• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    ম্যাজিকাল মুজিব, রশিদ-নবীর ঘূর্ণিজালে কুপোকাত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা

    ম্যাজিকাল মুজিব, রশিদ-নবীর ঘূর্ণিজালে কুপোকাত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান (টস-ইংল্যান্ড/বোলিং)
    আফগানিস্তান - ২৮৪, ৪৯.৫ ওভার (গুরবাজ ৮০, অলিখিল ৫৮, মুজিব ২৮, রশিদ ৩/৪২, উড ২/৫০, রুট ১/১৯)
    ইংল্যান্ড - ২১৩, ৪০.৩ ওভার (ব্রুক ৬৬, মালান ৩২, রশিদ ২০, রশিদ ৩/৩৭, মুজিব ৩/৫১, নবী)
    ফলাফল - আফগানিস্তান ৬৯ রানে জয়ী


     

    ইংল্যান্ডকে স্তব্ধ করে আফগানিস্তান দেখাল চমক। দিল্লিতে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ফিরেছিলেন আপন ছন্দে, বিশ্বকাপে প্রথমবার নেমেই ফিফটি পেয়েছেন ইব্রাহিম অলিখিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে যেভাবে জাদু দেখালেন প্রথমার্ধেও তেমনি আফগানদের ট্রাম্প কার্ড আজ মুজিব-উর-রহমান। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ক্যামিও, বল হাতে সেই ধাঁধার জাল বুনে বসা; মুজিবের অলরাউন্ডার বনে যাওয়ার দিনে পুরো আফগান বোলিং ইউনিটও দেখিয়েছেন তাদের সামর্থ্যটা।


    ২৮৫ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই হোঁচট খেয়ে বসে ইংল্যান্ড। নিজের প্রথম বলেই জনি বেইরস্টোকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ফজলহক ফারুকী। প্রথম পাওয়ারপ্লের মধ্যেই এরপর শুরু হয়ে যায় মুজিবের রহস্যময়ী বোলিং। ১১ রানে থাকা জো রুটের স্টাম্প উপড়ে আফগান শিবিরে বিশ্বাসটা শক্তভাবেই গেঁথে দেন এই স্পিনার। তবে গত ম্যাচে বাংলাদেশের ওপর ছড়ি ঘোরানো ডাভিড মালান ছিলেন গলার কাটা হয়ে। ড্রাইভে ডেকে এনে শর্ট এক্সট্রা কাভারে তাকে ৩২ রানে ফাঁদে ফেলেন নবী, আফগানদের ভালভাবেই রাখেন জয়ের রাস্তায়।


    নবীর সাথে জুটি গড়ে নাভিন-উল-হকও তখন হয়ে উঠেছেন ভয়ংকর। কিছুক্ষণ পরেই ইংল্যান্ড অধিনায়ককে যে বলটায় ফেরালেন তা এই পেসার মনে রাখবেন বহুদিন। দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে জস বাটলারের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন নাভিন। অন্য প্রান্তে হ্যারি ব্রুক যেন চেয়ে চেয়ে খালি দেখলেন উইকেটে আসাযাওয়ার মিছিল। নাভিনের ওই ওভারেই ব্রুক ১৫ রান তুললেও দুই ওভার পরেই রশিদের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন লিয়াম লিভিংস্টোন। ৪৫ বলে এরপর ব্রুক ফিফটি তুলে নিলেও ২৭-তম ওভারে নবী আবারও দারুণ অফ স্পিনে স্লিপে তালুবন্দি করে স্যাম কারানকে। ব্রুকের শেষ ভরসার জায়গা ক্রিস ওকসকেও যখন বোলিংয়ে ফিরে দুর্দান্ত এক ভেতরে ঢোকা বলে স্টাম্প উপড়ে ফেরালেন মুজিব; তখন আক্ষরিক অর্থেই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে আফগানরা। তাদের আত্মবিশ্বাসটা যেন ব্রুকের ওপর ভার হয়ে চেপে বসে। এবার মুজিবের বেরিয়ে যাওয়া বল না বুঝে উইকেট কিপারের কাছে ক্যাচ দিয়ে তাই ৬৬ রানের লড়াই শেষে ফিরতে হয় মুজিবকে। শেষদিকে রশিদ-উড-টপলিরা কিছু রান যোগ করলেও রশিদ গুটিয়ে ফেলেন লেজ। আর বিশ্বকাপে কোনও টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়ে যায় আফগানরা।


    আফগানিস্তানের জন্য আশার পারদটা অতটা উঁচু না থাকলেও দুই ওপেনার নিজেদের খুঁজে পান এই ম্যাচে; বিশেষ করে বললে নিজেকে খুঁজে পান রহমানউল্লাহ গুরবাজ। দুজনের ঝড়ো শুরুতে প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই ৭৯ রান তুলে ফেলে আফগানিস্তান। এক প্রান্ত ইব্রাহিম জাদরান আগলে রাখলে অন্য প্রান্তে বোলারদের তুলোধোনা করতে থাকেন গুরবাজ। মাত্র ৩৩ বলেই ফিফটি পেয়ে গেলে গুরবাজ ইংল্যান্ডের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান। সেই চিন্তার উপশম ঘটতে থাকে ১৭-তম ওভার থেকে। কিছুক্ষণ ধরে গড়ে ওঠা চাপের ফল বের করে আদিল রশিদ ইব্রাহিমকে থামান ৪৮ বলে ২৮ রান শেষে। তারই পরিক্রমায় ১৯-তম ওভারেই আফগানদের ইনিংস ভেস্তে দেওয়ার পরিকল্পনা সাজান রশিদ। নিজের ১০০-তম ওয়ানডে খেলতে নামা রহমত শাহকে রশিদ থামান। পরের বলেই ছুটতে থাকা গুরবাজ থামেন রান আউটের শিকার হয়ে।

    অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির সাথে চরম ভুল বোঝাবুঝিতে ৫৭ বলে ৮০ রান শেষে গুরবাজ থামলে আফগানিস্তানের ইনিংস মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা জাগে।  ২৬-তম ওভারের শেষ বলে লিভিংস্টোনের শিকার হয়ে গত ম্যাচে ফিফটি পাওয়া আজমতউল্লাহ ওমরযাই ফিরলে চরম বিপদে পড়ে আফগানিস্তান। যেখানে ১৬ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়েই ১৬ ওভারে ১১৬ রান তুলেছিল আফগানিস্তান সেখানে পরের দশ ওভারে ৩৬ রান তোলে মাত্র তারা, হারায় ৪ উইকেট।


    আফগানদের আশার আলো হয়ে আসেন এই ম্যাচে এবার প্রথম নামা ইব্রাহিম অলিখিল। এক প্রান্তে শহীদি যোগ্য সঙ্গ দিলে অন্য প্রান্তে নিজেকে মেলে ধরেন অলিখিল। শহীদি অবশ্য দুই ওভার পরেই ফিরলে নবীও পারেননি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে। নেমে রশিদ খান চেষ্টা করলেও রশিদ-রশিদ লড়াইয়ে হেরে ২২ বলে ২৩ রানে থামেন তিনি। থামেনই অলিখিল; ৬২ বলে ঠিকই ফিফটি তুলে নেন তিনি। সেই সাথে মুজিব  শেষদিকে ১৬ বলে ২৮ রানের দুর্দান্ত এক ক্যামিও খেলে আফগানিস্তানকে ২৮৪ রানের লড়াকুর সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন। সেই রসদ নিয়েই পরে ইংল্যান্ডকে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে পরাজয়ের লজ্জায় ফেলে আফগানরা।