বাংলাদেশের ছন্নছাড়া ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়ের পর উইলিয়ামসন, মিচেলে নিউজিল্যান্ডের তিনে তিন
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ (টস-নিউজিল্যান্ড/বোলিং)
বাংলাদেশ - ২৪৫/৯, ৫০ ওভার (মুশফিক ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ৪১*, সাকিব ৪০, ফার্গুসন ৩/৪৯, বোল্ট ২/৪৫, হেনরি ২/৫৮)
নিউজিল্যান্ড - ২৪৮/২, ৪২.৫ ওভার (মিচেল ৮৯*, উইলিয়ামসন ৭৮, কনওয়ে ৪৫, মোস্তাফিজ ১/৩৬, সাকিব ১/৫৪)
ফলাফল - নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী
চীপকে নিউজিল্যান্ডের কাছে ধরাশায়ী বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে আরও একবার পঞ্চাশ খেলতে না পারার শঙ্কা জাগলেও তিন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহয় সেটা সম্ভব হলেও বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত মাঠে নামা কেন উইলিয়ামসনের দায়িত্তশীল ইনিংসের সাথে ড্যারিল মিচেলের মারকুটে ইনিংসে অনায়াসে জয় পেয়েছে কিউইরা।
২৪৬ রানের লক্ষ্যে অবশ্য ফর্মে থাকা রাচীন রবীন্দ্রকে শুরুতেই মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে খুইয়েছিল নিউজিল্যান্ড। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে দুর্দান্ত বোলিং করেও সেই অর্থে ফল বের করতে পারেননি মোস্তাফিজ-শরিফুল জুটি। পয়েন্টে কনওয়ের কঠিন একটা ক্যাচও অবশ্য ফেলেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুতে বোলারদের যোগ্য সম্মান দিয়ে খেললেও ২১ ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। এর আগে ৯২ ওভারে থাকার সময় কনওয়ে ৪৫ রানে ফেরেন সাকিবের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে। এরপরের বলে উইকেটে এসেই মিচেল বেরিয়ে এসে লং অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গেলে বলের উচ্চতা ধরতে না পেরে মাহমুদউল্লাহ বল লুফে নিতে পারেননি।
সেই যে শুরু এরপর মিচেলের ব্যাটে রানের ধারা আটকানোর উপায় পায়নি বাংলাদেশ বোলাররা। অন্যদিকে ফিফটি পেয়ে যাওয়া উইলিয়ামসনের ক্যাচ শর্ট মিড অনে লুফে নিতে পারেননি তাসকিন। ৪৩ বলে ফিফটি পাওয়া মিচেল শতরানের জুটি গড়ে ফেলেন অধিনায়কের সাথে। তবে বেশ কয়েকবার পিচে পা আটকে যাওয়ার পাশাপাশি এক বার রান আউটের চেষ্টা থেকে বল হাতে লাগায় আর ঝুঁকি নেননি উইলিয়ামসন, ২০০ পূর্ণ হতেই ৭৮ রানে থাকা উইলিয়ামসন যান আহত অবসরে। পরে সেই তাসকিন আবার ফাইন লেগ থেকে দৌড়িয়ে গিয়ে লুফে নিতে পারেননি ফিলিপসের ক্যাচ। ৬৭ বলে ৮৯* রানের দুর্দান্ত ইনিংসটা ছয় দিয়ে শেষ করে তাই নিউজিল্যান্ডের টানা তৃতীয় জয়টাও নিশ্চিত করেছেন অন্য প্রান্তে থাকা মিচেল, দ্রুততার সাথেই।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে জন্মদিনে গোল্ডেন ডাকের শিকার হন লিটন দাস; আন্তর্জাতিক ক্রিকেতেই ইনিংসের প্রথম বলে কোনও বার্থডে বয়ের ক্ষেত্রে যা প্রথম। তিনে নামা মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে জুটি গড়ে এদিন শুরুটা করলেও লকি ফার্গুসনের গতির সাথে না পেরে ১৭ বলে ১৬ রানে থামেন তানজিদ হাসান তামিম। দারুণ শুরু করে মিরাজও পারেননি ইনিংস লম্বা করতে, সেই ফার্গুসনের শিকার হয়েই ৪৬ বলে ৩০ রানে মিরাজ থামলে পরের ওভারেই বল হাতে নিয়েই নাজমুল হোসেন শান্তকে ৭ রানে থামান গ্লেন ফিলিপস। মুহূর্তেই ৫৬ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বসে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিপদে আরও একবার এরপর দলের হাল ধরেন মুশফিক-সাকিব জুটি। মুশফিক এসেই প্রতি-আক্রমণ শুরু করলে সাকিব এক প্রান্ত ধরে রাখার দায়িত্ব নেন। ফিলিপসকে টানা দুই বলে ছয়-চার মেরে মুশফিক ইঙ্গিত দেন আক্রমণের ধারা বজায় রাখার; সেই সাথে পেয়ে যান টানা দ্বিতীয় ও ৪৮-তম ওয়ানডে ফিফটি। তবে ততক্ষণে প্রচন্ড গরমে ধুঁকতে শুরু করেছেন সাকিব। সেজন্য রবীন্দ্রকে চার-ছয় মেরে ইঙ্গিত দেন বাউন্ডারির মাধ্যমে খেলার। পরে ফার্গুসনের বিপক্ষেও একই কাজ করতে যান, বাউন্সার মাঠছাড়া করার পরের বলেই অবশ্য কোমর বরাবর বল আকাশে ভাসিয়ে ৫১ বলে ৪০ রান শেষে থামেন সাকিব। ৯৭ রানের সেই জুটি ভাঙলে উইকেটে এসে তাওহিদ হৃদয় একেবারেই সুবিধা করতে পারছিলেন না। তারই প্রেক্ষিতে চাপে পড়ে যাওয়া মুশফিক আড়াআড়ি ব্যাটে হেনরির এক স্লোয়ার খেলতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ৭৫ বলে ৬৬ রানে।
মুশফিক ফেরার পর খুব একটা আশা দেখাতে পারেনি কেউই। স্পিনারদের সাথে সুবিধা করতে না পারা হৃদয় আক্রমণে বোল্ট এলে কাভারে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়ে থামেন ১৩ রানে। মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটি গড়ে এরপর কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। তবে পুরো দিন জুড়েই দুর্দান্ত বল করা স্যান্টনারের স্পেলের শেষ বলে সুইপ করতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১৯ বলে ১৭ রানের ইনিংস। শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ বিস্ময়করভাবে ৪৬-তম ওভার থেকেই সিঙ্গেল ফিরিয়ে দেন। আখেরে তাতে খুব একটা লাভ না হয়ে ট্রেন্ট বোল্টের ওভারটায় আসে মাত্র ১ রান। মোস্তাফিজও শেষমেশ ওই বোল্টের পরের ওভারে বাউন্সার মোকাবেল করতে গিয়ে ঠিকই ফেরেন। তবে বোল্টের ওই ওভারটায় ছয় মেরে মাহমুদউল্লাহ কিছু একটা করার ইঙ্গি দেন। ড্যারিল মিচেলের করা শেষ ওভারে এরপর ২৯ ওভারের প্রথম ১০+ রান আসে। ৪৯ বলে ৪১* রানে মাঠে থেকে তাতেই মাহমুদউল্লাহ দলকে পৌঁছে দেন ২৪৫ রানে।