মিচেলের লড়াই ভেস্তে শামির সাঁড়াশি স্পেলে ফাইনালে ভারত

   

২০২৩ বিশ্বকাপ, ১ম সেমি-ফাইনাল, ভারত-নিউজিল্যান্ড (টস-ভারত/ব্যাটিং)
ভারত - ৩৯৭/৪, ৫০ ওভার (কোহলি ১১৭, শ্রেয়াস ১০৫, গিল ৮০*, সাউদি ৩/১০০, বোল্ট ১/৮৬)
নিউজিল্যান্ড - ৩২৭, ৪৮.৫ ওভার (মিচেল ১৩৪, উইলিয়ামসন ৬৯, ফিলিপস ৪১, শামি ৭/৫৭, কুলদীপ ১/৫৬, বুমরাহ ১/৬৪)
ফলাফল - ভারত  ৭০ রানে জয়ী

---

 

আইসিসি নকআউটে নিউজিল্যান্ড জুজু কাটালো ভারত। ভিরাট কোহলির রেকর্ডের দিনে পাদপ্রদীপের আলো কেড়ে নিজেও একের পর এক রেকর্ড গড়লেন মোহাম্মদ শামি। ড্যারিল মিচেলের লড়াই ভেস্তে তাই ২০১৯ সালের দুঃখ ভুলে এবার ফাইনালে ভারত; সেটাও ২০১১ বিশ্বকাপের পর প্রথম।
 

৩৯৮ রানের বিশাল লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। ড্যারিল মিচেলের বিশ্বকাপটা এমনিই ভালো যাচ্ছে না; সেখানে শামি আক্রমণে এসেই প্রথম বলে তাকে থামালেন। দারুণ বিশ্বকাপ কাটানো রাচিন রবীন্দ্রও শামির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরলে নিউজিল্যান্ড অল্প রানেই গুটিয়ে যাবে কি না সেটা নিয়েই জেগেছিল শঙ্কা। তবে প্রথম পাওয়ারপ্লে রয়েসয়ে পার করে দিয়ে মিচেল-উইলিয়ামসন জুটি শতরান তুলে ফেলে ১৬.৪ ওভারে। উইলিয়ামসন এক প্রান্ত আগলে রাখলে মিচেল আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নেন। ৪৯ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে মিচেল কিউইদের এগিয়ে নিলে ফিফটি পেয়ে যান উইলিয়ামসনও, ৫৮ বলে। ফিফটির পরপরই বুমরাহর বলে মিড অনে শামিকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান উইলিয়ামসন। এর পরপরই আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান মিচেল, ৮৫ বলে। তবে পুরো আসর জুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শামিই এসে শাপমোচন করলেন। ৬৯ রানে থাকা উইলিয়ামসনকে ডিপ স্কয়্যার লেগের বাউন্ডারিতে বন্দি করে শামি ভারতকে ম্যাচে ফেরান ১৮১ রানের ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা জুটি ভেঙে। ওই ওভারেই দারুণ সিমআপ ডেলিভারিতে ল্যাথামকে রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে কার্যত ম্যাচের ভাগ্যটাও লিখে ফেলেন।
 

সেখান থেকেই জাদেজা, কুলদীপরা উইকেটে আসা ফিলিপসকে চেপে ধরলে মিচেলের রানের গতিও স্তিমিত হয়ে যায়। তবে ৪০-তম ওভারের পর সিরাজের রাউন্ড দ্য উইকেটের পরিকল্পনা ভেস্তে হাত খুলতে শুরু করেন ফিলিপস। তবে বুমরাহর স্লোয়ার পড়তে না পেরে লং অফে ক্যাচ দিয়ে তিনি থামেন ৩৩ বলে ৪১ রানে। সেখান থেকে ভারত আর পিছে ফিরে তাকায়নি। মিচেলকে সেখান থেকে লড়তে হত একাই। উইকেটে এসেই চ্যাপম্যান কুলদীপের শিকার হয়ে ফিরলে লড়াইটা আর চালিয়ে নিতে পারেননি মিচেল। শামির পঞ্চম শিকার হয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ১১৯ বলে ১৩৪ রানে মিচেল থামলে শেষ হয়ে যায় কিউইদের সব আশা। তবে এরপর একে একে আরও দুটো উইকেট নিয়ে শামি তো কিউইদের গুটালেন বটেই, সেই সাথে গড়লেন একগাদা রেকর্ড। স্টার্ককে টপকে হয়েছেন দ্রুততম ৫০ বিশ্বকাপ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শকারী (১৭ ম্যাচে), হয়েছেন সর্বোচ্চ ফাইফার শিকারি (৪)। সেই সাথে গ্যারি গিলমোরকে টপকে গড়েছেন বিশ্বকাপ নকআউটে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড, আর তাতেই বার বছর পর আবারও বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত।
 

এর আগে জয়ের মঞ্চটার ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিউই পেসারদের তুলোধোনা করে মাত্র ৫.২ ওভারেই দলীয় ৫০ রান হয়ে যায়; যার ৩৮ রানই আসে রোহিতের ব্যাট থেকে। সাউদির স্লোয়ারকে মিড অফের ওপর দিয়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গেলে উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত ক্যাচে রোহিত ২৯ বলে ৪৭ রানে থামলেও প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৮৪ রান তুলে ফেলে ভারত। মাত্র ১২.২ ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ হলে গিল শুরু করেন হাত খুলে খেলা, আর কোহলি মনোযোগ দেন প্রান্ত বদলে। ৪১ বলে গিল ফিফটি তুলে নিয়ে ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকেই। কিন্তু ২৩-তম ওভারে মিড অনে কোহলির ঠেলে দেওয়া বলের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন ৬৫ বলে ৭৯ রানে থাকতে। উইকেটে এসে শ্রেয়াস কিছুটা নড়বড়ে থাকলেও নিজের আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই খেলতে থাকেন, সেই সাথে কোহলিও ফিফটি পেয়ে যান ৫৯ বলে।
 

সেখান থেকে শুরু হয়ে শ্রেয়াসের ঝড়। পেসারদেরকে আজ যেই ভঙ্গিতে মিড অনের ওপর দিয়ে একেকটা ছয় মেরেছেন তাতেই ভেঙে গিয়েছে কিউইদের মনোবল। সাথে কোহলির বেরিয়ে এসে খেলা একেকটা শটে যেন বল করার জায়গাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না কিউইরা। মাত্র ২৮.১ ওভারে ভারত ২০০ রান পূর্ণ করলে শ্রেয়াস ফিফটি পায় ৩৫ বলে।
 

মুম্বাইয়ের অসহ্য গরমে নব্বইয়ের কাছাকাছি গিয়ে খোঁড়াতে থাকেন কোহলি; সেই সুযোগে দারুণ এক স্পেল করেন স্যান্টনার। তবে ৪০ ওভার পার হতেই চলে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সাউদিকে বেরিয়ে এসে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগে বল পাঠিয়ে দুই রানে ১০৬ বলে পেয়ে যান ৫০-তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এর কিছুক্ষণ আগেই শচীনের এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙে এরপর তার ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও তিনি নিজের করে নিলেন। সেঞ্চুরির পর রানের চাকা সচল রাখতে গিয়ে সাউদিকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়্যার লেগে কনওয়ের কাছে ক্যাচ তুলে কোহলি থামেন ১১৩ বলে ১১৭ রানে। রাহুলকে নিয়ে এরপর ঝড় চালিয়ে শ্রেয়াস সেঞ্চুরি পেয়ে যান মাত্র ৬৭ বলে। বোল্টর স্লোয়ার মাঠছাড়া করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ৭০ বলে তিনি ১০৫ বলে থামলে শেষদিকে রাহুল ২০ বলে ৩৯* রান করে কিউইদের দম ফেলার সুযোগ দেননি। শেষ ১০ ওভারে তাই ১১০ রান তুলে ভারত গড়েছে নকআউটে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। সেই রেকর্ড সংগ্রহ নিয়ে শামির তোপে ফাইনালে রাস্তায় পা বাড়িয়েছে স্বাগতিকরা।