• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    ডি লিডের অলরাউন্ড লড়াই ভেস্তে পূর্ণাঙ্গ বোলিং পারফরম্যান্সে পাকিস্তানের জয়

    ডি লিডের অলরাউন্ড লড়াই ভেস্তে পূর্ণাঙ্গ বোলিং পারফরম্যান্সে পাকিস্তানের জয়    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, পাকিস্তান-নেদারল্যান্ডস(টস-নেদারল্যান্ডস/বোলিং)
    পাকিস্তান - ২৮৬, ৪৯ ওভার (শাকিল ৬৮, রিজওয়ান ৬৮, নাওয়াজ ৩৯, ডি লিড ৪/৬৩)
    নেদারল্যান্ডস - (বাস ডি লিড ৬৭, বিক্রমজিত ৫২, ভ্যান বিক ২৮*, রউফ ৩/৪৩, হাসান ২/৩৩, ইফতিখার ১/১৬)
    ফলাফল: পাকিস্তান ৮১ রানে জয়ী


     


    ম্যাচের শুরুতেই পাকিস্তান ভড়কে গেলেও ডাচদের সামলে জয় দিয়েই বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করল পাকিস্তান। সাউদ শাকিল, মোহাম্মদ রিজওয়ানের জোড়া ফিফটির সাথে লোয়ার মিডল ও লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় লড়াইয়ের রসদ পাওয়ার পর বল হাতে আলো ছড়ানো বাস ডি লিড পাকিস্তানীদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ব্যাট হাতেও। হাসান আলী, হারিস রউফদের বিচক্ষণ বোলিংয়ে ডাচদের স্বপ্ন অবশ্য বেশিদূর এগোয়নি।

    ২৮৭ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই হাসানের কাছে ম্যাক্স ও’ডাউডকে হারিয়েছিল ডাচরা। তবে উইকেটে এসে স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকা কলিন অ্যাকারম্যানকে সঙ্গী করে শাহীন শাহ আফ্রিদিকে একেবারে নিষ্ক্রিয় করে বিক্রমজিত সিং যেন শুরুতেই বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন। তবে আক্রমণে এরপর ইফতিখার আহমেদকে আনতেই আস্থার প্রতিদান দিয়ে ১৭ রানে থাকা অ্যাকারম্যানের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তিনি। সেখান থেকে ডি লিডকে নিয়ে অবশ্য পাকিস্তান শিবিরে চিন্তার রেখা আরও মোটা করে দেন বিক্রমজিত। উইকেটে এসেই ডি লিড আপন ছন্দে খেলতে থাকলে বিক্রমজিত ফিফটি পেয়ে যান ৬৫ বলে। গিয়ার পরিবর্তন করতে গিয়ে অবশ্য শাদাবের সেই ওভারেই ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে এই ওপেনার থামেন ৬৭ বলে ৫২ রান শেষে। অন্য প্রান্তে আগুন ঝরাতে থাকা হারিস রউফ ২৭-তম ওভারে ডাচদের আত্মবিশ্বাসের ভিতটাই নড়িয়ে দেন। বাউন্সারের ফাঁদে ফেলে তেজা নিদামানুরুকে ফেরানোর এক বল পরেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে। ঘটনাবহুল সেই ওভারে পরের বলেই উইকেটর সুযোগ তৈরি করলেও স্লিপে ইফতিখার ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ায় আশাহত হতে হয় রউফকে।

    পরের ওভারেই লড়ে গিয়ে বলপ্রতি ফিফটি পেয়ে যান ডি লিড। সেই ডি লিডকে থামাতেই শাহীনকে আক্রমণে আনা হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আস্থার প্রতিদান দিয়ে জীবন পাওয়া সাকিব জুলফিকারের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তিনি। পরের ওভারেই ৬৮ বলে ৬৭ রানে থাকা ডি লিডের স্টাম্প উপড়ে নাওয়াজ যেন ডাচদের আশাও ধূলিসাৎ করে দেন। রান আউটে ভ্যান ডার মারওয়ার বিদায়, হাসানের শিকার হয়ে দত্তের বিদায়ের পর শেষদিকে ভ্যান বিকের লড়াই শুধুই পাকিস্তানের জয়টাই প্রলম্বিত করেছে। ২৮* রানে ভ্যান বিক লড়লেও রউফ তার তৃতীয় শিকারের মাধ্যমে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন।  

    পাকিস্তানের শঙ্কার শুরুটা ইনিংসের একেবারে অগ্রভাগেই। দশ ওভারের মধ্যেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন পাকিস্তানের প্রথম তিন ব্যাটার; যার মধ্যে ছিলেন উইকেটে ১৮ বলে ৫ রান করে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। দশম ওভারে ইমাম-উল-হককে ফেরানোর পরের ওভারেই সাউদ শাকিলকে ফেরানোর সুযোগ তৈরি করেছিলেন আরিয়ান দত্ত। তবে স্লিপে বিক্রমজিত সিং ক্যাচ ফেললে সেখান থেকেই শুরু হয় পাকিস্তানের ইনিংস মেরামত। ১৪-তম ওভারে তো ঘটে আরেক উদ্ভট কাণ্ড; আম্পায়ারদের ভুলে ওভার শেষ হয় পাঁচ বলেই। এই বছর আরও একবার হয়েছে এরকম ভুল; সেবার ওভারে বল হয়েছিল সাতটি, সেবারও এক দলের নাম পাকিস্তান। ঘটনাটা পাকিস্তান ও ভারতের মেয়েদের খেলার।

    সেই ভুলের পর মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সঙ্গী করে শাকিল দলকে এগিয়ে নিয়ে যান আপন গতিতে। রিজওয়ান এক প্রান্ত আগলে রাখলে আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নেন শাকিল; পাকিস্তান দলীয় শতরান পূর্ণ করে ১৯.৩ ওভারেই। সেখান থেকেই মাত্র ৩২ বলে শাকিল ফিফটি পূর্ণ করার পর ৫৮ বলে নিজের ১৩-তম ফিফটি পেয়ে যান রিজওয়ান। তবে ছুটতে থাকা শাকিল হুট করে মনোযোগ হারিয়ে দত্তের নিরীহ এক বলে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ৫২ বলে ৬৮ রানে।

    সেখান থেকে আরও এক দফা খেই হারিয়ে বসে পাকিস্তান। ডি লিডের দারুণ এক ভেতরে ঢোকা বলে স্টাম্প খুইয়ে রিজওয়ান ফেরেন ৭৫ বলে ৬৮ রান করে। ওই ওভারের শেষ বলেই ইফতিখারকেও ফেরান ডি লিড। তবে সেই ধাক্কা সামলে পাকিস্তানও লড়াইয়ে ফেরে আরও একবার; মোহাম্মদ নাওয়াজ ও শাদাব খানের সৌজন্যে। শাদাব অবশ্য ফিরতে পারতেন ১৬ রানেই, অ্যাকারম্যানের বলে ডি লিড তো সেই ক্যাচ নিতেই পারলেন না উল্টো হয়ে গেল ছয়। সেই ক্যাচ মিস, রান আউট মিস ডাচদের অবশ্য ভুগিয়েছে ভালই। ৪৪-তম ওভারে ৩২ রানে থাকা শাদাবের স্টাম্প উপড়ে ফেলার পরের বলেই হাসান আলীকেও ফিরিয়েছিলেন ডি লিড। কিছুক্ষণ পরে রান আউট হয়ে থেমেছিলেন ৪৩ বলে ৩৯ রান করা নাওয়াজও। তবে শাদাব-নাওয়াজ জুটি নিজেদের কাজটা ততক্ষণে সেরে ফেলেছিলেন মোটামুটি। শেষ দুই জুটিতে ৩৪ রান এলে পাকিস্তান তাই পেয়ে যায় তাদের প্রত্যাশিত সংগ্রহের কাছাকাছি রসদ।