কোহলি-রাহুলের রাজসিক জুটিতে ভারতের দাপুটে সূচনা
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, ভারত-অস্ট্রেলিয়া(টস-অস্ট্রেলিয়া/ব্যাটিং)
অস্ট্রেলিয়া - ১৯৯, ৪৯.৩ ওভার (স্মিথ ৪৬, ওয়ার্নার ৪১, স্টার্ক ২৮, জাদেজা ৩/২৮, বুমরাহ ২/৩৫, কুলদিপ ২/৪২)
ভারত - ২০১/৪, ৪১.২ ওভার (রাহুল ৯৭*, কোহলি ৮৫, পান্ডিয়া ১১, হেজলউড ৩/৩৮, স্টার্ক ১/৩১)
ফলাফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী
মন্থর উইকেটে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত, স্বল্প পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে দুর্দান্ত শুরু করেও ভিরাট কোহলির ক্যাচ মিস - অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খুইয়ে বসল এসব জায়গায়। অবশ্য স্বাগতিক ভারত নিজেদের সেরাটাই দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হেসেখেলেই হারাল। উইকেটের সদ্ব্যবহার করে স্পিনারদের দাপট, রানতাড়ায় ভয়াবহ শুরুর পরেও মাথা ঠাণ্ডা রাখা - ভারত প্রথম ম্যাচেই জানান দিল তাদের শক্তিমত্তার।
২০০ রানের লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা এর চেয়ে হয়ত খারাপ হতে পারত না। প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের ৫০-তম বিশ্বকাপ শিকার হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ঈশান কিষান। পরের ওভারে তো জশ হেজলউড হানলেন জোড়া আঘাত। দারুণ এক ভেতরে ঢোকা বলে শূন্য রানে থাকা ভারত অধিনায়ককে ফেলেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে। ২০০৪ সালের পর এই প্রথম ভারতের দুই ওপেনার ফিরল শূন্য রানে। ওই ওভারের শেষ বলে শ্রেয়াস আইয়ার ফিরলে ২ রানেই ৩ উইকেট খুইয়ে বসে ভারত। অষ্টম ওভারে ম্যাচটার পাল্লা নিজেদের দিকেই ঘুরিয়ে ফেলতে পারত অস্ট্রেলিয়া। হেজলউডের লাফিয়ে ওঠা বলে কোহলি পুল করতে গেলে বল আকাশে তুলে দিলে সামনে এগিয়ে এসেও মার্শ ফেলে দেন সহজ ক্যাচ; কোহলি তখন মোটে ১২ রানে। ম্যাচটাও যেন সেখানেই ফেলে দেয় অস্ট্রেলিয়া।
এমন সুযোগ পেয়ে হেলায় ফেলে দেবেন সেই পাত্র তো আর যেই হোক কোহলি নন! হলও তাই। আরও একবার অস্ট্রেলিয়ার যম কোহলি ফিফটি পেয়ে যান ৭৫ বলে। কিছুক্ষণ পরে ৭২ বলে ফিফটি পেয়ে যান রাহুল। ম্যাচের মাঝে বল পরিবর্তন করতে হলে নতুন বলে একের পর এক দারুণ শট খেলে কোহলি ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়ার নাগালের বাইরে নিয়ে যান, সেই দৌড়ে কম যাননি রাহুলও। জয় যখন সন্নিকটে তখন সেই হেজলউডের বলটাই মিড উইকেটে সরাসরি তুলে দিয়ে ১১৬ বলে ৮৫ রানের ইনিংস শেষে থামেন কোহলি। তবে ম্যাচ দ্রুত শেষ করার তাড়নায় রাহুল যেন অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের আর তোয়াক্কাই করলেন না। জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন ৫ রান, তখন এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে কামিন্সকে আলতোভাবে উড়িয়ে মেরেছিলেন সেঞ্চুরির আশায়। তবে সেটাই ছয় হয়ে গেলে সেই আশা বিসর্জন দিয়ে ১১৫ বলে ৯৭* রানেই দলের জয় নিশ্চিত করেন রাহুল।
এর আগে নিজেদের ইনিংসের শুরুতেই রানের খাতা খোলার আগে জাসপ্রিত বুমরাহর দ্বিতীয় ওভারে ফিরেছিলেন মিচেল মার্শ, স্লিপে ভিরাট কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে। তবে এরপর দলের হাল ধরে স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার ছুটে চলেছিলেন আপন ছন্দে। দারুণ খেলতে থাকা ওয়ার্নার এদিন রবিচন্দ্রন আশ্বিন জুজুতেও যেন খুব একটা বিচলিত ছিল না। তবে মাঝ ড্রিঙ্কস-বিরতির পর আশ্বিন একটা আঁটসাঁট ওভার করলে সেই গেরো খুলতেই যেন মতিগতি হারিয়ে কুলদিপ যাদবের পরের ওভারে তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৫২ বলে ৪১ রানে থামলেন ওয়ার্নার। মার্নাস লাবুশেনকে নিয়ে সেই ধাক্কা সামলাতে গিয়ে স্মিথ যেন খোলসে ঢুকে যান। স্পিনারদের সামলাতে দুজনের রানের গতিই স্তিমিত হয়ে আসে। ৪৫ বল ধরে কোনও বাউন্ডারি না এলে মাঝে রিভার্স সুইপ চেষ্টা করেও লাবুশেন ব্যর্থ হলে দুজনের মধ্যেই অস্থিরতাটা টের পাওয়া যায় ভালমত। তারই পরিক্রমায় ফিফটির দ্বারপ্রান্তে এসে মনঃসংযোগ হারিয়ে জাদেজার কাছে স্টাম্প খুইয়ে ৭১ বলে ৪৬ রানে থামেন স্মিথ।
স্মিথের বিদায়ের পর যেন হুড়মুড় করে উইকেট যাওয়া শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার। সেই জাদেজাই পরের ওভারে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করিয়ে লাবুশেনকেও থামান ৪১ বলে ২৭ রানে। এক বল পরে রানের খাতা খোলার আগেই অ্যালেক্স ক্যারিও পড়েন এলবিডব্লিউর ফাঁদে। ক্যামেরন গ্রিনকে নিয়ে এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও সেটা ধোপে টেকেনি। কুলদিপের বিশাল ঘূর্ণিতে লেগ স্টাম্প খুইয়ে ম্যাক্সওয়েল ২৫ বলে ১৫ রানে থামলে পরের ওভারেই আশ্বিনের শিকার হয়ে ২০ বলে ৮ রানে শেষ হয় গ্রিনের ইনিংস। ১১২-২ থেকে হুট করে অস্ট্রেলিয়ার স্কোরকার্ড হয়ে দাঁড়ায় ১৪০-৭! পরে ১৫ রানের ইনিংস খেলে প্যাট কামিন্স উইকেটের মিছিল বন্ধ করার চেষ্টা করলে সেটার ওপর ভর করেই মিচেল স্টার্ক খেলেন ২৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। মোহাম্মদ সিরাজের শিকার হয়ে শেষ ব্যাটার হিসেবে ফেরার আগে তার এই ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে লড়াইয়ের রসদ।