ডুসেনের অপরাজিত ফিফটিতে প্রোটিয়াদের জয়
২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান (টস-আফগানিস্তান/ব্যাটিং)
আফগানিস্তান - ২৪৪, ৫০ ওভার (ওমরযাই ৯৭*, নূর ২৬, রহমত ২৬, কোটজিয়া ৪/৪৪, মহারাজ ২/২৫, এনগিডি ২/৬৯)
দক্ষিণ আফ্রিকা - ২৪৭/৫, ৪৭.৩ ওভার (ডুসেন ৭৬*, ডি কক ৪১, ফেলুকওয়াও ৩৯*, নবী ২/৩৫, রশিদ ২/৩৭)
ফলাফল - দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী
নিজেদের ব্যাটিংয়ের পরপরই সেমির দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার পরও নিজেদের পুরোটা দিয়েই লড়ল আফগানিস্তান। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার হিসেব কষা রান তাড়ার কাছে হার মেনেই শেষ হল তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা।
২৪৫ রানের লক্ষ্যটা আপাতদৃষ্টিতে অত বড় না হলেও আহমেদাবাদের উইকেটে একটু এদিক সেদিক হলেই ম্যাচের পাল্লা ঘুরে যেতে পারে প্রতিপক্ষের দিকে - এমনটা মাথায় নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক। বাভুমা অন্য প্রান্তে খোড়াতে থাকলে সেটার জন্যই হয়ত বাউন্ডারি বের করে খেলতে চেয়েছিলেন। মুজিবের বলে স্কয়্যার বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ২৮ বলে ২৩ রানে বাভুমা ফিরলেও প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৫৭ রাব পেয়ে যায় প্রোটিয়ারা। তবে আঁটসাঁট লাইনে বল করতে থাকা নবীকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ৪৭ বলে ৪১ রানে ডি কক ফিরলে বিপদে পড়তে পারত তারা।
মার্করামকে সঙ্গী বানিয়ে সেই বিপদ ঘটতে দেননি রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। আফগানরা নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়ে বারবার চেষ্টা করেছে ম্যাচে ফেরার। রশিদের দারুণ লেগ ব্রেক পড়তে না পেরে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ৩২ বলে ২৫ রানে ফিরেছিলেন মার্করাম; সেই রশিদের দারুণ গুগলিতে স্টাম্প খুইয়ে কিছুক্ষণ পরেই ফিরেছিলেন হাইনরিখ ক্লাসেন। তবে ৬৬ বলে ১৪-তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে জয়ের কক্ষপথেই দলকে রেখেছিলেন ডুসেন। সাথে যোগ দেওয়া ফেলুকওয়াও দেখে খেলছিলেন নবী-রশিদদের। মাঝে ইনজুরিতে বল করতে না পারা নাভিনকে আক্রমণে আনা হলে তাকে লক্ষ্য বানান ফেলুকওয়াও। ৪৮-তম ওভারে টানা ৬,৪,৬ মেরে জল ঢেলে দেন আফগানদের প্রচেষ্টায়।
ব্যাটিং নিয়ে শুরুটা এর আগেসেই অর্থে মনমত হয়নি আফগানদের। এক প্রান্তে ইব্রাহিম জাদরান রয়েসয়ে শুরু করলেও রহমানউল্লাহ গুরবাজ এদিন ছিলেন আপন ছন্দে। তবে নবম ওভারে কেশব মহারাজকে আক্রমণে আনা হলে তার প্রথম বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ২২ বলে ২৫ রানে থামেন গুরবাজ। তার পরের ওভারেই কোটজিয়ার জুতার স্পাইকে সমস্যা, ইব্রাহিমের পায়ের পাতা বরাবর করা বলে তার চোট পাওয়ার পর তৃতীয় বলে কিছুটা খাটো লেংথের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৩০ বলে ১৫ রানে থামেন এই ওপেনার। পাওয়ারপ্লের ঠিক পরের ওভারে এবার মহারাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি। রহমত শাহকে নিয়ে এরপর ওমরযাই ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করলেও এনগিডির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে থামেন রহমত। একাধিক বার চেষ্টা করে মিলার শেষমেশ বল তালুবন্দি করতে সমর্থ হলে ৪৬ বলে রহমত ২৬ রানে ফেরায় এরপর প্রায় একাই লড়ে যান ওমরযাই।
কোটজিয়া, এনগিডি, ফেলুকওয়াওদের তোপে ১১৬ রানেই আফগানরা ৬ উইকেট হারিয়ে বসলে রশিদ খানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার জন্যই খেলেন ওমরযাই। এরই মধ্যে ৭১ বলে তিনি ফিফটি পূর্ণ করলে আবারও খাটো লেংথের পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে রশিদকে থামান ফেলুকওয়াও। সেখান থেকে নূর আহমেদ অবশ্য ওমরযাইকে দিয়েছেন দারুণ সঙ্গ। ৪৭-তম ওভারে কোটজিয়ার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৩২ বলে ২৬ রান করে ওমরযাইকে গিয়ার পাল্টানোর সুযোগ করে দেন এই চায়নাম্যান। তার সুবাদে এনগিডির পরের ওভারে মুজিবকে সঙ্গী করে ২ ছয়, ১ চারে দুজনে মিলে নেন ২০ রান। সেখান থেকে সেঞ্চুরির সুবাস পেলেও শেষমেশ মিসের আক্ষেপেই পুড়তে হয়েছে ওমরযাইকে। রাবাদার এক দারুণ শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান এলে ১০৭ বলে ৯৭* রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে আফগান এই অলরাউন্ডারকে। সেই আক্ষেপটা ম্যাচ শেষে আরও বেড়েছে পরাজয়ে।