রান উৎসব, ক্যাচ মিসের মহড়ায় জাম্পার বিচক্ষণ স্পেলে অস্ট্রেলিয়ার টানা দ্বিতীয় জয়
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান (টস-পাকিস্তান/বোলিং)
অস্ট্রেলিয়া - ৩৬৭/৯, ৫০ ওভার (ওয়ার্নার ১৬৩, মার্শ ১২১, স্টয়নিস ২১, আফ্রিদি ৫/৫৪, রউফ ৩/৮৩ )
পাকিস্তান - ৩০৫, ৪৫.৩ ওভার (ইমাম ৭০, শফিক ৬৪, রিজওয়ান ৪৬, জাম্পা ৪/৫৩, স্টয়নিস ২/৪০, কামিন্স ২/৬২)
ফলাফল - অস্ট্রেলিয়া ৬৭ রানে জয়ী
ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক দিয়েছিলেন ব্যাটারদের জেগে ওঠার ডাক। দলের অন্যদের কানে আপাতত সেই ডাক না পৌঁছালেও দুই ওপেনার সেই ডাকে সাড়া দেওয়ায় অস্ট্রেলিয়া গড়েছিল রানের পাহাড়। পাকিস্তানি ওপেনাররাও জবাবে প্রস্তুত থাকলেও অ্যাডাম জাম্পার বিচক্ষণ বোলিংয়ে সেই রানের পাহাড়েই চাপা পড়ে দুই জয়ে শুরু করা পাকিস্তানকে বরণ করতে হল টানা দ্বিতীয় পরাজয়, আর পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা দিল ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা।
৩৬৮ রানের লক্ষ্য যে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে একেবারেই অসম্ভব কিছু নয় সেটা যেন শুরু থেকেই মাথায় রেখে খেলতে থাকে পাকিস্তানের দুই ওপেনার।প্রথম পাওয়ারপ্লেতে আবদুল্লাহ শফিক-ইমাম উল হক জুটি ৫৯ রানের জুটি গড়লেও সেটা ভাঙতে পারত ১২-তম ওভারেই। কামিন্সের খাটো লেংথের বল টেনে মারতে গেলে মিড উইকেটে ক্যাচের সুযোগ করে দেন শফিক। শন অ্যাবট সেই ক্যাচ তো নিতেই পারেননি, উল্টো সেটা হয়ে যায় ছয়! ম্যাক্সওয়েলের করা ১৮-তম ওভারটা অবশ্য বোধহয় ছিল ম্যাচের সবচেয়ে নাটকীয় ওভার। প্রথম বলেই শফিক ফিফটি (৫২ বলে) পাওয়ার পরের বলেই কামিন্স ক্যাচ নিতে না পারায় বেঁচে যান ইমাম। এর দুই বল পরে চার দিয়ে ফিফটি পেয়ে যান তিনিও (৫৪ বলে)। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল ১৬ থেকে ১৮ ওভার পর্যন্ত ডিআরএসের কোনও সুবিধাও ছিল না টেকনিক্যাল সমস্যায়!
সব বাধা উৎরিয়ে স্টয়নিসকে আক্রমণে আনার প্রথম বলেই ৬৪ রানে থাকা শফিককে থামান তিনি। নিজের পরের ওভারে ৭১ বলে ৭০ রান করে হাত খোলার ইঙ্গিত দিতে থাকা ইমামকেও থামান তিনি। তবে ২৭-তম ওভারে পাকিস্তানকে সবচেয়ে বড় আঘাতটা দেন জাম্পা। বৃত্তের ভেতরে থাকা কামিন্সের দিকে সপাটে শট খেললে এবার ঠিকই বল লুফে নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক; জাম্পা পাকিস্তান অধিনায়ককে তাই থামান ১৪ বলে ১৮ রানে। তবে সাউদ শাকিলকে নিয়ে পাকিস্তানকে তখনও ভালভাবেই ম্যাচে রেখেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৩০ ওভারেই দলীয় ২০০ রান পূর্ণ করে শেয়ানে শেয়ানে পাকিস্তান লড়লে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে; ৩১ বলে ৩০ রানে থাকা শাকিলকে থামান স্টয়নিসের দারুণ ক্যাচে।
বাকি কাজটুকু জাম্পা সেরে দেন তার গুগলি ও ফ্লিপারের দারুণ ব্যবহারে। কামিন্সের ওপর চড়াও হওয়া ইফতিখার আহমেদ যখন অস্ট্রেলিয়াকে দম ফেলার সুযোগ দিচ্ছিলেন না তখনই দারুণ এক রিভিউয়ের সুবাদে ২৬ রানে থাকা ইফতিখারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। পাকিস্তানের আশার পাত্র হয়ে থাকা রিজওয়ানকেও তিনি একই ফাঁদে ফেলেন পরের ওভারে। বেরিয়ে এসে আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গেলে রিজওয়ানকে থামতে হয় ৪০ বল ৪৬ রানে। নিজের শেষ ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজকে স্টাম্পিংয়ের শিকার বানিয়ে কার্যত পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেকটাও ঠুকে দেন জাম্পা। এদিন কিছুটা খরুচে স্টার্কের অবশ্য একটা রেকর্ড ছিল হুমকির মুখে। এর আগে নিজের বিশ্বকাপের সব ম্যাচে উইকেট পেলেও এদিন ভেঙে যেতে পারত সেই ধারা। হাসান আলীকে থামিয়ে সেই ধারাও বজায় রাখার পর কামিন্সের শিকার হয়ে শাহীন শেষ ব্যাটার হিসেবে ফিরলে অস্ট্রেলিয়া পেয়ে যায় টানা দ্বিতীয় জয়।
পাকিস্তান অবশ্য খাল কেটে কুমির ডেকেছে নিজেরা। শাহীন আফ্রিদির পঞ্চম ওভারেই সুযোগ দিয়েও বেঁচে যান ওয়ার্নার। সেখাণ থেকে তুলোধোনা করে ২৫ ওভারেই ১৭২ রান তুলে ফেলে এই জুটি। ৩০-তম ওভারে দলীয় দুইশো রান পূর্ণ হলে তার পরের ওভারে দুজনেই পেয়ে যান সেঞ্চুরি। ৮৫ বলে ওয়ার্নার সেঞ্চুরি পেলে বলপ্রতি সেঞ্চুরি পেয়ে যান মার্শ। উসামা মীরের ৩৩-তম ওভারে দুজনে মিলে ১৯ রান তুলে গিয়ার আরেক দফা পাল্টানোর ইঙ্গিত দিলে পরের ওভারে শাহীন আফ্রিদি হানেন জোড়া আঘাত। ১০৮ বলে ১২১ রান করে মার্শ ফেরার পরের বলেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ফেরেন।
উসামা মীরের ফিরতি ক্যাচে স্টিভ স্মিথ ৭ রানে ফিরলে মাঝে একটু ঝিমিয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য মাত্র ১১৬ বলে ওয়ার্নার দেড়শো পূর্ণ করে পাকিস্তানি বোলারদের দম ফেলার সময় দেননি। সেই উপলক্ষ হয় ৪৩-তম ওভারে হারিসের আঘাতে ওয়ার্নার, ১২১ বলে ১৬৩ রানে থামলে। সেখান থেকে অবশ্য আফ্রিদি, রউফদের কারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া, ২১ রান করে স্টয়নিস কেবল বিশের ঘর পেরিয়েছে। ২৫৯ রানের ওপেনিং জুটির পর চারশোর অংক না ছুঁতে পারা নিয়ে তাই হয়ত কিছুটা আক্ষেপ থাকবে তাদের।