কেন ভেঙে দেয়া হলো শ্রীলংকান বোর্ড?
ক্রিকেট প্রশাসকদের সঙ্গে শ্রীলংকার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতবিরোধ লেগে ছিল গত কয়েক মাস ধরে। সেই বিরোধের জেরেই বিশ্বকাপে ব্যর্থতার দায় সামনে এনে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডকে বরখাস্ত করেছিল দেশটির ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ক্রিকেটে এমন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য আইসিসি নিষিদ্ধই করে বসেছে শ্রীলংকাকে। স্থগিত করা হয়েছে দেশটির সদস্যপদ। সরকারি কিংবা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের নিয়ম নেই ক্রিকেটে। তবে শ্রীলঙ্কায় কেন ব্যতিক্রম?
বিশ্বকাপে আশানূরূপ ফল আসেনি শ্রীলংকার। ৯ ম্যাচে জিতেছে মাত্র দুটি। ভারতের বিপক্ষে ৩০২ রানের বড় হারের পরই আসে সেই ঘোষণা। দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী রোশান রানাসিংহে আগের বোর্ড বিলুপ্ত ঘোষণা করে অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে সাত সদস্যের অন্তর্বতীকালীন এক কমিটি ঘোষণা করেন। ক্রীড়ামন্ত্রীর সেই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ০৭ নভেম্বর আদালতে পিটিশন করে লংকান বোর্ড করেন লংকান বোর্ডের সভাপতি শাম্মি সিলভা। পিটিশনের শুনানির পর আদালতের সিদ্ধান্তে নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত হয় দুই সপ্তাহের জন্য। দায়িত্ব নিতে গিয়েও তাই লংকান বোর্ডের কার্যালয় থেকে ফিরে আসেন বিশ্বকাপজয়ী লংকান অধিনায়ক রানাতুঙ্গা। আদালতের সিদ্ধান্তে দায়িত্বে পুনর্বহাল হয় আগের ক্রিকেট বোর্ড।
এরপর ১০ নভেম্বর আইসিসি থেকে লংকান বোর্ডের ওপর আসে নিষেধাজ্ঞা। বাতিল করা হয় সদস্যপদ। তবে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব আপাতত খুব বেশি পড়ছে না লংকার ক্রিকেটে। সামনে নেই কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এমনকি জানুয়ারি পর্যন্ত আইসিসির কোনো আর্থিক তহবিলও পাওয়ার কথা নেই তাদের।
মূলত ভবিষ্যতে যেন ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রমের ওপর সরকারি চাপ না আসে, সেজন্য লংকান বোর্ডের সভাপতি শাম্মি সিলভাই আইসিসিতে নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ জানিয়েছেন। বোর্ডের সহ-সভাপতিও বলেছেন আইসিসির পুর্ণ সদস্য হিসেবে তাদের কথা বলার জায়গা আছে, ‘পূর্ণ সদস্য হিসেবে আমাদের আইসিসিতে যাওয়ার অধিকার আছে।'
বলা চলে লংকান বোর্ড স্বেচ্ছায় নিষেধাজ্ঞা নিয়েছে। এতে অবশ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বে আসা বর্তমান বোর্ডেরই লাভ ।ভবিষ্যতে দেশের ক্রিকেট কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না, লংকান সরকারের কাছ থেকে এর শতভাগ নিশ্চয়তা পেলেই সদস্য পদ ফিরে পাবে শ্রীলংকা। নইলে জিম্বাবুয়ের মতো নিষিদ্ধ হতে হবে তাদের। ২০১৯ সালে একই কারণে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিল তারা।
অবশ্য এখানে বাগড়া দিচ্ছে ১৯৭৩ সালে প্রণীত শ্রীলংকার ক্রীড়া আইন। সেখান বলা আছে, দেশটির সব জাতীয় দলের অনুমোদন দিয়ে থাকেন ক্রীড়া মন্ত্রী। সেই আইন অনুসারেই শ্রীলংকা বোর্ডকে বরখাস্ত করেছিলেন রোশান রানাসিংহে।শ্রীলংকার ক্রীড়া কাঠামো তথা ক্রিকেট বোর্ডের কাঠামো বাকি সব দেশের তুলনায় তাই ভিন্নই। তবে বোর্ড কর্মকর্তারা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে এলেও গঠনতন্ত্রের শীর্ষে আছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। কিন্তু আইসিসিরও বিশেষ রোল আছে সেখানে। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে শ্রীলংকার ক্রিকেট বোর্ড।
দেশকে ক্রিকেটে ফেরাতে শ্রীলংকা আইনে বদল আনবে কিনা, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। কারণ ক্রিকেটের প্রশাসনিক কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপে আইসিসির অনুমতি নেই।