বড় জয়ে সেমির রাস্তায় এক পা বাড়িয়ে রাখল নিউজিল্যান্ড
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা (টস-নিউজিল্যান্ড/ফিল্ডিং)
শ্রীলঙ্কা - ১৭১, ৪৬.৪ ওভার (পেরেরা ৫১, থিকশানা ৩৮*, ধনঞ্জয়া ১৯, বোল্ট ৩/৩৭, রবীন্দ্র ২/২১, স্যান্টনার ২/২২)
নিউজিল্যান্ড - ১৭২/৫, ২৩.২ ওভার (কনওয়ে ৪৫, মিচেল ৪৩, রবীন্দ্র ৪২, ম্যাথিউজ ২/২৯)
ফলাফল - নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী
শ্রীলঙ্কার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সম্ভাবনা প্রায় নিঃশেষ করে নিউজিল্যান্ড সেমি-ফাইনালে দিয়ে রাখল এক পা। ১৬০ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের সেমি-ফাইনালের স্বপ্নও প্রায় শেষ করে দিয়েই দাপুটে জয় পেয়েছে কিউইরা।
এই বেঙ্গালুরুতেই ৪০০+ রান করে নিজেদের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, বৃষ্টি আর ফখরের বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে নিজেদের খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। টানা চার ম্যাচ হেরে বসা কিউইদের মাথার ওপর একই মাঠে আরও একবার বৃষ্টি চোখ রাঙালে নিজেদের কাঁধেই সব দায়িত্ব তুলে নিয়ে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে তারা। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে ৭৩ রান তুলে ফেলা কিউইদের ৮৬ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন চামিরা। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে কনওয়ে ৪২ বলে ৪৫ রান শেষে থামলে পরের ওভারে মিড অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৩৪ বলে ৪২ রানে থামেন রাচিন রবীন্দ্র।
তবে উইকেটে এসেই রানের চাকা সচল রেখে শ্রীলঙ্কাকে অন্যকিছু ভাবার সুযোগ দেননি ড্যারিল মিচেল। মাঝে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের বল স্টাম্পে ডেকে কেন উইলিয়ামসন ফিরলেও তাই খুব একটা অসুবিধা হয়নি তাদের। তবে জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে তাড়াহুড়ো করে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসে তারা। মিচেলের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে চ্যাপম্যান উইকেট দিয়ে ফিরলে ম্যাথিউজের স্লোয়ারে ডিপ কাভার পয়েন্টে বল ভাসিয়ে ৩১ বলে ৪৩ রানে থামেন মিচেল। ১০ বলে ১৭* রানে দলের জয় নিশ্চিত করেই এরপর মাঠ ছাড়েন ফিলিপস।
অথচ নিউজিল্যান্ডের পেসারদের তুলোধোনা করে ঝড়ো শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা; করেছিলেন আসলে কুশল পেরেরা একাই। সাউদির করা দ্বিতীয় ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়েও ল্যাথামের অসাবধানতায় বেঁচে যান পেরেরা। অবশ্য তার পরের বলেই ওই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েই থামতে হয় নিসাঙ্কাকে। উন্মাদনার শুরু সেখান থেকেই। পঞ্চম ওভারে এসে বোল্ট হানেন জোড়া আঘাত; ফেরান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারভিক্রমাকে। কিন্তু অন্য প্রান্তে যেন পুরো অন্য উইকেটে ব্যাট করছিলেন পেরেরা। বোল্টের ৫০ বিশ্বকাপ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার সেই পরের ওভারেই সাউদিকে ১ ছয় ও ৩ চার মেরে ১৮ রান নেন পেরেরা। অকুতোভয় স্ট্রোকপ্লেতে ২২ বলেই ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন পেরেরা। ম্যাচে শ্রীলঙ্কার হাসি, আনন্দ ওটুকুই। নবম ওভারে আসালাঙ্কাকে বোল্ট এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললে তার পরের ওভারে ফার্গুসন এসে পেরেরা উন্মাদনা থামান। আকাশে বল ভাসিয়ে ২৮ বলে ৫১ রান শেষে পেরেরা থামলে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে শ্রীলঙ্কা তুলতে পারে ৭৪ রান; তবে ৫ উইকেট হারিয়ে ততক্ষণে ম্যাচ থেকে প্রায় বেরিয়েই গিয়েছে তারা।
ম্যাথিউজ-ধনঞ্জয়া জুটি এরপর পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা করে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে সেই চেষ্টা ভেস্তে দিতে মিডল ওভারে দারুণ রেকর্ড থাকা মিচেল স্যান্টনারকে আক্রমণে আনা হলে ১৭-তম ও ১৯-তম ওভারে যথাক্রমে ১৬ রানে ম্যাথিউজ ও ১৯ রানে ধনঞ্জয়াকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কার কফিন সাজিয়ে ফেলেন স্যান্টনার। পরে করুনাত্নেকে ফিরিয়ে ফার্গুসন দ্রুতই ইনিংস গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা করলে বাধ সাধেন থিকশানা। মাঝে চামিরার ক্যাচ পড়লেও তাকে ১ রানে ফিরিয়ে তেমন কোনও ক্ষতি হতে দেননি রবীন্দ্র। তবে মাদুশাঙ্কাকে নিয়ে থিকশানা নিউজিল্যান্ডের উদযাপনটা প্রলম্বিত করেছেন ভালভাবেই। ৩২.১ ওভারেই যেখানে ১২৮ রানে পড়েছিল নবম উইকেটে সেখানে অসামান্য প্রতিরোধ গড়ে রানটা বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটা থিকশানা করেছেন দারুণভাবে, সাথে মাদুশাঙ্কাও কম যাননি। দিনশেষে সেটা অবশ্য কাজে আসেনি। রান রেটেও নিজেদের বাঁচাতে পারেনি লঙ্কানরা। নিজেদের কাজটা কিউইরা এতটাই দাপটের সাথে সেরে রাখল যে শীর্ষ আটে থেকে শেষ করার জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার বড় জয়ের জন্য আশা করা ছাড়া আর কিছু বাকি নেই লঙ্কানদের।