ফাইনাল প্রিভিউ: দুর্দমনীয় ভারতের সামনে অকুতোভয় অস্ট্রেলিয়া
দুই দলের বিশ্বকাপ যাত্রা যেখানে যাদের বিপক্ষে শুরু হয়েছিল, শেষ হচ্ছে সেখানেই। চক্র পূরণ করে সেই আহমেদাবাদেই ফাইনালে মুখোমুখি ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ সালে শেষ এই দুই দলের দেখা হয়েছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে। সেবার ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ও সব মিলিয়ে তৃতীয়।
সেবারও ফাইনালের আগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ভারতীয় একজন - শচীন টেন্ডুলকার। তার রেখে যাওয়া ব্যাটন বয়ে বাইশ গজে বল্লম ঘুরাতে থাকা সেই ভিরাট কোহলি এবার তার নায়ককে ছাড়িয়ে গিয়েছেন আরও এক ধাপ উপরে, এবারও ফাইনালের আগে তাই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সেই ভারতীয়ই। ফাইনালে সেবার গ্লেন ম্যাকগ্রার শিকার হয়ে মাত্র চার রানেই ফিরেছিলেন শচীন। ভারতের ভাগ্যটাও যেন সেখানেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। কোহলির ভাগ্যে এবার কী হবে সেটা সময়ই বলবে।
তবে কোহলিরা যে এবার শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবীদার সেটা অজিরাও শিকার করবে। সেবার টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে গিয়েছিল অজিরা। ভারতও এবার টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে। যে দাপটের সাথে রোহিত-বাহিনী এগিয়ে চলেছে তাতে তাদের থামানো কঠিন। তবে টানা দুই হারে ১৫ নভেম্বরে যেই অজিরা ছিল পয়েন্ট তালিকার তলানিতে, সেই কামিন্সরাই টানা ৮ ম্যাচ জিতে ফাইনালে। লড়াইটা তাই হবে শেয়ানে শেয়ানেই। অন্তিম মহারণের আগে কোথায় কোথায় দুই দল ম্যাচটা জিততে পারে সেটাই দেখে নেওয়া যাক।
মিডল অর্ডারের তফাৎ
দুই দলের সবচেয়ে বড় ব্যবধান এখন পর্যন্ত মিডল অর্ডার। অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ছাড়া কেউই বলার মত রান পাননি। মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভ স্মিথ পাননি কোনও সেঞ্চুরি। আর দুই অলরাউন্ডার স্টয়নিস ও গ্রিন তো দলে জায়গা থিতু করতে পারেননি; ব্যাট হাতেও নেমে সুবিধা করতে পারেননি। সেখানে ভারতের শ্রেয়াস আইয়ারের নামের পাশে আছে দুটো সেঞ্চুরি; রাহুল গড়েছেন বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি রেকর্ড। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে শুরুর পর কোহলির সাথে জুটি গড়ে এই রাহুলই এনে দিয়েছিলেন জয়। দুই দলের মিডল অর্ডারের এমন ব্যবধান ফাইনালেও দেখে গেলে বিপদে পড়বে অস্ট্রেলিয়া।
তার চেয়ে বড় কথা অধিনায়ক রোহিত আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি শামিকে আক্রমণে আনেন দশ ওভার পার হলে। সেই সাথে মিডল ওভারে আসরের সবচেয়ে সফল বলার জাদেজা। দশ ওভারের মধ্যেই যদি প্রথম তিন ব্যাটার খুইয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া তাহলে গ্রুপ পর্বের মতই দুইশো ছুঁতেই হয়ত বেগ পেতে হবে তাদের।
দুই দলের শক্তি পাওয়ারপ্লে?
এবারে পাওয়ারপ্লেতে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে রান তোলা দুই দল যথাক্রমে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। আর পাওয়ারপ্লেতে বল হাতে সবচেয়ে ভালো ইকোনমি রেট? যথাক্রমে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া! পাওয়ারপ্লেতে দুই দলের লড়াইটা যে আবারও জমবে সেটা বলা বাহুল্য।
জাসপ্রিত বুমরাহর বিপক্ষে কখনও ওয়ানডেতে উইকেট হারাননি ওয়ার্নার। গ্রুপের ম্যাচে ছিলেন না হেড, তবে ভারতের বিপক্ষ বিশ্বকাপের ঠিক আগের ওয়ানডে সিরিজটায় পেয়েছিলেন ফিফটি। আর তিনে খেলা মার্শ তো বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া অনুপ্রেরণা নিতে পারে গ্রুপের ম্যাচটা থেকেই। স্টার্ক-হেজলউডের তোপে ২ রানেই ৩ উইকেট খুইয়ে বসেছিল ভারত।
তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রোহিতের দারুণ ক্যারিয়ার রেকর্ড ধরে রেখে ম্যাচের আগে আক্রমণের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধেই তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইডেনের মত সহায়তা হয়ত ম্যাচের কোনও ভাগেই পাবেন না অজি পেসাররা। হেজলউডের বিপক্ষে রোহিতের লড়াইটা তাই জমবে বেশ। দুই দলের পাওয়ারপ্লের পরতে পরতে তাই লুকিয়ে আছে ছোট ছোট লড়াই।
টসে জিতে বোলিং?
গত তিন বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে পরে ব্যাট করা দল। আহমেদাবাদে এবারের রেকর্ড ঘাটলেও দেখা যায়, চার ম্যাচের তিনটাতেই রান তাড়া করা দল জিতেছে। এই ভেন্যুতে একমাত্র দল যারা নিজেদের সংগ্রহকে ধরে রেখে জয় পেয়েছে? অস্ট্রেলিয়া।
তবে আহমেদাবাদে ফ্লাডলাইটের নিচে ব্যাটাররা সুবিধা পায় এটা অনস্বীকার্য। চিন্তার বিষয় হতে পারে শিশির। শীতকালের শিশির আপন বেগে পড়তে শুরু করলে পরে ব্যাট করা দল সুবিধা পাবে আরও। গত দুই আসরের আইপিএল ফাইনালেও এখানে জিতেছে রান তাড়া করা দলই। তাই টসে জিতে হয়ত দুই দলই চাইবে রান তাড়া করতে।
ভেন্যু
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, আহমেদাবাদ
সম্ভাব্য একাদশ
ভারত: রোহিত শর্মা, শুবমান গিল, ভিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ
অস্ট্রেলিয়া: ডেভিড ওয়ার্নার, ট্র্যাভিস হেড, মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, মার্নাস লাবুশেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জশ ইংলিস, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা, জশ হেজলউড