প্রোটিয়া-ফায়ারের লেলিহান শিখায় এবার দগ্ধ নিউজিল্যান্ড
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা (টস-নিউজিল্যান্ড/বোলিং)
দক্ষিণ আফ্রিকা - ৩৫৭/৪, ৫০ ওভার (ভ্যান ডার ডুসেন ১৩৩, ডি কক ১১৪, মিলার ৫৩, সাউদি ২/৭৭, বোল্ট ১/৪৯, নিশাম ১/৬৯)
নিউজিল্যান্ড - ১৬৭, ৩৫.৩ ওভার (ফিলিপস ৬০, ইয়াং ৩৩, মিচেল ২৪, মহারাজ ৪/৪৬, ইয়ানসেন ৩/৩১, কোটজিয়া ২/৪১)
ফলাফল - দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯০ রানে জয়ী
নিউজিল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকা আরও একবার বার্তা দিল এবার নিজেদের তকমাটা ঝেড়ে ফেলার। দারুণ শুরু করা নিউজিল্যান্ডকে সেমির শঙ্কায় ফেলে দিয়ে রান পাহাড়ে চাপা দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দেখাল একটা পূর্ণাঙ্গ দলীয় পারফরম্যান্সের নমুনা।
৩৫৮ রানের লক্ষ্য বড় হলেও উইকেট বিবেচনায় অসম্ভব নয়। তবে ম্যাচের কোনও পর্যায়েই কিউইদের সেরকম ভাবার কোনও জায়গায় দেয়নি প্রোটিয়ারা। প্রথম পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ডেভন কনওয়ে ও রাচীন রবীন্দ্র ফিরলে পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই থামন ৩৩ রানে থাকা উইল ইয়াং। ইয়ানসেনের তোলা প্রশ্নের উত্তর যেমন প্রথম দুজন দিতে পারেননি, আক্রমণে কোটজিয়া এলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ইয়াংও তেমন শুরুটা কাজে লাগাতে পারেননি। ঠিক তেমনটাই হয়েছে মিচেলের ক্ষেত্রেও; পেসারদের তিনি সাম্লেছেন ঠিকই, যেটা পারেননি অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ধুকে ধুকে ৪ রানে রাবাদার শিকার হয়ে তিনি ফিরেছিলেন।
এরপরের গল্পটা শুধুই মহারাজের। নিউজিল্যান্ডের অদ্ভুত রকমের অবিবেচক ব্যাটিং সেটার জন্য দায়ী হলেও মহারাজের কৃতিত্ব কোনও অংশেই কম নেই। থিতু হয়ে যাওয়া মিচেল ২৪ রানে তার শিকার হয়ে ফিরলে একে একে স্যান্টনার, নিশাম, বোল্টদের ফিরিয়ে কফিনে পেরেক ঠোকার কাজটা সেরেই রেখেছিলেন। তবে তাকে টানা তিন বাউন্ডারি মেরে একাই লড়ে যাওয়া ফিলিপস ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন ৪৬ বলে। তবে ব্যবধানটাই সেই অর্থে কমাতে পারেননি কোটজিয়ার আঘাতে ৬০ রানে থেমে। ১৯০ রানের বিশাল জয়ে রান রেটেও তাই নিউজিল্যান্ডকে বড় ধাক্কা দিয়েছে প্রোটিয়ারা।
অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা সেই অর্থে ঝড়ো হয়নি; বলা ভাল হতে দেননি ট্রেন্ট বোল্ট। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলতে পেরেছিল ৪৩ রান। বোল্টের দুর্দান্ত বোলিংয়ের শিকার হয়ে ২৪ রানে টেম্বা বাভুমা তো ফিরেছিলেন বটেই, সুবিধা করতে পারছিলেন না কুইন্টন ডি ককও। উইকেটে আসা রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে নিয়ে অবশ্য দ্রুতই পথে ফেরেন ডি কক; দলীয় শতরান পূর্ণ করে ফেলেন ২০.১ ওভারেই।
এর পরেই ডি কক ৬২ বলে ফিফটি পেয়ে গেলে ডুসেন ফিফটি পান ৬১ বলে। দুই স্পিনার স্যান্টনার ও ফিলিপস মাঝের ওভারগুলোয় তাদের লাগামছাড়া হতে না দিলেও ধৈর্য ধরে আগাতে থাকেন এই জুটি। তবে সেই যে দশম ওভারে ডি ককের কঠিন এক ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি ফিলিপস তার খেসারত তাদের ঠিকই দিতে হল। আসরে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি ডি কক পেয়ে যান ১০৩ বলে। একাদশে ফেরা সাউদির ওপর দুজনেই ইতিমধ্যে চড়াও হলে তাকেই লক্ষ্য বানিয়ে খেলতে গেলেই বিপদ ঘটে ডি ককের; ক্যাচ নেন সেই ফিলিপস। সাউদির কিছুটা খাটো লেংথের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ১১৬ বলে ডি কক থামলেও ডুসেন নিজের কাজ চালিয়ে যান; ১০১ বলে পেয়ে যান আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
ডুসেনের সাথে যোগ দিয়ে ডেভিড মিলার ততক্ষণে শুরু করে দিয়েছেন ঝড়। দুজনের মুহুর্মুহু আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত কিউই বোলাররা কিছুটা দম ফেলার সুযোগ পায় সাউদির স্লোয়ারে স্টাম্প খুইয়ে ১১৮ বলে ১৩৩ রানে ডুসেন থামলে। স্বস্তি অতটুকুই; মিলারও ২৯ বলে ফিফটি পেলে রানের ফোয়ারা থামেনি। ইনিংস শেষের আগের বলে নিশামের শিকার হয়ে ৩০ বলে ৫৩ রানে মিলার থামলেও ওই ওভারে আসে ১৮ রান; আর শেষ দশ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা পায় ১১৪ রান!