চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরু আজ: কে ফেবারিট এবং কোন গ্রুপ থেকে কারা উঠতে পারে?
আজ থেকে শুরু চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব। মেসি-নেইমার-রনালদো ছাড়া দুই যুগেরও বেশি সময় পর আবার হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। এবার কার সম্ভাবনা কেমন? কোন গ্রুপ থেকে কারা উঠতে পারে?
গ্রুপ এ
এই গ্রুপের বক্স-অফিস ফিক্সচার হতে যাচ্ছে বায়ার্ন মিউনিখ বনাম ম্যান ইউনাইটেড। ১৯৯৯ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলা এই পরাশক্তি দীর্ঘ ১০ বছর পর আবার মুখোমুখি হচ্ছে একে-অন্যের সঙ্গে। তারকাদের বেলায় শিরোনাম হতে যাচ্ছেন হ্যারি কেইন। বায়ার্নের নতুন নাম্বার নাইন আবার ফেরত আসছেন ইংল্যান্ডে, ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে। যেই ক্লাবের সঙ্গে এই গ্রীষ্মেও একাধিক গুঞ্জন শোনা গেছে তার। ইংল্যান্ড অধিনায়ককে দলে ভেড়াতে না পারলেও ইউনাইটেড নাম্বার নাইন হিসেবে এনেছে ২০ বছর বয়সী ডেনিস স্ট্রাইকার রাসমাস হইলান্ডকে। যিনি মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তার সাবেক ক্লাব কোপেনহেগেনের। ড্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের পাশাপাশি এই গ্রুপে রয়েছেন তুর্কি চ্যাম্পিয়ন গালাতাসারয়। মাউরো ইকার্দি, ড্রিস মার্টিনস ও উইলফ্রেড জাহার ফ্রন্ট থ্রিকে এই গ্রুপে কোনো অঘটন করার সম্ভাবনা এই ক্লাবেরই সবচেয়ে বেশি।
গ্রুপ বি
ছয় বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফেরত এসে মোটামুটি সহজ একটি গ্রুপই পেয়েছে আর্সেনাল। বি গ্রুপে গানারদের সঙ্গে থাকছে সেভিয়া, পিএসভি ও লাঁস। গত মৌসুমে রুটিন-মাফিক ইউরোপা জেতা সেভিয়া ঘরোয়া লিগে শেষ করেছে ১২তম স্থানে থেকে। পিএসভি ও লাঁসও তাদের নিজ নিজ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। গত বছর ইউরোপার গ্রুপ পর্বে আর্সেনালকে ২-০ গোলে হারিয়ে বসা পিএসভি এর মধ্যে হারিয়েছে কোডি গাকপো, ননি মাদুয়েকে ও ইব্রাহিম সাঙ্গারের মতো প্রতিভাদের। ফ্রেঞ্চ লিগে দ্বিতীয় হওয়া লাঁস এই গ্রীষ্মে হারিয়েছে তাদের মূল স্ট্রাইকার লইস অপেন্দাকে। সব ঠিক থাকলে এই গ্রুপে থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েই নক-আউট পর্বে উঠার কথা আর্সেনালের।
গ্রুপ সি
১৫তম শিরোপার খুঁজে নামা রিয়াল মাদ্রিদ এই গ্রুপে মুখোমুখি হবে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন নাপোলির। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দল প্রায় অক্ষত রাখা নাপোলি গ্রুপের শীর্ষস্থানের জন্য ভালোই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে কার্লো আনচেলত্তির দলকে। গ্রুপের বাকি দুই দল অপেক্ষাকৃত খর্বশক্তির। পর্তুগিজ দল ব্রাগা গত মৌসুমে ভালো ব্যবধানে তৃতীয় হয়েছে লিগে। আর চার বছর আগে বুন্দেসলিগায় ওঠা ইউনিয়ন বার্লিনের জন্য এটিই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মৌসুম।
গ্রুপ ডি
তর্কসাপেক্ষে এবারের সবচেয়ে সমশক্তির গ্রুপ। এই গ্রুপের চার দলেরই সামর্থ্য ও সম্ভাবনা আছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। ম্যান সিটির ফাইনাল কাছে হেরে গতবার রানার আপ হওয়া ইন্টার এর মাঝে হারিয়েছে গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা, স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু ও ইডেন জেকোকে। গত আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে বেনিফিকার মুখোমুখি হয়েছিল ইনজাঘির ইন্টার। সেই ম্যাচে উতরে গেলেও এবার পাশার দান উল্টে দিতে পারে বেনফিকা। গত কয়েক মৌসুম ধরেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুর্দান্ত খেলে আসা এই পর্তুগিজ ক্লাব গত মৌসুমে লিগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় তারাই এই গ্রুপের সবচেয়ে বড় ফেভারিট। তবে গ্রুপ পর্বে সালজবার্গের প্রতিদ্বন্দ্বিতার নজিরও নতুন না। বিশেষ করে ঘরের মাঠে তারা যথেষ্ট ভয়ঙ্কর দল। সোসিয়েদাদেরও গ্রুপের যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য রয়েছে।
গ্রুপ ই
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ নিশ্চিতভাবেই এই গ্রুপের ফেভারিট, যদিও পূর্বের কয়েক মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ডিয়েগো সিমিওনের দল। এ সপ্তাহের ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে পরাজয় বাদ দিলে বেশ ছন্দেই আছে অ্যাটলেটিকো। অর্থনৈতিক দুর্বলতার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বলার মতো কোনো সাইনিং করতে না পারলেও এ বছরে লিগে মাত্র চারটি ম্যাচ হেরেছে তারা। গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ লাৎসিও অপরদিকে এই মৌসুমেই হেরেছে তিন ম্যাচ (চার ম্যাচের মধ্যে)। গ্রীষ্মে তাদের মূল তারকা মিলিঙ্কোভিচ স্যাভিচকে হারিয়েছে লাৎসিও। ফেইনুর্দ হারিয়েছে তাদের প্লেমেকার অরকুন ককচুকে। এই গ্রুপে অঘটন ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে ব্রেন্ডন রজার্সের সেল্টিকের। ইউরোপিয়ান ফুটবলের আবহ তৈরিতে ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত সেল্টিক পার্ক।
গ্রুপ এফ
গ্রুপ পর্বে সব নিরপেক্ষ দর্শকের নজর থাকবে এই গ্রুপের দিকেই। একসঙ্গে চার হেভিওয়েট ক্লাব মুখোমুখি হচ্ছে এখানে। বল মাঠে গড়ানোর আগ পর্যন্ত ফেভারিট থাকছে কিলিয়ান এমবাপের পিএসজি। কিন্তু সময়ের সবচেয়ে বড় তারকাকে ক্লাবে রাখতে সক্ষম হলেও মৌসুমটা একদমই ভালোভাবে শুরু করেনি লুইস এনরিকের দল। পাঁচ ম্যাচে দুই জয় এখন এখন লিগের পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে তারা। গ্রীষ্মের দলের মূল তারকা জুড বেলিংহামকে হারানো বরুশিয়া ডর্টমুন্ডও খুব একটা ছন্দে নেই। তবে নিজেদের দিনে এখনো যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রয়েছে এডিন টার্জিকের দলের। সাথে সিগনা ইদুনা পার্কের আবহ তো থাকছেই।
গত আসরের সেমিফাইনালিস্ট মিলান তর্কসাপেক্ষে গ্রুপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। গ্রীষ্মে ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিক, রুবেন লফটাস-চিক, ইউনুস মুসা ও সামুয়েল চুকুয়েজাকে দলে ভেড়ানো মিলান লিগ শুরু করেছিল ফর্মে থেকেই। কিন্তু এ সপ্তাহে ডার্বিতে ইটার মিলানের কাছে ৫-১ গোলের বড় পরাজয় তাদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানবে। গ্রুপের চতুর্থ দল হিসেবে আছে নিউক্যাসল। ২১ বছর পর আবার গ্রুপ পর্বে জায়গা পাওয়া ম্যাগপাইদের উপর কোনো বাড়তি প্রত্যাশা থাকছে না কারো। যার মানে, এই গ্রুপ থেকে হারানোর কিছু নেই তাদের। ইসাক, গিমারেস, টোনালির মতো প্রতিভাবান সব খেলোয়াড়কে নিয়ে দল সাজানো এডি হাউয়ির সামনে থাকছে তাই কোনো অঘটন ঘটানোর সুযোগ।
গ্রুপ জি
চ্যাম্পিয়ন ম্যান সিটি প্রতিবারের মতো এবারও পেয়েছে সহজ এক গ্রুপ। সুইস দল ইয়ং বয়েজ বা সার্বিয়ান দল রেড স্টার বেলগ্রেডের বিপক্ষে খর্বশক্তির দল নিয়েও নামতে পারে সিটি। গ্রুপের দ্বিতীয় শক্তিশালী দল লাইপজিগকেও তারা গত মৌসুমে হারিয়েছে ৭-০ গোলে।
গত মৌসুমের চেয়ে দুর্বল দল নিয়ে এবার ইতিহাদে আসবে লাইপজিগ। গ্রীষ্মে দলের শীর্ষ দুই খেলোয়াড়- জস্কো ভার্দিওল ও ক্রিশ্চোফার উঙ্কুঙ্কুকে হারিয়েছে তারা।
গ্রুপ এইচ
টানা দুই বছর গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার পর এবার তুলনামূলক সহজ একটি গ্রুপ পেয়েছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা। এদিকে লিগে অল্পের জন্য দ্বিতীয় হওয়া পোর্তোর জন্যও সুবিধাজনক গ্রুপ হয়েছে এটি। বেলজিয়ামের রয়্যাল আন্তোয়ার্প ও ইউক্রেনীয় দল শাখতারকে হারিয়ে গ্রুপের শীর্ষস্থানের দিকেও হয়তো নজর দিবে তারা। ৬৬ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা পেয়েছে আন্তোয়ার্প। শাখতারের জন্যও এই পর্যায়ে খেলাটাই একটি বড় পাওয়া।