাব, আল নাসর জানুয়ারিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে দলে ভেড়ানোয় বাকি ক্লাবগুলোর চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিল। গ্রীষ্মে দলে এসেছেন সাবেক লিভারপুল ও বায়ার্ন মিউনিখ তারকা সাদিও মানে। মধ্যমাঠে এসেছেন ইন্টারের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলা মার্সেলো ব্রজোভিচ, পোর্তোর ওটাভিও ও ফ্রেঞ্চ দল লাঁসের সেকো ফোফানা। আর রক্ষণে এসেছে ম্যান সিটি তারকা আয়মেরিক লাপোর্ত ও ম্যান ইউনাইটেড ফুলব্যাক অ্যালেক্স টেলেস।
আল ইত্তিহাদ
জেদ্দার দল ইত্তিহাদ সৌদি আরবের সবচেয়ে পুরনো ক্লাব। বর্তমানে লিগে সর্বোচ্চ দর্শক আকর্ষণ করা দলও এটি। গেল মৌসুমে প্রতি ম্যাচে গড়ে ৪০ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল ইত্তিহাদের মাঠে।
ব্যালন ডি’অর জয়ী করিম বেনজেমাকে দলে ভিড়িয়ে গ্রীষ্ম শুরু করেছিল ক্লাবটি। এরপর তারা মিডফিল্ড সামাল দিতে এনেছে ফাবিনহো ও এনগোলো কান্তেকে। ক্লাব রেকর্ড ফি’তে (৩০ মিলিয়ন ইউরো) সেল্টিক ফরওয়ার্ড জটাকেও দলে ভিড়িয়েছিল তারা। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে উইন্ডো শেষ হওয়ার আগেই এই ফরওয়ার্ডের সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ ধরে ক্লাবের। শেষ পর্যন্ত ক্লাবে থেকে গেলেও লিগের স্কোয়াডে তাকে রেজিস্ট্রার করেনি ক্লাব।
উইন্ডোর শেষদিকে লিভারপুল তারকা মোহামেদ সালাহকে দলে ভেড়ানোর জন্যও অনেক চেষ্টা চালায় তারা। কিন্তু লিভারপুল সোজা না বলে দেওয়ায় সেই চেষ্টা বেশিদূর এগোয়নি।
আল আহলি
ইত্তিহাদের নগর-প্রতিদ্বন্দ্বী আল আহলি সাত বছর আগে একবার লিগ জিতলেও ২০২১-২২ মৌসুমে হুট করে দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে যায়। তবে এক মৌসুমের মধ্যেই তারা আবার ফিরে এসেছে, এবং স্বনামধন্য ক্লাব হওয়ায় ‘শীর্ষ চার ক্লাব’-এর অংশ হিসেবে পেয়েছে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ।
রেলিগেটেড হওয়ায় এক বছরে অনেক তারকা খেলোয়াড় হারিয়েছে আল আহলি। যে কারণে এই দলবদলে ঠিক সুপারস্টারদের খোঁজে নামেনি তারা। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে বেশকিছু বুদ্ধিদীপ্ত দলবদল করেছে তারা। আক্রমণভাগে এনেছে লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনো, ম্যান সিটির রিয়াদ মাহরেজ ও নিউক্যাসলের অ্যালান সেইন ম্যাক্সিমাঁ। এই ফ্রন্ট নিঃসন্দেহে যেকোনো প্রিমিয়ার লিগ ক্লাবের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে।
মিডফিল্ডে প্রথমে এসেছেন বার্সার ফ্র্যাঙ্ক কেসি। এরপর এক মাস মার্কো ভেরাত্তিকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করলেও পিএসজি রাজি না হওয়ায় তারা হাত বাড়ায় লা লিগায়। গত মৌসুমে স্প্যানিশ লিগে নজরকাড়া ২১ বছর বয়সী সেল্টা ভিগো মিডফিল্ডার গ্যাব্রিয়েল ভেইগাকে দলে ভেড়ায় তারা। গত মৌসুমে মিডফিল্ডে থেকে উঠে লিগে মোট ১১টি গোল করেছিলেন তিনি।
রক্ষণ মজবুত করতে ডিফেন্ডিংয়ের জন্য প্রখ্যাত লিগ সিরি আয় হাত বাড়ায় তারা। রোমা থেকে রজার ইবানেজ ও আটলান্টার মেরিল ডেমিরেলকে ধরে আনে তারা। এই সেন্টার-ব্যাকের পিছনে থাকবেন সাবেক চেলসি গোলরক্ষক এডওয়ার্ড মেন্ডি।
বাকি ক্লাবগুলোয় উল্লেখযোগ্য দলবদল
- আল ইত্তিফাক ম্যানেজার হিসেবে এনেছে সাবেক রেঞ্জার্স ও অ্যাস্টন ভিলা কোচ স্টিভেন জেরার্ডকে। এরপর দলে যোগ দিয়েছেন তার সাবেক সতীর্থ জর্ডান হেন্ডারসন।
- আল শাবাব পুরো গ্রীষ্ম ইডেন হ্যাজার্ডকে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। শেষে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ইয়ানিক কারাসকো দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছে ক্লাবটি।