• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    অলরাউন্ড সাকিব, শান্তর নব্বইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আশা জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ

    অলরাউন্ড সাকিব, শান্তর নব্বইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আশা জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
    শ্রীলঙ্কা - ২৭৯, ৪৯.৩ ওভার (আসালাঙ্কা ১০৮, সাদিরা ৪১, নিসাঙ্কা ৪১, তানজিম সাকিব ৩/৮০, শরিফুল ২/৫২, সাকিব  ২/৫৭)
    বাংলাদেশ - ২৮২/৭, ৪১.১ ওভার (শান্ত ৯০, সাকিব ৮২, লিটন ২৩, মাদুশাঙ্কা ৩/৬৯, ম্যাথিউজ ২/৩৫, থিকশানা ২/৪৪)
    ফলাফল - বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী


    হারের বৃত্ত থেকে অবশেষে বের হল বাংলাদেশ। এই বছরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ফর্মে ফেরার দিনে শ্রীলঙ্কার সেমির স্বপ্নও ধূলিসাৎ করে নিজেদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।


    ২৮০ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। দুই চারে ইনিংস শুরু করলেও ৯ রানে দিলশান মাদুশাঙ্কার শিকার হয়ে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম। একবার জীবন পেয়ে পরপর দারুণ দুই ছয় মেরে পায়ে আঘাত পেলে একটু পরেই মাদুশাঙ্কার দারুণ ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ হয়ে ২২ রানে ফেরেন লিটন। বিপদ ঘটতে পারত আরও। তবে ম্যাথিউজকে আক্রমণ করতে গিয়ে সদ্য উইকেটে আসা সাকিব শর্ট কাভারে ক্যাচ তুলে দিলেও আসালাঙ্কার বদান্যতায় জীবন পান ৭ রানে। সেখান থেকে শান্তকে সঙ্গী করে ইনিংস মেরামতের কাজ করেন সাকিব। তার বিপক্ষে বাউন্সারের পরিকল্পনা ভেস্তে রাজিথাকে ফাইন লেগ অঞ্চল দিয়ে দারুণ এক ছয় মেরে শ্রীলঙ্কাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেন সাকিব। সেখান থেকেই ম্যাচের পাল্লা নিজেদের দিকে ভারী করে সাকিব কাজটা সহজ করে দিয়ে স্কয়্যারের সামনে দিয়ে দারুণ সব বাউন্ডারি বের করতে থাকেন শান্ত। ১৭.১ ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ হলে ৫৮ বলে ফিফটি পেয়ে যান শান্ত। এর কিছুক্ষণ পরেই দুজনের ব্যাটে আসরে বাংলাদেশের প্রথম শতরানের জুটি এলে আসরে নিজের প্রথম ফিফটিটাও সাকিব পেয়ে যান ৪৭ বলে।


    দুজনেই ফিফটির পর চড়াও হন শ্রীলঙ্কা বোলারদের ওপর। মাত্র ২৯.৫ ওভারেই দলীয় দুইশো পূর্ণ করে পেসারদের একেবারেই নিষ্ক্রিয় করে দেন দুজনে, বিশেষ করে সাকিব। তখনই অধিনায়ক মেন্ডিস নতুন করে ভেবে ম্যাথিউজকে আক্রমণে আনলেই কাজে লেগে যায় ফাটকাটা। যেই ম্যাথিউজের বলে আসালাঙ্কার ভুলে জীবন পেয়েছিলেন সাকিব সেই ম্যাথিউজের স্লোয়ারেই একই জায়গায় একই ব্যক্তিকে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৬৫ বলে ৮২ রানের দারুণ ইনিংস শেষে থামেন সাকিব। ম্যাচের রঙ হুট করেই বদলে ম্যাথিউজ এরপর থামান ১০১ বলে ৯০ রানে থাকা শান্তকেও। উইকেটে এসেই মাহমুদউল্লাহ দ্রুত ম্যাচ শেষ করার চেষ্টা করলে অন্য প্রান্তে থাকা মুশফিক মাদুশাঙ্কার কাছে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ১০ রানে। কিছুক্ষণ পরে থিকশানার প্রায় ইয়র্কারে একই পরিণতি হয় ২৩ বলে ২২ রান করা মাহমুদউল্লাহর। জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকতে থিকশানাকে তুলে মারতে গিয়ে মিরাজ ৩ রানে ফিরলে জাগে শঙ্কা। তবে পেসারদের দারুণ দুই ছয় মারা হৃদয়ের পর তানজিম হাসান সাকিবও বাউন্ডারি বের করলে জয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ। দিল্লিতে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড; সেই সাথে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডে তাদেরও সেমির দৌড় থেকে ছিটকে দিয়েছে বাংলাদেশ।


    এর আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল মনমতই। প্রথম ওভারেই শরিফুল ফেরান পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই নিষ্প্রভ থাকা কুশল পেরেরাকে। তবে সেই উইকেটের কৃতিত্ব বলতে গেলে মুশফিকেরই বেশি। যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রথম স্লিপে থাকা শান্তর মুখের সামনে থেকে ক্যাচটা লুফে নিলেন তাতে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ক্যাচের দাবী মুশফিক করতেই পারেন। অবশ্য সেই উইকেটের তোয়াক্কা না করে অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে সঙ্গী করে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে দলকে ৫২ রান এনে দেন পাথুম নিসাঙ্কা। মেন্ডিস খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও পাওয়ারপ্লের সর্বোচ্চটাই নিয়ে দারুণ খেলতে থাকেন নিসাঙ্কা। মেন্ডিস অন্য দিকে গেরো খুলতে সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে শরিফুলকে সহজ ক্যাচ তুলে ফেরেন ৩০ বলে ১৯ রান করে।


    ঠিক পরের ওভারেই বিশ্বকাপে প্রথম নামা তানজিম হাসান সাকিব উপড়ে ফেলেন ৩৬ বলে ৪১ রানে থাকা নিসাঙ্কার স্টাম্প। স্টাম্পে বল ডেকে নিসাঙ্কা ফিরলেও এরপর সাদিরা সামারাভিক্রমা আরও একবার বাংলাদেশের বিপক্ষে জ্বলে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। আসালাঙ্কাকে সঙ্গী করে ১৭.৪ ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ করে দিল্লির উইকেটের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাদিরা। তবে সেই ৪১ রানে থাকার সময় তিনিও ফেরেন সাকিবের শিকার হয়ে। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করলেও সাকিবের গতির তারতম্যে ধরা খেয়ে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ফেরেন তিনি। ম্যাচের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটে এরপরেই। মাঠে ম্যাথিউজ এমন এক হেলমেট নিয়ে নামেন যেটার স্ট্র্যাপটাই ভাঙ্গা। মাঠের সময় যখন ৩.৪৯ তখন ম্যথিউজ পিচে আসায় সাকিব বল নিয়ে প্রস্তুত থাকলেও এরপর ৩.৫৪ বেজে গেলেও গার্ডই নিতে পারেননি ম্যাথিউজ! অপেক্ষা তখনও সেই হেলমেট আসার। সেই হিসাবেই সাকিব আবেদন করেন টাইমড আউটের। এবারের বিশ্বকাপের নিয়মানুযায়ী আগের ব্যাটার আউট হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটার উইকেটে এসে গার্ড নিতে হবে। ম্যাথিউজকে আম্পায়াররা ৫ মিনিট সময় দিলেও তিনি তা করতে ব্যর্থ হলে সাকিবদের আবেদন সফল হয়ে যায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে তাতেই প্রথমবার টাইমড আউট হন ম্যাথিউজ।

    হুট করেই লঙ্কানরা বিপদে পড়ে গেলেও ৫৬ বলে দারুণ এক ফিফটি পূর্ণ করে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নিয়ে যান আসালাঙ্কা। সাথে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা যোগ্য সঙ্গ দিলে ৩৬.২ ওভারেই দলীয় দুইশো পূর্ণ করে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল লঙ্কানরা। তবে এরপএর ওভারেই মিরাজের বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ৩৬ বলে ৩৪ রানে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ফেরেন ধনঞ্জয়া। সেখান থেকে মরণ কামড় দেওয়ার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ তা কাজে লাগাতে না পারায় মাহিশ থিকশানা শরিফুলের বাউন্সারে ফেরার আগে খেলে ফেলেন ১৭ রানের ইনিংস। তাতেই ১০১ বলে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি পেয়ে যান আসালাঙ্কা। ৪৯-তম ওভারে তানজিম সাকিবের বাইরের এক বল তাড়া করে ডিপ পয়েন্টে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১০৫ বলে ১০৮ রানের ইনিংসে লঙ্কানদের লড়াইয়ের রসদ এনে দিয়েই ফিরেছেন আসালাঙ্কা। ওই ওভারেই পরে রাজিথাকে ফিরিয়ে বিশ্বকাপ অভিষেকে ৮০ রান গুনলেও তিন উইকেট পেয়ে যান তানজিম সাকিব। শেষ ওভারে চামিরা রান আউট হয়ে ফিরলে তাই শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ২৭৯ রানে। ম্যাচ শেষদিকে নাটকীয় হয়ে উঠলেও সেই সংগ্রহ টপকে বাংলাদেশ পেয়েছে স্বস্তির জয়।