• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    নিঃসঙ্গ মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি সত্ত্বেও প্রোটিয়া ফায়ারের লেলিহান শিখায় ভস্ম বাংলাদেশ

    নিঃসঙ্গ মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি সত্ত্বেও প্রোটিয়া ফায়ারের লেলিহান শিখায় ভস্ম বাংলাদেশ    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ (টস-দক্ষিণ আফ্রিকা/ব্যাটিং)
    দক্ষিণ আফ্রিকা - ৩৮২/৫, ৫০ ওভার (ডি কক ১৭৪, ক্লাসেন ৯০, মার্করাম ৬০, হাসান ২/৬৭, মিরাজ ১/৪৪)
    বাংলাদেশ - ২৩৩, ৪৬.৪ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ১১১, লিটন ২২, নাসুম ১৯, কোটজিয়া  ৩/৬২, রাবাদা ২/৪২,  ইয়ানসেন ২/৩৯)
    ফলাফল - দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৯ রানে জয়ী



    দুই দলের ফর্মের বিপরীতমুখী অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশের হারটা দেখে ফেলেছিল অনেকেই; প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে পারলে যে অবস্থা আরও করুণ হবে সেই শঙ্কাটাও ছিল। আগের দিন অধিনায়কও দেশের মানুষকে টসে জেতার জন্য দুহাত তুলতে বলেছিলেন। তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে যে এভাবে লেজ গুটিয়ে মান বাঁচানোর জন্য দৌড়াতে হবে সেটা হয়ত ভাবেনি বাংলার বাঘরা, ভাবেননি সমর্থকরাও। মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরি করে একাই মান রক্ষার দায়িত্ব বয়ে চললেও তাই বাংলাদেশকে বরণ করতে হয়েছে ১৪৯ রানের পরাজয়।


    ৩৮৩ রানের লক্ষ্যে শুরু থেকেই বাইশ গজে আসা যাওয়ার মিছিলে নেমে যায় বাংলাদেশ। সাবধানী শুরু করেও মার্কো ইয়ানসেনের নিরীহ দুটো লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে উইকেট কিপারে হাতে বল তুলে দিয়ে টানা দুই বলে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের ওভারেই লিজাড উইলিয়ামসের হালকা লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা মেরে উইকেট কিপারকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ১ রানে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। প্রথম পাওয়ারপ্লেটা এরপর কোনোমতে পার করে দিলেও এক ওভার পরেই জেরাল্ড কোটজিয়ার বাউন্সারে থার্ড ম্যানে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়ে ৮ রানে থামেন মুশফিক। লজ্জা এড়াতে উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা লিটন দাসও এরপর রাবাদার সোজা এক বল মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ৪৪ বলে ২২ রানে। উইকেটে আসা মেহেদী হাসান মিরাজ একবার এরপর রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেও সেই মহারাজের শিকার হয়েই ১১ রানে তিনি ফেরেন।
     

    ৮১ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বিশাল লজ্জার মুখোমুখিই ছিল বাংলাদেশ। সম্মান রক্ষার কাজটা বলতে গেলে এরপর একাই করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৯ রান করে নাসুম আহমেদ ও ১৫ রান করে হাসান মাহমুদ ব্যাটারদের লজ্জা দিয়েছেন বটে। আর এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে লজ্জাকর রেকর্ডের মুখ থেকে কোনোমতে ফিরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। নিরামিষ এক ম্যাচে ইয়ানসেনের সাথে তার লড়াইটাই শেষদিকে ম্যাচে কিছুটা হলেও প্রাণ এনেছিল। সেই লড়াইয়ে ইয়ানসেন জিততে পারতেন ৭৩ রানে থাকার সময় মিড অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ আকাশে বল ভাসালে; বেশ কঠিন সেই ক্যাচটা অবশ্য নিতে পারেননি লিজাড। পরে কোটজিয়ার স্লো বলে ডিপ স্কয়্যার লেগে ক্যাচ তুলে দিলেও নো বলে বেঁচে যান। মনোবল ধরে রেখে পরে ঠিকই পেয়ে যান সেঞ্চুরি। ৪টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির সবকটিই তাই আসে আইসিসি ইভেন্টে। সেই সাথে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও নিজের করে নেন তিনি। ১১১ বলে ১১১ রান করে অবশ্য পরে এই কোটজিয়ার স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়ে থামেন মাহমুদউল্লাহ। ১১ রান করে মোস্তাফিজ শেষ ব্যাটার হিসেবে ফিরলে এরপর তাই বাংলাদেশকে বরণ করতে হয় ওয়ানডে বিশ্বকাপে তাদের তৃতীয় বৃহত্তম পরাজয়।


    অথচ বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা দারুণ হয়েছিল। রানের খাতা খোলার আগেই রিজা হেন্ড্রিকস স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেও দারুণ এক ইনসুইঙ্গারে পরে ১২ রানে তার স্টাম্প উপড়ে ফেলেন শরিফুল ইসলাম। ফর্মে থাকা রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকেও মাত্র ১ রানে মেহেদী হাসান মিরাজ এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৪৪ রান তুলতে পারে তারা।


    ম্যাচের মোড়টাও বদলাতে থাকে এরপর থেকেই।  দলীয় শতরান তারা ছুঁয়ে ফেলে ২০.২ ওভারেই! এইডেন মার্করামকে নিয়ে কুইন্টন ডি কক খেলতে থাকেন আপন ছন্দে। আর ডি ককের সামনে তখন থেকেই বাংলাদেশকে যেন অসহায় লাগতে থাকে। ডি কক যথারীতি সেঞ্চুরি ঠিকই পেয়ে যায়, আসরের ৩য় সেঞ্চুরিটা আসে ১০১ বলে। ক্লাসেন তখনও হাত খুলেননি; তাতেই দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের দুইশো রান পেয়ে যায় ৩৫.৫ ওভারে। ২১ থেকে ৪০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৪৪ রানটা তাও কিছুটা আশা দিচ্ছিল বাংলাদেশকে।


    সেই আশা ধুলোয় মিটিয়ে ঠিকই শেষ দশ ওভারে রুদ্রমূর্তি ধারণ করর প্রোটিয়ারা। ১২৯ বলে ডি কক ১৫০ রান করে ফেললে ক্লাসেনও তখন হাত খোলেন। ৩৪ বলে ক্লাসেন ফিফটি পেলে পেসার, স্পিনার কাউকেই ছেড়ে কথা না বলে প্রোটিয়াদের আগুনে ব্যাটিংয়ে দিশেহারা হয়ে যায় বাংলাদেশের বোলাররা। একমাত্র মিরাজ আশার আলো হয়ে থাকলেও শেষে তার হাত ঘুরানোর সুযোগ হয়নি। সবচেয়ে খরুচেদের একজন হাসান শেষমেশ থামিয়েছেন এই দুজনকে। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়ে ১৪০ বলে ১৭৪ রানে ডি কক হাসানের শিকার হয়ে থামলে শেষ ওভারে তার ব্যাক অফ দ্য হ্যান্ড স্লোয়ারকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ৪৯ বলে ৯০ রানে থামেন ক্লাসেন। তবে এই দুজনের ঝড়ের সাথে ডেভিড মিলারের ১৫ বলে ৩৪* রানে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। শেষ দশ ওভারে ১৪৪ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা ঠিকই গড়েছে রানের পাহাড়।