বিশ্বকাপ অভিষেকেই আলো ছড়ালেন যারা
গ্রুপ পর্ব শেষে বিশ্বকাপে নজর কাড়া খেলোয়াড়ের অভাব নেই। অনেক বড় নাম যেমন ছিলেন নিষ্প্রভ, তেমনি একেবারেই আনকোরা অনেকেই নজর কেড়েছেন। তবে আজ ঘুরে তাকানো যাক বিশ্বকাপ অভিষিক্তদের দিকে। চাপটা তাদের ওপর বরাবর বেশিই থাকে। অভিষেকেই বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরা তো আর মুখের কথা নয়! তবে পাদপ্রদীপের আলোয় ভড়কে না গিয়ে এবারের বিশ্ব মঞ্চতা নিজেদের করে নিয়েছেন বেশ কিছু অভিষিক্ত। আজকের প্রতিবেদনে দেখা যাক সেরকম কিছু খেলোয়াড়।
রাচিন রবীন্দ্র
ম্যাচ: ৯
রান: ৫৬৫
গড়: ৭০.৬২
স্ট্রাইক রেট: ১০৮.৪৪
সর্বোচ্চ: ১২৩*
সেঞ্চুরি: ৩
উইকেট: ৫
ইকোনমি রেট: ৫.৬৭
বিশ্বকাপের সেরা অভিষিক্তের নাম জিজ্ঞেস করা হলে বেশিরভাগের মুখেই হয়ত ঘুরবে এই নাম। অভিষেকেই পেয়েছেন তিন সেঞ্চুরি; রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারের নামের মিশ্রনে নামকরণটা যথার্থ হয়েছে সেটাই যেন প্রমাণ করে চলেছেন রাচিন। সেই সাথে বিশ্বকাপের এক আসরে ২৫ বছর বয়সের আগেই সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও কেড়ে নিয়েছেন শচীনের কাছ থেকে। বিশ্বকাপ অভিষেক সেঞ্চুরি দিয়ে মাতানো রাচিন শুধুই যে উইলিয়ামসনের অভাবটা পূরণ করেছেন কিছু ম্যাচে তাই নয়, উইকেট শিকারি হিসেবেও নিউজিল্যান্ড দলকে দিয়েছেন একটা বোলিং অপশন।
দিলশান মাদুশাঙ্কা
ম্যাচ: ৯
উইকেট: ২১
ইকোনমি রেট: ৬.৭০
সেরা বোলিং ফিগার: ৫/৮০
নেটে চামিন্দা ভাসের নজর কেড়ে শ্রীলঙ্কা দলে সুযোগ মিলেছিল; সেটা অবশ্য টি-টোয়েন্টির কথা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে মূল বোলারদের ইনজুরিতে সুযোগ পেয়ে যে এই বাঁহাতি পেসার আসরের বেশিরভাগ সময় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়ে থাকবেন সেটা ভাবেনি হয়ত কেউ; ভাবেননি কোচিং স্টাফের সদস্য খোদ মাহেলা জয়াবর্ধনে। সুইংয়ের পসরায় শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কার দুর্বিষহ বিশ্বকাপ যাত্রায় আশার আলো হয়ে ছিলেন মাদুশাঙ্কা।
আজমতউল্লাহ ওমরযাই
ম্যাচ: ৯
রান: ৩৫৩
গড়: ৭০.৬০
স্ট্রাইক রেট: ৯৭.৭২
সর্বোচ্চ: ৯৭*
উইকেট: ৭
ইকোনমি রেট: ৭.১০
আসরের সেরা অলরাউন্ডারদের কথা বললেই হয়ত আসবে এই আফগানের নাম। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটায় সেঞ্চুরির কাছে এসেও বঞ্চিত হয়ে ফিরতে হলেও সেঞ্চুরির চেয়ে কোনও অংশেই কম ছিল না সেই ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ইনিংসে হারতে না হলে মাঝে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করে জয়ের পথটাও হয়ত বাতলে দিতে পারতেন। আফগানদের বেশ কয়েক বছর ধরেই সেবা করে যাওয়ার বার্তাটা যেন এই বিশ্বকাপ দিয়েই দিয়ে গেলেন ওমরযাই।
মার্কো ইয়ানসেন
ম্যাচ: ৮
উইকেট: ১৭
ইকোনমি রেট: ৬.৪১
সেরা বোলিং ফিগার: ৩/৩১
রান: ১৫৭
গড়: ৩৯.২৫
স্ট্রাইক রেট: ১১১.৩৪
৬ ফিট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘদেহী এই অলরাউন্ডার হতে চেয়েছিলেন ব্যাটার। সেই তিনিই মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ক্যাম্পে নজর কেড়ে পরে হয়েছিলেন স্ট্রাইক বোলার, পরে বোলিং অলরাউন্ডার। এই বিশ্বকাপে নিজের তকমার প্রতি সুবিচার করে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে নিয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেট। সেই সাথে নিচে নেমে নিয়মিত খেলেছেন দ্রুতগতির সব ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিধ্বংসী ফিফটির পাশাপাশি বল হাতে নিয়মিত উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসেই এক বিশ্বকাপ আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড গড়া ইয়ানসেন এক অর্থে এবার প্রোটিয়াদের তুরুপের তাস।
ইব্রাহিম জাদরান
ম্যাচ: ৯
রান: ৩৭৬
গড়: ৪৭
সর্বোচ্চ: ১২৯*
বিশ্বকাপে এসেছিলেন দুর্দান্ত এক রেকর্ড নিয়ে। সেই রেকর্ড ধরে রেখেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাকিয়ে হয়েছেন আফগানিস্তানের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিয়ান। ৮৭ রানের ইনিংসটায় সেঞ্চুরি না পেলেও আফগানদের জয়ের ধারা তৈরি করতে বেশ সাহায্য করেছিল। হয়ত সেই অর্থে ধারাবাহিকভাবে বড় সংগ্রহ পাননি। তবে প্রতি ম্যাচেই আফগানদের শুরুটা এনে দিয়ে ইব্রাহিম বিশ্বমঞ্চে জানান দিয়েছেন নিজের ক্ষমতার কথা।
শ্রেয়াস আইয়ার
ম্যাচ: ৯
রান: ৪২১
গড়: ৭০.১৬
সর্বোচ্চ: ১২৮*
শর্ট বলে তার দুর্বলতা নিয়ে কথা কম হয়নি। বিশ্বকাপে এসেছেন লম্বা এক ইনজুরি কাটিয়ে, এসে শুরুটাও সেই অর্থে ভালো হয়নি। তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেননি। ৩টি ফিফটি তো পেয়েছেন, সেই সাথে প্রায়ই ধরেছেন মিডল অর্ডারের হাল। কলকাতায় সেঞ্চুরি না পেলেও ভিরাটের ৪৯-তম সেঞ্চুরিতে তার অবদান কম ছিল না। পরে তো ডাচদের তুলোধোনা করে রাহুলকে নিয়ে গড়লেন ওয়ানডেতে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি, সেই সাথে পেয়ে গেলেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। নিজের দুর্বলতাকে ঢাল বানিয়ে, শক্তির জায়গা কাজে লাগিয়ে শ্রেয়াস তাই প্রমাণ করেছেন নিজেকে।