দক্ষিণ আফ্রিকাকে কীভাবে হারাতে পারবে বাংলাদেশ?
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যাত্রা। এবার গ্রুপ পর্বে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। টানা তিন হারে অবশ্য বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ব্যাকফুটেই বলা চলে। শেষ চারে টিকে থাকতে প্রোটিয়াদের হারাতেই হবে বাংলাদেশকে।
এদিকে চার ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। হেরে অঘটনের শিকার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। তবে সেই অঘটনের ছোঁয়া প্রোটিয়ারা ঝেড়ে ফেলেছে সর্বশেষ ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাল জয়ে। তবুও এই প্রোটিয়া দল কি অপরাজেয়? কীভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারবে বাংলাদেশ?
ভেন্যু
দিবারাত্রির এই ম্যাচের ভেন্যু মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। আরব সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় দিনের শুরুতে নতুন বলে কিছু সুইং, সিম মুভমেন্ট পান পেসাররা। স্পিনাররাও আদায় করতে পারেন টার্ন। দুপুরে শুরু হতে যাওয়া এই ম্যাচে দিনের শুরুর মতো সুইং, মুভমেন্ট না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। ইনিংসের দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথে সাথে উইকেট হয়ে উঠে ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। এই মাঠে বাংলাদেশ সর্বশেষ খেলেছে ১৯৯৮ সালে
শুরুতেই ওপেনিং জুটি ভাঙা
ম্যাচের শুরুতেই ভাঙতে হবে কুইন্টন ডি কক-টেম্বা বাভুমার ওপেনিং জুটি। যদিও বাভুমা অসুস্থ থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার আগের ম্যাচে ওপেন করেছিলেন রিজা হেনড্রিকস। আর যদি বাভুমা পরের ম্যাচে ফেরেন, তাকে আউট করতে অধিনায়ক সাকিবের অস্ত্র হতে পারেন শরীফুল ইসলাম। ডানহাতিদের বিপক্ষে ন্যাচারাল আউট সুইংগার, অস্বস্তিকর বাউন্সারেই নিয়েছেন ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি উইকেট। এদিকে ডানহাতি পেসারদের বলেই সবচেয়ে বেশিবার আউট হয়েছেন ডি কক। তাকে টার্গেট করতে পারেন হাসান মাহমুদ-তাসকিন আহমেদরা
পাওয়ারপ্লে ব্যাটল
বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত এই বছর পাওয়ারপ্লেতে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে বেশি গড়ে রান তুলেছে কেবল অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ পাঁচ ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের গড় পাওয়ারপ্লে স্কোর ৫১। নতুন বলে প্রোটিয়া ওপেনারদের লড়াইটা হবে বাংলাদেশী পেসারদের। ২০২২ সাল থেকে এই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেস্ট খেলুড়ে দেশের পেসারদের মধ্যে বাংলাদেশীদের বোলিং গড়ই সেরা। ওয়াংখেড়ের মুভমেন্ট-সুইং কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শরীফুল-তাসকিনরা থামাতে পারলে ম্যাচে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
ক্লাসেন-মুস্তাফিজ লড়াই
প্রোটিয়াদের টপ অর্ডার পা ফসকালে মিডল অর্ডারের খুটি হয়ে আসবেন হাইনরিখ ক্লাসেন। এই বছর পাঁচ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ রান করেছেন দেড়শর বেশি স্ট্রাইকরেটে। গত ম্যাচে ৬১ বলে করেছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। মিড ওভারে আউট সুইংগার, কাটার দিয়ে তাকে টার্গেট করতে পারেন মোস্তাফিজুর রহমান। ডানহাতিদের বিপক্ষে দ্য ফিজের রেকর্ডই আশা জোগাতে পারে বাংলাদেশকে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দুই তৃতীয়াংশ উইকেটই বাঁহাতি এই পেসার নিয়েছেন ডানহাতিদের আউট করে।
স্পিনটাও বেশ ভালো খেলেন ক্লাসেন। বর্তমান সময়ের সেরা স্পিন হিটারদের একজন তিনি। স্পিনের বিপক্ষে এই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে প্রায় ১৬৯ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে মিড ওভারে সাকিব-মিরাজের স্পিন তাকে আটকাতে কার্যকরী হতে পারে।
মিড ওভারে স্পিন জাদু
২০২১ থেকে মিড ওভারসে পুরনো হওয়া বলে সাকিব-মিরাজ নিয়েছেন ৬৭ উইকেট। এই সময়ে টেস্ট খেলুড়ে দেশের বোলারদের মধ্যে মিড ওভারে সাকিবের চেয়ে বেশি ডট বল করেছেন কেবল তিনজন। এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ক্লাসেনকে ডট বলের চাপে ফেলে উইকেট আদায় করে নিতে পারেন সাকিব বা মিরাজের কেউ।
মিড ওভারে সর্বোচ্চ ডট বল
বোলার |
ডট বল |
আকিল হোসেন |
৮৯৯ |
মেহেদী হাসান মিরাজ |
৭৪৮ |
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা |
৭২৩ |
সাকিব আল হাসান |
৭১৯ |
১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত
‘কিলার’ মিলারের ম্যাচ আপ মিরাজ
ইনিংসের শেষদিকে ডেভিড মিলার ভয়ংকর হতে পারেন। টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে ২০২৩ সালে ডেথ ওভারে ব্যাট করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটে। এই বাঁহাতিকে ফেরাতে চাইলে অধিনায়ক সাকিবের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাঁহাতিদের বিপক্ষেই নিয়েছেন ক্যারিয়ারের অর্ধেকের বেশি উইকেট। প্রতি ৪.৩৩ বলে বাঁহাতিদের নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
সাম্প্রতিক রেকর্ডও বাংলাদেশকে আত্মিশ্বাস যোগাতে পারে। দুই শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। দুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে চারবারের দেখায় দুইটি করে ম্যাচ জিতেছে দুই দলই। সর্বশেষ দেখায় জয়ী দল বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের হারিয়ে জয়ের পাল্লা ভারী করতে পারবে কি বাংলাদেশ?