শামি, বুমরাহর তোপে ইংলিশ দুর্গের পতন
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, ভারত-ইংল্যান্ড (টস-ইংল্যান্ড/বোলিং)
ভারত - ২২৯/৯, ৫০ ওভার (রোহিত ৮৭, সূর্যকুমার ৪৯, রাহুল ৩৯, উইলি ৩/৪৫, ওকস ২/৩৩, রশিদ ২/৩৫)
ইংল্যান্ড - ১২৯, ৩৪.৪ ওভার (লিভিংস্টোন ২৭, উইলি ১৬, মালান ১৬, শামি ৪/২২, বুমরাহ ৩/৩২, কুলদীপ ২/২৪ )
ফলাফল- ভারত ১০০ রানে জয়ী
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নাস্তানাবুদ করে টানা ষষ্ঠ জয় পেল ভারত। ইংল্যান্ডকে দেখে যেন মনেই হল না ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। মোহাম্মদ শামি আরও একবার জ্বলে ওঠার পাশাপাশি, জাসপ্রিত বুমরাহ, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজারা নিজেদের মেলে ধরলে পাত্তাই পায়নি ইংল্যান্ড।
২৩০ রানের লক্ষ্যে শুরুটা ইংল্যান্ড করেছিল নিজেদের ভঙ্গিতেই। ৩০ রানে ডাভিড মালানকে বুমরাহ ফিরিয়ে যে শুরুটা করে দিলেন সেখান থেকেই শুরু হয়ে যায় ইংল্যান্ডের বিপর্যয়। পরের বলেই জো রুট এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরলে এরপর শুরু হয় শামির জাদু। দুর্দান্ত এক সিম-আপ ডেলিভারিতে বেন স্টোকসের স্টাম্প উপড়ে ফেলার পর জনি বেইরস্টোর ভাগ্যেও জোটান একই পরিণতি। ৩০-০ থেকে মুহূর্তের মধ্যেই ৩৭-৪ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ড। মঈন আলীকে নিয়ে এরপর জস বাটলার চেষ্টা করলেও সেটা হয় ক্ষণস্থায়ী। কুলদীপের দুর্দান্ত এক ভেতরে ঢোকা বলে বাটলার যে স্টাম্প খুইয়ে ফিরলেন তাতে বাঁকটা খেয়েছে ৭.২ ডিগ্রি!
ইংলিশদের দম নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে শামিকে আক্রমণে ফেরানো হলে আবারও তিনি ফল এনে দেন মঈনকে থামিয়ে। জাদেজার স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে এরপর ক্রিস ওকস থামলে শেষ আশার স্তম্ভ হয়ে থাকা লিয়াম লিভিংস্টোন ২৭ রানে কুলদীপের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরে। টিমটিম করে জ্বলতে থাকা ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপের আশার প্রদীপটাও যেন সেখানে নিভে যায়। আক্রমণে ফিরে আবারও শামি শিকারি হয়ে উঠলে অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া ইংল্যান্ডের আর কোনও উপায় ছিল না।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। পাওয়ারপ্লেতে আসরে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও এদিন ইংল্যান্ডকে প্রথম উইকেটের স্বাদ দেন ক্রিস ওকস। চতুর্থ ওভারেই শুবমান গিলের স্টাম্প উপড়ে ফেললে এরপর ডেভিড উইলি দেখান বাঁহাতের জাদু। ৮ বলেও রানের খাতা খুলতে না পেরে নবম বলে উইলির শিকার হয়ে ভিরাট কোহলি ফিরলে পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই শ্রেয়াস আইয়ারকেও ফেরান এই বাঁহাতি পেসার। তবে লোকেশ রাহুলকে নিয়ে এরপর দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে বুঝে নেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
টুর্নামেন্টে আরও একবার ফিফটিও পেয়ে যান রোহিত, ৬৬ বলে। ১৬ ওভারে যেখানে ভারতের রান ছিল ৫৫ সেখানে ২৫ ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ করে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় ভারত। রাহুল প্রান্ত বদলে মনোযোগী হলে রোহিত ফেরেন বাউন্ডারি বের করার ধারায়। গড়ে উঠতে থাকা জুটিতে তখনই আরও একবার বাধ সাধেন উইলি। ৯১ রানে জুটি ভাঙেন ৫৮ বলে ৩৯ রানে থাকা রাহুলকে থামিয়ে। তা সত্ত্বেও রোহিত যখন আরও একটি বিশ্বকাপ সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আদিল রশিদ আবির্ভূত হন হন্তারকের ভুমিকায়। লক্ষ্ণৌর কঠিন উইকেটে যখন স্পিনারদের ওপরেও চড়াও হতে যাচ্ছিলেন রোহিত; তখনই রশিদের শিকার হয়ে ১০১ বলে ৮৭ রানের দারুণ ইনিংস শেষে থামতে হয় তাকে।
ভারতের ইনিংসে আরেকটি বিপর্যয় নামতে পারত সেখান থেকেই। রবীন্দ্র জাদেজাও কিছুক্ষণ পরে রশিদের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লেও ভারতের ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন সূর্যকুমার যাদব। শেষ দশ ওভারে ভারত তুলতে পেরেছে মোটে ৪৯ রান। তবে ১৮৩ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে বসার পর সূর্যকুমারের ৪৭ বলে ৪৯ রানের ইনিংসটা না এলে হয়ত দুইশো পেরুনোই মুশকিল হয়ে যেত। শুধু সূর্যকুমার নয়, একবার জীবন পেয়ে জাসপ্রিত বুমরাহও খেলেছেন ১৬ রানের কার্যকর ইনিংস। লক্ষ্ণৌর মন্থর উইকেটে বোলারদের কাজ করার মত সংগ্রহ সেখানেই পেয়ে গিয়েছে ভারত।