আরও একবার রান তাড়ায় রাজসিক কোহলি; ভারতের পাঁচে পাঁচ
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, ভারত-নিউজিল্যান্ড (টস-ভারত/বোলিং)
নিউজিল্যান্ড - ২৭৩, ৫০ ওভার (মিচেল ১৩০, রবীন্দ্র ৭৫, ফিলিপস ২৩, শামি ৫/৫৪, কুলদীপ ২/৭৩, সিরাজ ১/৪৫)
ভারত - ২৭৪/৬, ৪৮ ওভার (কোহলি ৯৫, রোহিত ৪৬, জাদেজা ৩৯*, লকি ২/৬৩, স্যান্টনার ১/৩৭, হেনরি ১/৫৫ )
ফলাফল - ভারত ৪ উইকেটে জয়ী
এর আগে আইসিসি ইভেন্টে নিউজিল্যান্ডের সাথে মাত্র তিন বার জিততে পেরেছে ভারত। তবে গত বিশ্বকাপে সেমিতে কিউইদের বিপক্ষে হেরে বাদ পড়ার দুঃখ ভারত কিছুটা হলেও ঘুচাল তাদের অপরাজিত থাকার ধারা ছিন্ন করে। সেই সাথে আসরের একমাত্র দল হিসেবে অপরাজিত থেকে টানা পঞ্চম জয় পেল রোহিত-বাহিনী।
২৭৪ রানের লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয় দারুণ। আরও একদিন ভারতকে ভালো শুরু এনে দিয়ে সামনে থেকেই মঞ্চের ভিতটা গড়ে দেন রোহিত শর্মা। ৩৯ রানে স্যান্টনারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলে অবশ্য সেখান থেকে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি রোহিত। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৬৩ রান তুলে ফেলা ভারতের ইনিংসে শঙ্কা জাগিয়ে তুলেন লকি ফার্গুসন, নিজের টানা দুই ওভারে দুই ওপেনার শিকারে। এই পেসারের বল স্টাম্পে ডেকে এনে ৪০ বলে ৪৬ রানে রোহিত ফিরলে পরের ওভারে ৩১ বলে ২৬ রানে থামেন গিল। শ্রেয়াস আইয়ার এসে এরপর ঝড়ো শুরু করলে ১৫.৪ ওভারে বন্ধ হয় খেলা, সেটাও উদ্ভট এক কারণে! অতিরিক্ত কুয়াশায় ধর্মশালায় খেলা বন্ধ থাকলে নিজেদের ভালো সময়টার সুযোগ নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।
নিতে অবশ্য দেননি সেই ভিরাট কোহলিই। লোকেশ রাহুলকে সঙ্গী করে আরও একবার ভারতের রান তাড়ায় হাল ধরেন তিনি। মাঝে ২৯ বলে ৩৩ রান করে শ্রেয়াস বোল্টের শিকার হয়ে ফিরলেও তাই ভারতের খুব একটা সমস্যা হয়নি সেই জুটিতে। নিউজিল্যান্ড অবশ্য এদিন ফিল্ডিংয়েও নজর কাড়তে পারেনি সেই অর্থে। তবে বোলিংয়ে চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। ২০-৩০ ওভারে সেই চেষ্টাতেই ভারত তুলতে পারে ৪৭ রান। রবীন্দ্রর তৈরি করা চাপের ফলটা এরপর মিচেল স্যান্টনার পান বেরিয়ে এসে খেলতে যাওয়া রাহুলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে, ২৭ রানে থাকা উইকেট কিপার ব্যাটারের বিপক্ষে দারুণ এক রিভিউ নিয়ে। ওই ওভারেই ৬০ বলে কোহলি আসরে নিজের ৩য় ফিফটি পেলেও পরের ওভারে সূর্যকুমারের সাথে চরম ভুল বুঝাবুঝি হলে ফিরতে হয় স্কাইকে। সেখান থেকেই যেন শাপমোচনের দায়ভারটা নিজের কাঁধেই তুলে নেন কোহলি। সাথে যোগ দেওয়া রবীন্দ্র জাদেজাও দেন দারুণ সঙ্গ। আরেক রবীন্দ্রর ওপর চড়াও হয়ে কোহলির কাজটাও সহজ করে দেন এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাট হাতে নামা জাদেজা। রান তাড়ায় পাঁচ রান যখন প্রয়োজন সেঞ্চুরির জন্য কোহলির জন্য তখন প্রয়োজন ৫ রান। দুবার সিঙ্গেল না নিয়ে ছয় মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ফিলিপসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১০৪ বলে ৯৫ রানে তাই পরে থামেন কোহলি। তবে ওই ওভারের শেষ বলে চার মেরে ৩৯* রানে থেকে ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন জাদেজা।
ধর্মশালায় বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা সঠিক প্রমাণ করতে ভারত নিজেদের সর্বোচ্চটা দেয় শুরু থেকেই। চতুর্থ ওভারেই রানের খাতা খোলার আগে শ্রেয়াস আইয়ারের দারুণ নিচু হয়ে আসা ক্যাচে সিরাজের শিকার হয়ে ফেরেন ডেভন কনওয়ে। ৮.১ ওভারে মাত্র ১৯ রানে নিউজিল্যান্ড হারায় দ্বিতীয় উইকেট; মোহাম্মদ শামির এবারের বিশ্বকাপের প্রথম বলটাই স্টাম্পে ডেকে থামেন উইল ইয়াং। তবে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড; রাচীন রবীন্দ্র-ড্যারিল মিচেল জুটিতে। সেটায় অবশ্য ভারতও অবদান রেখেছে ক্যাচ মিস করে। পয়েন্টে ১১-তম ওভারেই সেই শামির বলে রবীন্দ্র ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান জাদেজার ব্যর্থতায়; ফিফটি পাওয়ার পর মিচেলও বেঁচে যান বুমরাহর ক্যাচ মিসে। তবে নিউজিল্যান্ডও বিপদ সামলাতে ছিল সমান পারদর্শী।
শুরুর ধাক্কা সামলে রবীন্দ্র-মিচেল জুটি দলীয় শতরান পূর্ণ করেন ২১ ওভারেই। ৫৬ বলে রবীন্দ্র ফিফটি পেয়ে গেলে মিচেল নিজেরটা পান ৬০ বলে। কুলদীপ যাদবকে পড়তে যেখানে সবারই দুবার ভাবতে হয় সেখানে এই দুজন খেলেছেন স্বাচ্ছন্দে। ওয়ানডেতে কোনও এক ব্যাটারের কাছে সবচেয়ে বেশি রানও গুনেছেন আজ এই চায়নাম্যান, মিচেলের কাছে ৪৮ রান খরচ করে। ১৫০+ রানের জুটি গড়ে রবীন্দ্র-মিচেল জুটি যখন ভয়ংকর হয়ে উঠছিল তখনই ভারত ম্যাচে ফেরে শামির সুবাদে। তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ৮৭ বলে ৭৫ রানে থামেন রবীন্দ্র। নিজেকে খুঁজে পেয়ে এরপর কুলদীপ নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ও গ্লেন ফিলিপসকে ফেরালও মাঝে ৪১-তম ওভারে ঠিকই সেঞ্চুরি পেয়ে যান মিচেল, ১০০ বলেই।
তবে মিচেল এক প্রান্তে থাকলেও অন্য প্রান্তে ঝলক দেখিয়েছেন শামি। ৪৮-তম ওভারে তো টানা দুই বলে স্যান্টনার ও হেনরির উইকেট নিয়ে তৈরি করেছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগ। সেটা না হলে তার করা শেষ ওভারে মিচেল ছয়-চার মেরে পঞ্চম বলে থামেন ১২৭ বলে ১৩০ রান করে; শামি নিজের প্রথম ম্যাচেই ৫-উইকেট পেলেও নিউজিল্যান্ড পেয়ে যায় লড়াইয়ের রসদ। তবে দিনশেষে শামি-বুমরাহর দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে শেষ দশ ওভারে কিউইদের ৬৩ রানেই আটকে দেওয়াটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবধান।