• লা লিগা
  • " />

     

    কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে বদলে দিচ্ছে বার্সেলোনাকে

    কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে বদলে দিচ্ছে বার্সেলোনাকে    

     "সর্বশেষ এক বছরে প্রতিপক্ষের রক্ষণ লাইনের পেছনে ওসমান ডেম্বেলের অফ দ্যা বল মুভমেন্টগুলো দেখাতে পারবেন?"

    কগনিয়ার সিইও মরিসি এ. লোপেজ-ফিলিপের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন বার্সেলোনার সাবেক ক্রীড়া পরিচালক মাতেউ আলেমানি।

    দুই বছরেরও কম সময় আগে লোপেজ-ফিলিপের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন আলেমানি, উদ্দেশ্য ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত সফটওয়্যার কগনিয়ার ব্যাপারে কথা বলা। ২০১৯ সালে তৈরি করা এই সফটওয়্যার সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিকভাবে ফুটবল মাঠের যেকোন নড়াচড়া বা ঘটনাকে ধারণ এবং বিশ্লেষণ করতে পারে। ওই বৈঠকেই লোপেজ-ফিলিপের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন আলেমানি। উত্তরে লোপেজ-ফিলিপ ছিলেন খুবই আত্মবিশ্বাসী,

    "উনি যা জিজ্ঞেস করছিলেন, সেটার উত্তর দেওয়া ছিল আমাদের কয়েক মিনিটের ব্যাপার।"

    ছবি: জাভি হার্নান্দেজ; Image Source: Getty Images

    এই লোপেজ-ফিলিপকে আগে থেকেই চিনতেন বার্সেলোনার বর্তমান কোচ জাভি হার্নান্দেজ এবং সহকারী কোচ অস্কার হার্নান্দেজ। জাভির পরিকল্পনা অনুসারেই ২০২১ সালে বার্সার ড্রেসিংরুমে বদল আসে। পুরনো কর্মীদের সাথে যুক্ত হন জাভির বিশ্বস্ত সাতজন ব্যাকরুম স্টাফ, যাদের প্রত্যেকেই কগনিয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করে অভ্যস্ত। এই সফটওয়্যার জাভি ব্যাবহার করতেন আগেও, যখন তিনি কাতারের আল সাদ ক্লাবের হয়ে তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। সুফল পেয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন একই সফটয়্যার বার্সেলোনাতেও ব্যবহার করার। জাভির এই বিশ্লেষক দলের মধ্যে ডেভিড প্রাটস, টনি লোবো, সার্জিও গার্সিয়া প্রমুখ এই কগনিয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন অনেক বছর ধরে, জাভি চেয়েছিলেন তাদের অভিজ্ঞতাকে বার্সার সাফল্যের জন্য ব্যবহার করতে।

    "গত মৌসুমে ইউরোপা লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দলের বিপক্ষে খেলা ছিল বার্সেলোনার। প্রথম লেগের পাঁচ দিন আগে বার্সেলোনার কোচিং স্টাফ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়, এবং ইউনাইটেডের সর্বশেষ ১২টা ম্যাচের কিছু নির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হয়। সাধারণত এই ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বের করতে মানুষের ক্ষেত্রে ৩০০ ঘণ্টা সময় লাগে, যেহেতু প্রতিটা ম্যাচের প্রতিটা ক্ষণ বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হয়। তবে আমাদের এই সফটওয়্যারের সেই একই কাজ সম্পন্ন করতে প্রয়োজন হয়েছিল মাত্র চার ঘণ্টা।"

    -মরিসি এ. লোপেজ-ফিলিপ, সিইও, কগনিয়া

     

     

    এই লোপেজ-ফিলিপের পরিচয়টাও দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য আমাদের পরিচিত হতে হবে আরো একটি চরিত্রের সাথে, তার নাম হোয়ান ভিয়া। লোপেজ-ফিলিপের কাজের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে হোয়ান ভিয়ার। বছরের পর বছর ধরে বার্সেলোনার দর্শনের বিবর্তনে হোয়ান ভিয়ার ভূমিকা রয়েছে, কেননা ইয়োহান ক্রুইফ যখন বার্সেলোনার ম্যানেজার, ভিয়া তখন বার্সেলোনার একাডেমি লা মাসিয়ার অন্যতম সমন্বয়ক। বার্সেলোনার শত শত কিশোরকে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে ভিয়ার, যাদের মধ্যে রয়েছেন জাভি হার্নান্দেজ। ২০১১ সালে তাকে বার্সেলোনার মেথডোলোজি ক্ষেত্রের পরিচালক করা হয়, যারা মূলত ক্লাবের খেলার ধরণ ও একাডেমি নিয়ে কাজ করে। ২০১৮ সালে, জোসেপ মারিয়া বর্তমে যখন বার্সা সভাপতি, যুবদলগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা না করার অভিযোগে বরখাস্ত করা হয় ভিয়াকে। দীর্ঘ ৪০ বছর পরে বার্সেলোনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয় ভিয়ার।

    হোয়ান ভিয়া; Image Source: FC Barcelona

    "পেশাদার পর্যায়ে আমার দেখা সেরা কোচ পেপ গার্দিওলা এবং লুইস আরাগোনেস, তবে একাডেমি পর্যায়ে হোয়ান ভিয়াই সেরা। আমি তার প্রতি চিরঋণী।"

    -জাভি হার্নান্দেজ, ২০১৫ সালে

    হোয়ান ভিয়ার সাথে লোপেজ-ফিলিপের পরিচয় হয় কাতালুনিয়ার একাডেমি ফুটবলের মাধ্যমে। তখন থেকেই ফুটবলকে পাল্টে দেওয়ার এই আইডিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয় তাদের মধ্যে। পেপ গার্দিওলা যখন বার্সার ডাগআউটে, তখনও মাঠে নিজেদের খেলার উন্নতির ক্ষেত্রগুলো জানার জন্য নিয়মিত ভিয়ার কাছে যেতেন জাভি হার্নান্দেজ এবং কার্লোস পুয়োল। আর তখন জাভি পুয়োলের খেলার বিশ্লেষণে যিনি সাহায্য করতেন, তার নাম লোপেজ-ফিলিপ।

    "তখন থেকেই বুঝতে শুরু করলাম, একটা ম্যাচ পরিপূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করতে কতটা সময় এবং শ্রমের প্রয়োজন। সত্যি বলতে, অনেক বেশি সময় ও পরিশ্রম লাগে, অনেক বেশি। এবং এই পরিশ্রমকে কমানোর মতো কোন উপায়ও ছিল না। তখন থেকেই কগনিয়া সফটওয়্যারের আইডিয়া আমার মাথায় ঘুরতে শুরু করলো।"

    -মরিসি এ. লোপেজ-ফিলিপ, সিইও, কগনিয়া

    বার্সেলোনা ক্লাবের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বার্সেলোনা ইনোভেশন হাব এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল কোচদের বার্সার মেথডোলোজির ওপরে বিভিন্ন কোর্স করানো। লোপেজ-ফিলিপ তখনই চেষ্টা করেছিলেন কগনিয়া সফটওয়্যারের ব্যাপারটা বার্সায় যুক্ত করতে, কিন্তু সেটা পারেননি বিভিন্ন কারণে। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব কনেটিকাট থেকে স্কলারশিপ জোগাড় করেন এবং নিজ উদ্যোগেই কাজ শুরু করেন।

    ২০১৮ সালে ভিয়ার মাধ্যমেই, লোপেজ-ফিলিপ তার প্রজেক্টটা উপস্থাপন করেন যাওয়ার সামনে। জাভিও তখন কোচ হিসেবে একেবারেই আনকোরা, মাত্রই শুরু করবেন তার ক্যারিয়ার। কিন্তু লোপেজ-ফিলিপের এই প্রজেক্টটা দারুণ ভালো লেগে যায় জাভির, তিনি নিজেই এই সফটওয়্যারের পেছনে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিলেন স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াস, বার্সা সভাপতি নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী ভিক্টর ফন্ট এবং হোয়ান ভিয়া স্বয়ং।

    হোয়ান ভিয়া এবং জাভি; Image Source: Twitter/ Barca Times

    এই মুহূর্তে জাভি এই কোম্পানির একজন অ্যাম্বাসেডর। এছাড়া আরেক স্প্যানিশ কোচ উনাই এমেরিও এই সফটওয়্যার নিয়মিত ব্যবহার করেন, এর আগে ভিয়ারিয়ালে করতেন এখন অ্যাস্টন ভিলাতেও করেন। এর বাইরে ইংলিশ ক্লাব ওয়াটফোর্ড, সুইডিশ ক্লাব এআইকে সোলনা এবং ইউরোপের বিভিন্ন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে এই সফটওয়্যারের গ্রাহকের তালিকায়।

    "আমরা এতদিন যাবত জ্ঞান সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ট্যাকটিক্যাল ধারণা নিয়েছি, এরপর গড়ে তুলেছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই সিস্টেম। এখন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সহজেই যেকোন ম্যাচ বা টুর্নামেন্টের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে ফেলা সম্ভব। ধরুন, আপনি দেখতে চান যে প্রিমিয়ার লিগের ৩৮০টা ম্যাচের ঠিক কখন কখন দলগুলোর রক্ষণ লাইনে অসামঞ্জস্যতা ছিল। এই তথ্য পেতে আপনার সময় লাগবে মাত্র কয়েক মিনিট। তবে হ্যাঁ, এই সফটওয়্যার, বা এই বিশ্লেষণ তো আর আপনাকে গোল করিয়ে দেবে না, ম্যাচও জিতিয়ে দেবে না। আপনার প্রস্তুতিতে কিছুটা সাহায্য করবে, এই যা। তবে এই প্রস্তুতি আপনাকে ম্যাচে খুব কাজে দেবে, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি।"

    -মরিসি এ. লোপেজ-ফিলিপ, সিইও, কগনিয়া

    কগনিয়া সফটওয়্যার কীভাবে বার্সাকে সাহায্য করছে, তার পুরোটা খোলাসা না করলেও, দ্যা অ্যাথলেটিক এর কাছে দুটো পদ্ধতির কথা বলেছেন বার্সার ব্যাকরুম স্টাফরা।

    প্রাক-মৌসুমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে এসি মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা। ওই দুই ম্যাচের বিশ্লেষণের জন্য কগনিয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, আর এজন্যই মাঠের ছবিকে বিশ্লেষণের নিমিত্তে ব্যবহৃত হয় ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা।

    ১. প্রতিপক্ষকে হাই প্রেস করতে বাধ্য করা, ছোট পাসের মাধ্যমে নিজেদের আক্রমণ শুরু করা, এরপর খেলার ধরণ বদলানো

    বার্সেলোনার খেলার প্রাথমিক ধরনটাই হলো নিচ থেকে ছোট ছোট পাসে খেলা শুরু করা। সাবধানী বিল্ড-আপের মাধ্যমে রক্ষণ থেকে আক্রমণে ওঠে বার্সেলোনা। এ কারণেই রক্ষণের জন্য বার্সা খোঁজে এমন খেলোয়াড়, যারা রক্ষণের পাশাপাশি বল পায়ে রাখতে ও বল নিয়ে এগিয়ে যেতে স্বচ্ছন্দ।

    তবে দলে দুজন বল-প্লেয়িং সেন্টারব্যাক রাখাটাও খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। প্রতিপক্ষ তখন মাঝের অংশে বেশি খেলোয়াড় মোতায়েন করে সেন্টারব্যাকদের ওপর চাপ বাড়ায়, আর পাস দেওয়ার পথগুলো বন্ধ করে দেয়। এই প্রেসের বিপক্ষে সুবিধা করার জন্য জাভি চেয়েছিলেন দুই উইং দিয়ে খেলা বিল্ড-আপের অপশনটাও খোলা রাখতে।

    Image Source: Kognia

    প্রাক-মৌসুমে এসি মিলানের বিপক্ষের ম্যাচটাই ধরা যাক। এরিক গার্সিয়ার কাছ থেকে রক্ষণের বাঁ দিকে বল পেয়ে যান আনসু ফাতি। তার কাছাকাছি আলেহান্দ্রো বালদে ছিলেন, কিন্তু প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা চাইছিলেন প্রেস করে বার্সার প্রতিটা সাধারণ সহজ পাস বন্ধ করে দিতে, বিশেষত মিডফিল্ডে ওরিয়ল রোমেউ এবং ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের মধ্যে।

    ফাতি তাই বলের পজেশন রাখলেন নিজের কাছেই, বার্সার খেলোয়াড়রাও ততক্ষণে সময় পেয়ে মাঠের বাঁ পাশটা ওভারলোড করলো, আর ডান দিকে থাকলেন শুধু রাফিনহা। পরিস্থিতিটা দ্রুত পড়ে নিয়ে তিনি মাঠের ফাঁকা ডান প্রান্তে অবস্থান নেন, আনসু ফাতিকে বলেন পাস দেওয়ার জন্য।

    এদিকে এসি মিলান ডিফেন্ডার ফিকায়ো তোমোরি তখন রাফিনহাকে নয়, রবার্ট লেওয়ানডস্কিকে মার্ক করতে ব্যস্ত। আর এদিকে কগনিয়া সফটওয়্যার ঠিকই তোমোরির পেছনের ফাঁকা জায়গাটা ধরে ফেলেছে, রাফিনহার পরবর্তী গন্তব্যও নির্দেশ দিয়ে ফেলেছে।

    Image Source: Kognia

    ফাতি পুরো ব্যাপারটা বুঝলেন, এরপর বলটা পাঠিয়ে দিলেন মাঠের ডান প্রান্তে। বার্সাও পেয়ে গেল মিলানের হাই-প্রেসের জবাব।

    Image Source: Kognia

    রাফিনহার পায়ে বল দেখে মিলানের লেফটব্যাক থিও হার্নান্দেজকে তড়িঘড়ি করে ছুটে আসতে হলো। রাফিনহাও পেয়ে গেলেন হার্নান্দেজের বিপক্ষে ওয়ান-ভার্সেস-ওয়ান পরিস্থিতি।

    Image Source: Kognia

    বার্সার তো এমন পরিস্থিতিই চাইছিলো। এরপরে যা ঘটবে, সেটা কগনিয়া সফটওয়্যার নয়, বরং নির্ভর করবে খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত প্রতিভা আর দক্ষতার ওপরে।

    ২. অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের মুভমেন্টের টাইমিং

    গত জানুয়ারি মাস থেকে জাভির সিস্টেমে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, বার্সার চিরাচরিত তিন মিডফিল্ডারের পরিবর্তে তিনি খেলাচ্ছেন চারজন মিডফিল্ডারকে। এই চারজনের মধ্যে একজনকে তিনি ফলস লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলাচ্ছেন।

    একসাথে এই চারজন মিডফিল্ডার খেলানোর অর্থ, আপনার দলে আরো বেশি সংখ্যক অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার প্রয়োজন, যারা পাস দিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণরেখা ভাঙতে পারবেন, রান নিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণের পেছনের ফাঁকা জায়গা কাজে লাগাতে পারবেন, প্রতিপক্ষের বক্সে আক্রমণ করতে পারবেন।

    প্রাক-মৌসুম চলাকালীন পেদ্রি স্বীকার করেছিলেন যে খেলার এই ব্যাপারগুলোতে তার উন্নতি প্রয়োজন। যদিও এসব ব্যাপারে পারদর্শী একজনকে বার্সা দলে ভিড়িয়েছে গত গ্রীষ্মেই, ইলকায় গুন্দোয়ান।

    Image Source: Kognia

    এই ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রাক-মৌসুমের এল ক্লাসিকোতে কোচ কার্লো আনচেলত্তি কীভাবে রিয়ালের রক্ষণকে সাজিয়েছিলেন। এখানে ডটেড লাইন দিয়ে কগনিয়া সফটওয়্যার বুঝিয়ে দিচ্ছে যে এই দুই ডিফেন্ডারের মধ্যে যথেষ্ট জায়গা বিদ্যমান, এবং একটা বা দুটো মুভমেন্ট দিয়েই এই জায়গা কাজে লাগানো সম্ভব। অর্থাৎ দুই সেন্টারব্যাকের মধ্যে খুব বেশি জায়গা নেই, সে কারণেই তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে একটা সোজা লাইন। অপরদিকে সেন্টারব্যাক ও ফুলব্যাকদের মধ্যে জায়গা রয়েছে, আক্রমণ করে ঐ জায়গাকে কাজে লাগানো সম্ভব।

    Image Source: Kognia

    এমন পরিস্থিতিগুলো খুব ভালোভাবে পড়তে পারেন ইলকায় গুন্দোয়ান। খেলার একটা পর্যায়ে বার্সেলোনা মাঠের ডান পাশে পজেশন বাড়িয়ে ফেলে, স্বাভাবিকভাবেই রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগ তাদের বাঁ দিকে ঝুঁকে যায় এবং লেফট সেন্টারব্যাক ও লেফটব্যাকের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

    Image Source: Kognia

    ঐ ম্যাচে ফলস লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলতে থাকা গুন্দোয়ান ঐ জায়গাটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন, লেফট সেন্টারব্যাক আর লেফটব্যাকের মাঝের জায়গা ধরে দৌড় দেন গুন্দোয়ান।

    এই দৌড়ের দুটো ফলাফল হতে পারতো। হয় গুন্দোয়ান নিজেই বলটা পেয়ে যেতেন, মাদ্রিদের বক্সে ঢুকে পড়তে পারতেন। অথবা তার এই মুভমেন্টকে ট্র্যাক করার জন্য মাদ্রিদের লেফটব্যাক তার জায়গা ছাড়তে হতো, ফলে বার্সার লেফটব্যাক আলেহান্দ্রো বালদে ফাঁকা জায়গা পেয়ে যেতেন।

    Image Source: Kognia

    রোনাল্ড আরাউহো অবশ্য এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পাসটাই বেছে নেন। ডানদিক ঘুরে বলটা যায় বাঁ পাশে, আলেহান্দ্রো বালদে যেখানে ছিলেন আনমার্কড। এই পাসটাই প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণের ভারসাম্য কমিয়ে দেয়, বাধ্য করে ডান পাশ থেকে দ্রুত বাম পাশে ঝুঁকতে। আর জাভিও তার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের কাছ থেকে এটাই চান, বলে স্পর্শ না করেও যিনি খেলায় প্রভাব ফেলতে পারবেন।

    আর জাভিকে এক্ষেত্রে সাহায্য করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কগনিয়া সফটওয়্যার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিশ্লেষণ করে যে তথ্য বের করা হতো আগে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সেটা এখন কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার। আর নিশ্চিতভাবেই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবলকে পাল্টে দিতে পারে খোলনলচে, শুরু করবে একটা নতুন যুগের।