• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    নায়ক কোহলি, পার্শ্বনায়ক জাদেজায় ভারতের আটে আট

    নায়ক কোহলি, পার্শ্বনায়ক জাদেজায় ভারতের আটে আট    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা (টস-ভারত/ব্যাটিং)
    ভারত - ৩২৬/৫, ৫০ ওভার (কোহলি ১০১*, শ্রেয়াস ৭৭, রোহিত ৪০, মহারাজ ১/৩০, রাবাদা ১/৪৮, এনগিডি ১/৬৩)
    দক্ষিণ আফ্রিকা - ৮৩, ২৭.১ ওভার (ইয়ানসেন ১৪, ডুসেন ১৩, মিলার ১১, জাদেজা ৫/৩৩, কুলদীপ ২/৭, শামি ২/১৮)
    ফলাফল - ভারত ২৪৩ রানে জয়ী


     

    পয়েন্ট তালিকার প্রথম দুই দলের ম্যাচটা রোমাঞ্চ ছড়াবে এমনটাই আশা থাকলেও একেবারেই একপেশে বানিয়ে ছাড়ল স্বাগতিকরা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে রীতিমত অপমান করল ভারত ইডেন গার্ডেনসের কঠিন পিচে। জন্মদিনে ভিরাট কোহলির রেকর্ড ৪৯-তম সেঞ্চুরিতে শচীনকে ছোঁয়ার দিনে পরের পর্বে নায়ক রবীন্দ্র জাদেজা; তাতেই ভারত পেল টানা অষ্টম জয়।

    শুরুটা করে দিয়েছিলেন সিরাজ ডি ককের স্টাম্প উপড়ে। সেখান থেকে থামাথামির কোনও লক্ষণ দেখায়নি ভারতের বোলাররা। প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই জাদেজাকে আক্রমণে আনা হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অধিনায়ককে ফেরান তিনি। দারুণ সেই ওভারে বাভুমার স্টাম্প উপড়ে ফেলার পর আর পেছন ফিরে তাকাননি জাদেজা। দশম ওভারে মার্করামকে শামি এসে ফেরালে একটা ব্যাটিং বিপর্যয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল।

    রান তাড়ায় বারবারই শঙ্কার মুখে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার হাল এই ম্যাচেও হল তাই। ক্লাসেনকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেললেন জাদেজা, কিছুক্ষণ পর সেই একই ফাঁদ পেতে ডুসেনের বিপক্ষে সফল শামি। দুঃসময়ে আড়াআড়ি ব্যাটে শট খেলে এরপর জাদেজার কাছে স্টাম্প খুইয়ে মিলার ফিরলে প্রতিরোধ গড়া ইয়ানসেনের ভাগ্যেও একই পরিণতি লিখে ফেলেন জাদেজা। পরে রাবাদাকে ফিরতি ক্যাচে ফিরিয়ে জাদেজা আসরে নিজের প্রথম ৫-উইকেট পূর্ণ করার আগে পিছে কুলদীপ উইকেটের মিছিলে যোগ দিলে শতরানের নিচেই গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা।

    এর আগে ইয়ানসেন-এনগিডিদের একহাত নিয়ে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ঝড়ো শুরু করেছিলেন, পিছিয়ে ছিলেন না শুবমান গিল। তবে রোহিতের যম কাগিসো রাবাদাকে আক্রমণে আনা হলেও ওয়ানডেতে পঞ্চমবারের মোট তার শিকার হয়ে থামেন ভারত অধিনায়ক। বৃত্তের ওপর দিয়ে রাবাদাকে উড়িয়ে মারতে গেলে মিড অফে থাকা বাভুমার হাতে গুলির গতিতে বল চলে গেলেও রোহিতের তুলে দেওয়া ক্যাচ লুফে নেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক, রোহিত থামেন ২৪ বলে ৪০ রান শেষে মাত্র ষষ্ঠ ওভারেই। তবে উইকেটে এসে কোহলি রানের চাকা সচল রাখলে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ভারত পেয়ে যায় ৯১ রান। পাওয়ারপ্লেটা শেষ হওয়ার পরেই থামতে হয় গিলকেও। তাতে অবশ্য কাউকেই দুষবেন না তিনি, ইডেনে যেন যাদুর কাঠি দিয়ে বলটা করেছিলেন মহারাজ। দুর্দান্ত এক অফ ব্রেকে গিলকে সামনে টেনে তার স্টাম্প উপড়ে মহারাজ তাকে থামেন ২৩ রানে। মহারাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে এরপরেও কোহলি ও উইকেটে নবাগত আইয়ার সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না; দলীয় শতরান তাই এসেছিল ১৪-তম ওভারে গিয়ে, পরের পঞ্চাশ রান তুলতে লেগে যায় আরও ১২ ওভার!

    এরই মাঝে ৬৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করে জন্মদিনে সেঞ্চুরির জন্য নিজেকে শানিয়ে নিচ্ছিলেন কোহলি। কোহলির ফিফটির পরপরই ফর্মে ফেরা শ্রেয়াসও ফিফটি পেয়ে যান ৬৪ বলে। তবে গিয়ার পালটে ৩৩.১ ওভারে দলীয় দুইশো পূর্ণ হলে সেঞ্চুরি লক্ষ্য বানিয়ে আগাচ্ছিলেন শ্রেয়াস। তাতেই লক্ষ্যভ্রষ্ট শ্রেয়াস এনগিডির স্লোয়ার পড়তে না পেরে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৮৭ বলে ৭৭ রানে। ইয়ানসেনের শিকার হয়ে এরপর মাত্র ৮ রানেই রাহুল ফিরলে ক্ষণিকের জন্য পথ হারায় ভারত। উইকেটে এসে সূর্যকুমার প্রথম ওভারটা সুবিধা করতে না পারলেও ইয়ানসেনের করা ৪৫-তম ওভারে কোহলিকে সঙ্গী করে তোলেন ১৬ রান। শামসির পরের ওভারেই অবশ্য উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ১৪ বলে ২২ রানে তার ক্যামিও শেষ হলে অপেক্ষা ছিল শুধুই কোহলির সেঞ্চুরির জন্য।

    সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এলো রাবাদার করা ৪৯-তম ওভারে। ব্যাকফুট পাঞ্চে কাভারে বল ঠেলে সিঙ্গেল বের করেই ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারের পাশে নাম লেখান কোহলি। ১১৯ বলে কোহলি সেঞ্চুরি পূর্ণ করলে শেষ ওভারে ইয়ানসেনকে একহাত নিয়ে জাদেজা দুই ছয়, এক চারে নেন ১৭ রান। ১২১ বলে ১০১* রানে থেকে কোহলি ও ১৫ বলে ২৯* রানে শেষ করে জাদেজা দলকে এনে দেন ৩২৬ রানের সংগ্রহ।