ডাচ 'ডর' থেকে লেজ গুটিয়ে পালাল বাংলাদেশের বাঘেরা
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশ (টস-নেদারল্যান্ডস/ব্যাটিং)
নেদারল্যান্ডস - ২২৯, ৫০ ওভার (এডওয়ার্ডস ৬৮, এঙ্গেলব্রেখট ৩৫, ভ্যান বিক ২৩*, মোস্তাফিজ ২/৩৬, মাহেদী ২/৪০, তাসকিন ২/৪৩ )
বাংলাদেশ - ১৪২, ৪২.২ ওভার (মিরাজ ৩৫, মোস্তাফিজ ২০, মাহমুদউল্লাহ ২০, ভ্যান মিকেরেন ৪/২৩, ডি লিড ২/২৫, অ্যাকারম্যান ১/২৫)
ফলাফল - নেদারল্যান্ডস ৮৭ রানে জয়ী
লজ্জার মাথা খেয়ে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে বসল বাংলাদেশ। ২০০৩ বিশ্বকাপের ভূত যেন ফিরে এলো আবার! শুধু পরাজয় নয়, এ যেন নিদারুণ এক পরিণতি, অসহনীয় লজ্জা! তবে ডাচদেরকে যোগ্য সম্মান দিতে হবে। পল ভ্যান মিকেরেন, বাস ডি লিড, লোগান ভ্যান বিকরা বাংলাদেশি ব্যাটারদের রীতিমত নাচিয়ে ছেড়েছেন, সেই সাথে দ্বিতীয় জয় দিয়ে তারা প্রমাণ করে দিল কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে তারা বিশ্বকাপে।
তবে বাংলাদেশ আসলে কোন বলে বিশ্বকাপে এসেছে তার প্রমাণ তো দূরে থাক, ইনিংসের শুরু থেকে সেই প্রশ্ন আরও জোরদার করেই চলল। অদ্ভুতড়ে এক রিভার্স করতে গিয়ে শুরুতে ব্যাট-প্যাড হয়ে উইকেট কিপার স্কট এডওয়ার্ডসকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে আরিয়ান দত্তের শিকার হয়ে লিটন দাস ফিরলে লোগান ভ্যান বিকের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৫ রানে থাকা তানজিদ হাসান তামিম। দুর্বিষহ এক বিশ্বকাপের ধারা ধরে রেখে ভ্যান মিকেরেনের প্রথম ওভারেই থামলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
সেখান থেকেই ভ্যান মিকেরেন যেন হয়ে গেলেন যম। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তার বলে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৫ রানে ফিরলে এতক্ষণ হালকা প্রতিরোধ গড়ে তোলা মেহেদী হাসান মিরাজ থামন ৪০ বলে ৩৫ রান শেষে ডি লিডের বলে সেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েই। পরের ওভারে ফিরেই মুশফিককে মাত্র ১ রানে বাড়ির পথ দেখালেন স্টাম্প উপড়ে ফেলা ভ্যান মিকেরেন।
৭০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে আশা প্রায় শেষ তখনই। তবুও মাহেদী হাসানকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ তিলে তিলে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। তাড়াহুড়ো করে এক সিঙ্গেল বের করতে গিয়ে ১৭ রানে মাহেদী রান আউট হয়ে ফিরলে সেটাও বেশিক্ষণ টেকেনি। ৫ রানের মধ্যেই ৪১ বলে ২০ রানের ইনিংস শেষে মাহমুদউল্লাহ ডি লিডের শিকার হয়ে ফিরলে শেষদিকে মোস্তাফিজের ২০ রান ও তাসকিনে ১১ রানে ব্যবধানটাই কমিয়েছে। ব্যবধান অবশ্য যা থেকেছে, এরকম হারে লজ্জায় মুখ লুকানো ছাড়া বাংলাদেশের গতি নেই।
এর আগে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তটা যে তাদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে সেটা প্রমাণ করতে বাংলাদেশ শুরু থেকেই চেপে বসেছিল। দ্বিতীয় ওভারেই তাসকিনের বল আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ফেরেন বিক্রমজিত সিং। পরের ওভারেই শরিফুলের বল পয়েন্টের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রথম স্লিপের দিকে উঠিয়ে দিলে তানজিদ তামিমের দারুণ ক্যাচে থামেন আরেক ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউড। তবে এরপর থেকেই ডাচরা নিজেদের খুঁজে পেয়ে পাওয়ারপ্লের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। ওয়েজলি ব্যারেসি ও কলিন অ্যাকারম্যান নিয়মিত বাউন্ডারি তুলে নিতে থাকলে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৪৭ রান তুলে ফেলে তারা।
তবে পাওয়ারপ্লের পরেই দারুণ খেলতে থাকা ব্যারেসির লাগাম টেনে ধরেন মোস্তাফিজুর রহমান। সমান বলে ৪১ রান করে ব্যারেসি থামলে উইকেটের মিছিলে যোগ দেন সাকিব আল হাসান, ফেরান ১৫ রানে থাকা অ্যাকারম্যানকে। ডাচদের অল্প রানেই গুটিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন যখনই বুনতে শুরু করে বাংলাদেশ, তখনই আবারও বাধ সাধেন সেই ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। সাথে বাস ডি লিড সঙ্গ দিলেও কোনও অবস্থাতেই সুবিধা করতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৩২ বলে ১৭ রান শেষে তাসকিনের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি ডাচদের আসল প্রতিরোধটাই এডওয়ার্ডস সেখান থেকেই গড়ে তোলেন সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটকে সঙ্গী করে। তবে দুজনেই ধন্যবাদ জানাতে পারেন বাংলাদেশের ফিল্ডিংকে। এডওয়ার্ডস তো মোস্তাফিজের করা ১৬-তম ওভারে দুবার জীবন পেয়েছিলেন; একবার গালিতে লিটনের ক্যাচ মিসে আরেকবার মুশফিকের বল লুফে নিতে না পারায়। ৭৮ বলে এরপর এডওয়ার্ডস নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ফিফটি পেয়ে গেলে অন্যদিকে এবার মিরাজ জীবন দেন এঙ্গেলব্রেখটকে। কিছুক্ষণ পরে পয়েন্টে সেই মিরাজের দারুণ ক্যাচেই মোস্তাফিজের শিকার হয়ে থামেন ৮৯ বলে ৬৮ রান করা ডাচ অধিনায়ক।
মাহেদীর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ৬১ বলে ৩৫ রানে এঙ্গেলব্রেখটও ফেরেন কিছুক্ষণ পরে। ডাচদের প্রতিরোধ যখন আরেকবার গুড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তখনই আশার আলো হয়ে এলেন লোগান ভ্যান বিক। শেষ তিন ওভারে ডাচরা তিন উইকেট হারালেও তুলে নেয় ৩৬ রান। মাহেদীর করা শেষ ওভারে দুই চার, এক ছয়ে ভ্যান বিক ১৬ বলে ২৩* রানে টিকে থাকলে ডাচরা পেয়ে যায় লড়াইয়ের রসদ।