• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    স্নায়ুর লড়াইয়ে পাকিস্তানকে পরাস্ত করে টেবিলের শীর্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা

    স্নায়ুর লড়াইয়ে পাকিস্তানকে পরাস্ত করে টেবিলের শীর্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা (টস-পাকিস্তান/ব্যাটিং)
    পাকিস্তান - ২৭০, ৪৬.৪ ওভার (শাকিল ৫২, বাবর ৫০, শাদাব ৪৩, শামসি ৪/৬০, ইয়ানসেন ৩/৪৩, কোটজিয়া ২/৪২)
    দক্ষিণ আফ্রিকা - ২৭১/৯, ৪৭.২ ওভার (মার্করাম ৯১, মিলার ২৯, ডি কক ২৪, আফ্রিদি ৩/৪৫, মীর ২/৪৫, ওয়াসিম ২/৫০)
    ফলাফল - দক্ষিণ আফ্রিকা ১ উইকেটে জয়ী


     

    ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে জয় না পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্যে আজও মনে হচ্ছিল একই পরিণতিই জুটতে যাচ্ছিল। তবে বিশ্বকাপের প্রথম থ্রিলারে স্নায়ু ধরে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়ে গেল ১ উইকেটের জয়; সেই সাথে রান রেটে এগিয়ে থেকে চলে গেল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে।

    ২৭১ রানের লক্ষ্যে কুইন্টন ডি কক শুরুটা করেন বাউন্ডারির ফুলঝুরিতে। শাহীন শাহ আফ্রিদিকে এক ওভারেই মারেন ৪টি চার। তবে এই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসে আফ্রিদি; নিরীহ এক বাউন্সারে ডিপ স্কয়্যার লেগে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে ১৪ বলে ২৪ রানে থামেন ডি কক। রান রেট সেখান থেকে কিছুটা কমলে সেই খাটো লেংথের পরিকল্পনাতেই টেম্বা বাভুমাকে ২৭ বলে ২৮ রান শেষে থামান মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই তবুও দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে ফেলে ৬৭ রান।

    পরের দশ ওভারে অবশ্য এইডেন মার্করামের ভেলায় ভেসে দক্ষিণ আফ্রিকা বাকি পথ পাড়ি দিলেও শাদাব খানের কনকাশন বদলি হিসেবে নামা উসামা মীরের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ফেরায় ওই সময়টা দক্ষিণ আফ্রিকার রানের গতি কিছুটা স্তিমিত হয়ে যায়। ১৩.৪ ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ হলেও মাঝে ওয়াসিমের দ্বিতীয় শিকার হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হাইনরিখ ক্লাসেন ফিরলে ১৫০ রান আসে ২৪.৪ ওভারে গিয়ে। কিছুক্ষণ পরেই বলপ্রতি ফিফটি তুলে নিলে অন্য প্রান্তে ডেভিড মিলারও যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন। জুটি ভাঙতেই বাবর তার মূল পেসারদের ফেরালে ফলটাও পেয়ে যান ৩৪-তম ওভারে। আফ্রিদির অফ স্টাম্পের ওপরের বলটা ভুল লাইনে খেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মিলার ২৯ রানে ফিরলে ম্যাচে আবারও ফেরে প্রাণ।

    উইকেটে এসে মার্কো ইয়ানসেন প্রান্ত বদলের চেয়ে বাউন্ডারি বের করাতেই বেশি মনোযোগ দিলে সেটা পড়তেও সময় নেননি আফ্রিদি। দারুণ এক স্লোয়ার দেওয়ায় সেটা পড়তে না পেরে আগেই ব্যাট চালিয়ে পয়েন্টে বাবরের ভালো এক ক্যাচে ১৪ বলে ২০ রানে ইয়ানসেন থামেন। সেখান থেকেই যেন চাপটাও টের পেতে শুরু করে প্রোটিয়ারা। সেই চাপ থেকে মুক্তি পেতেই আক্রমণে আসা লেগ স্পিনার মীরের ওপর চড়াও হতে গেলেই বিপদে পড়েন মার্করাম; আকাশে বল ভাসিয়ে ৯৩ বলে ৯১ রানে থামলে তাদের জয়টাও হুমকির মুখে পড়ে যায়। জিততে হলে পাকিস্তানকে উইকেট নিয়েই জিততে হত। পাকিস্তানের পেসাররাও হতাশ করেননি অধিনায়ককে। শাহীনের বেরিয়ে যাওয়া বলে কোটজিয়া ১০ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে প্রতিরোধ গড়া এনগিডিও বলে কানায় ব্যাট লাগিয়ে ফেরে হারিস রউফের শিকার হয়ে। বলের চেয়ে অবশ্য নিজেই এগিয়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁ হাতে যেই ক্যাচটা হারিস নিয়েছিলেন তাতেই পাকিস্তান শিবিরও জয়ের আশায় গর্জে উঠেছিল। তবে এক প্রান্তে ঠাণ্ডা মাথায় হিসাব কষতে থাকা কেশব মহারাজ পেসারদের স্পেল শেষ হওয়ার জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলেন, শেষ ব্যাটার শামসিকেও বুঝিয়ে দিলেন সেটাই। সেই সময়টা আসতেই নিরুপায় হয়ে নাওয়াজকে আক্রমণে আনেন বাবর; সেই ওভারের দ্বিতীয় বলেই স্ট্রাইক পেয়ে পায়ের ওপর দেওয়া বলটা ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগের ফাঁকা বাউন্ডারির দিকে ঠেলে দিয়ে গর্জে ওঠেন মহারাজ জয়ের আনন্দে।

    এর আগে  পাকিস্তানের শুরুটা অবশ্য একেবারেই ভাল হয়নি। ৫ম ওভারেই আবদুল্লাহ শফিককে ফিরিয়ে নিজের পরের ওভারে আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হককেও থামান মার্কো ইয়ানসেন। সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের কাজটা আরও একবার বাবর-রিজওয়ান জুটি করতে থাকলে স্রোতের বিপরীতেই রিজওয়ানকে বাউন্সারের ফাঁদে ফেলে ফেরান জেরাল্ড কোটজিয়া। অবশ্য নিজের প্রথম বলেই ইয়ানসেনের ফিরতি ক্যাচের শিকার না হওয়া রিজওয়ান ৩১ রান করে হয়ত নিজের ভাগ্যকে দুষতে পারবেন না। বিশ্বস্ত ব্যাটিং সঙ্গীর বিদায়ের পর বাবর দলের শতরান পূর্ণ করেন ১৯.৪ ওভারে, ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গী করে।

    তবে ৩১ বলে ২১ রানের পর তাব্রেইজ শামসির শিকার হয়ে ইফতিখার ফিরলে বাবর আর বেশি সময় লড়াইয়ে টিকতে পারেননি। ৬৪ বলে ফিফটি করে পরের বলেই শামসির ভেতরে ঢোকা বলে সুইপ করতে গিয়ে ডি ককের কাছে ক্যাচ দেন। দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য খুবই মৃদু আবেদন করে শেষ মুহূর্তে রিভিউ চেয়ে পেয়েছিল সফলতা। আরও একটা ব্যাটিং বিপর্যয় যখন পাকিস্তানকে চোখ রাঙাচ্ছিল তখনই দলের হাল ধরেন সাউদ শাকিল-শাদাব খান জুটি। ২৮ ওভারে যেখানে ১৪১ রানে থেকে ধুঁকছিল পাকিস্তান সেখান থেকে ৩৯.৫ ওভারে যখন জুটি ভাঙে তখন পাকিস্তান পেয়ে যায় ২২৫ রানের সংগ্রহ। কোটজিয়ার শিকার হয়ে ৪৩ রানে শাদাব ফিরলেও বলপ্রতি ফিফটি পেয়ে যান শাকিল।

    শাকিলও তার অধিনায়কের মত ফিফটির পরপরই শামসির বলে উইকেট কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ৫২ বলে ৫২ রানে ফিরলে ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কা জাগে আরেকবার। সেই শঙ্কা থেকে মোহাম্মদ নাওয়াজ তাদের উদ্ধার করলেও আহামরি বড় কোনও জুটি গড়তে পারেননি কারও সাথে। ইয়ানসেনের শিকার হয়ে নবম উইকেট হিসেবে নাওয়াজ ২৩ রানে থামলে পরের ওভারেই ২৭০ রানে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দেন এনগিডি।