ধর্মশালায় ইংলিশ পরীক্ষায় বাংলাদেশের ভরাডুবি
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ(টস-বাংলাদেশ/ফিল্ডিং)
ইংল্যান্ড - ৩৬৪/৯, ৫০ ওভার (মালান ১৪০, রুট ৮২, বেইরস্টো ৫২, মাহেদী ৪/৭১, শরিফুল ৩/৭৫, তাসকিন ১/৩৮)
বাংলাদেশ - ২২৭, ৪৬.৩ ওভার (লিটন ৭৬, মুশফিক ৫১, হৃদয় ৩৯, টপলি ৪/৪৩, ওকস ২/৪৯)
ফলাফল - ইংল্যান্ড ১৩৭ রানে জয়ী
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় পরাজয়ের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের খেলার ধরনে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে বলেই হুমকি দিয়ে রেখেছিল ইংল্যান্ড। নিজেদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে বাংলাদেশের বোলারদের মাথার ঘাম, পায়ের ঘাম এক করে ছেড়েছেন ডাভিড মালান, জো রুট, জনি বেইরস্টোরা। একইসাথে বোলিংয়েও রিস টপলির কোনও জবাব জানা ছিল না বাংলাদেশের ব্যাটারদের। ফল হিসেবে তাই বড় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
৩৬৫ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভয়াবহ। টপলির আউট সুইঙ্গারে টানা দুই বলে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেটে এসে সুবিধা করতে না পারা সাকিব আল হাসান মাত্র ১ রানেই টপলির দারুণ এক বলে স্টাম্প খুইয়ে ফিরলে ম্যাচটা থেকে মানসিকভাবেই যেন ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। এক প্রান্তে লিটন দাস নিজেকে এদিন মেলে ধরলেও অন্য প্রান্তে মেহেদী হাসান মিরাজও কিছুটা বিবর্ণ ওকসের শিকার হয়ে ৮ রানে ফিরলে রানের চাকা সচল রাখাটাও কঠিন হয়ে যায়। উইকেটে এসে মুশফিক সময় নিলেও লিটন পেয়ে যান এবারের আসরের প্রথম ফিফটি, মাত্র ৩৮ বলেই।
দুজনের বোঝাপাড়াটা হয়ে গেলে ১৮.১ ওভারে দলীয় শতরানের দেখা পায় বাংলাদেশ। তবে হুট করে মনোযোগ ছিন্ন হলে ওকসের নিরীহ এক বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে লিটন থামেন ৬৬ বলে ৭৬ রানের দারুণ ইনিংস শেষে। সেখান থেকে বাংলাদেশের ইনিংসটায় যেন রান রেটটা ঠিক রাখার জন্যও খেলতে পারেনি। ৪৭-তম ফিফটি পেয়েছনে মুশফিক; কিন্তু টপলির চতুর্থ শিকার হয়ে তিনিও থেমেছেন ৫১ রানে। ৩৯ রান করলেও হৃদয়ের ইনিংসটা ছিল একেবারই মন্থর। বাংলাদেশ যে ৪৮.২ ওভার খেলতে পেরেছে সেটার জন্য ধন্যবাদটা মাহেদী, তাসকিন, শরিফুলদের প্রাপ্য। তবে বিশাল ব্যবধানের হার, যা বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের চতুর্থ বৃহত্তম তাতে রান রেটের হিসেবেও আখেরে খুব একটা লাভ হয়নি বাংলাদেশের।
এর আগে টসে জিতে বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটার মাশুল দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে পদে পদে। প্রথম কয়েক ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান কিছু প্রশ্ন তুললেও সেই মোস্তাফিজকে আক্রমণ করেই ঘুরে দাঁড়ানো শুরু বেইরস্টো, মালানদের। ৩৯ বলে মালান ফিফটি পেয়ে যান, ইংল্যান্ড শতরান পেয়ে যায় ১৫.৩ ওভারেই। অন্য প্রান্তে থাকা বেইরস্টোও নিজেদের শততম ম্যাচে ফিফটি পেয়ে যান ৫৪ বলে। দুর্বল বোলিংয়ের মাঝেই আশা জাগানো সাকিব ব্রেকথ্রু এনে দেন নিজেই, ৫২ রানে থাকা বেইরস্টোর স্টাম্প উপড়ে ফেলে।
সেখান থেকে বাংলাদেশের গল্পটা হতাশার। রুটকে সঙ্গী করে হিসেব করে আক্রমণ করে কোনও বোলারকেই ছেড়ে কথা বলেননি মালান। দুজনে মিলে ২০০ রানে দলকে নিয়ে যান মাত্র ৩২.১ ওভারেই; এর মধ্যেই মালান নিজের প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি পেয়ে যান ৯১ বলে। ১১৭ বলে ১৫১ রানের দুর্দান্ত জুটিটা ভাঙে মাহেদী হাসানের সাহসী ধীরগতির আর্ম বলে। ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস শেষে মালান থামলেন স্টাম্প খুইয়ে। উইকেটে এসেই এরপর অধিনায়ক বাটলার তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শুরু করলে ১০ বলে ২০ রান শেষেই শরিফুলের বল স্টাম্পে ডেকে এনে ফেরেন তিনি। তবুও ইংলিশরা তিনশো পেরিয়ে যায় মাত্র ৪০.৩ ওভারে। সেখান থেকে গল্পটা বাংলাদেশের হলেও ক্ষতিটা ততক্ষণে করে ফেলেছে ইংলিশ ব্যাটাররা।
৬৮ বলে ৮২ রানের দারুণ ইনিংসশেষ শরিফুলের শিকার হয়ে রুট থামলে তার ঠিক পরের বলেই দারুণ এক কাটারে লিভিংস্টোনের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন শরিফুল। শেষদিকে ব্রুক, কারানদের ফিরিয়ে নিজের কোটা পূর্ণ করেছিলেন মাহেদী। ৩৬৪ রানের পাহাড় গড়ে অবশ্য সেখানেই বাংলাদেশকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ম্যাচ থেকে ছুঁড়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড।