ভারতের উদযাপনের আয়োজনে জল ঢেলে অজিদের 'হেক্সা' এনে দিলেন 'হেড দ্য হিরো'
২০২৩ বিশ্বকাপ, ফাইনাল, ভারত-অস্ট্রেলিয়া (টস-অস্ট্রেলিয়া/বোলিং)
ভারত - ২৪০, ৫০ ওভার (রাহুল ৬৬, কোহলি ৫৪, রোহিত ৪৭, স্টার্ক ৩/৫৫, কামিন্স ২/৩৪, হেজলউড ২/৬০)
অস্ট্রেলিয়া - ২৪১/৪, ৪৩ ওভার (হেড ১৩৭, লাবুশেন ৫৮*, মার্শ ১৫, বুমরাহ ২/৪৩, সিরাজ ১/৪৫, সিরাজ ১/৪৭)
ফলাফল - অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয়ী
অপরাজিত চ্যাম্পিয়নশিপের উদযাপনের সব আয়োজন সেরে আহমেদাবাদে এলেও অজিদের কাছে নতি স্বীকার করতে হল স্বাগতিক ভারতকে। রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে ফাইনালে সেঞ্চুরি করে অজিদের ‘মিশন হেক্সা’ সফল করলেন ইনজুরিতে প্রথমার্ধ মিস করা ট্রাভিস হেড।
২৪১ রানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। এদিন সিরাজের বদলে শামিকে নতুন বল দেওয়া হলে নিজের প্রথম ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরান তিনি। প্রথম বলেই সুযোগ পেয়েও এই ওপেনার সেটা কাজে লাগাতে না পারলে উইকেটে এসেই মিচেল মার্শ আক্রমণের চেষ্টা চালালে বুমরাহর বাইরের বর তাড়া করতে গিয়ে ১৫ রানে থামেন তিনি। কিছুক্ষণ পরে বুমরাহর ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন স্টিভ স্মিথ। অথচ রিভিউ নিলে বেঁচে জেতেন তিনি; আম্পায়ার ইলিংওয়ার্থের আবেদনের সাথে সাথেই সাড়া দেওয়াতেই হয়ত নেননি সেই সিদ্ধান্ত। ৪৭ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসা অজিদের জন্যই নিজের খেলার ধরন পরিবর্তন করে আগাতে থাকেন হেড।
শুরুতে লাবুশেন কিছুটা নড়বড়ে থাকলে হেডই ঝুঁকি নিতে থাকেন। তবে পিচে বল ব্যাটে আসা শুরু করলে হেড ধীরে ধীরে খোলস থেকে বের হন, লাবুশেন যেন পালন করে যান টেস্ট ব্যাটারের ধৈর্য ধরে রাখার দায়িত্ব। ৫৮ বলে হেড ফিফটি পূর্ণ করে ফেললে আর পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। কুলদীপ-জাদেজাদের থিতু হতে দেননি; শামি-বুমরাহরা ফিরলে তাদের ওপর উল্টো চড়াও হয়েছেন। সেখান থেকেই ৯৫ বলে পেয়ে যান সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর তিনি গিয়ার বদলালে লাবুশেনও পেয়ে যান ফিফটি, ৯৯ বলে। দলের জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে বাউন্ডারি দিয়ে ম্যাচ শেষ করতে গিয়ে ১২০ বলে ১৩৭ রানে হেড থামলেও রান তাড়ায় ফাইনাল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেই তবে থামেন। এসেই পরের বলে ম্যাক্সওয়েল দুই রান নিলে অজিরা মাতে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে।
অথচ টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আরও একবার ভারতকে ঝড়ো শুরু এনে দিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ৫ম ওভারেই ২০০৩ সালে শচীনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে স্টার্কের বল টেনে মারতে গিয়ে ওই ৪ রানেই গিল ফিরলেও রোহিত ছিলেন অবিচল। উইকেটে এসে সপ্তম ওভারে ওই স্টার্ককে তিন চার মেরে কোহলিও রানের চাকা সচল রাখার বার্তা দিলে নতুন কিছু ভাবতে হয় অধিনায়ক কামিন্সকে। আক্রমণে ম্যাক্সওয়েলকে আনা হলে তার দ্বিতীয় ওভারে তাকে আক্রমণ করতে জেয়েই কামিন্সের পরিকল্পনা সফল করে দেন রোহিত। টানা দুই বাউন্ডারির পর আবারও বেরিয়ে এসে খেলতে গেলে ব্যাটে-বলে না হওয়ায় ক্যাচ দিয়ে ৩১ বলে ৪৭ রান শেষে থামেন রোহিত। অবশ্য কাভার থেকে দৌড়ে এসে হেডের দুর্দান্ত ক্যাচটাকেই সেজন্য ধন্যবাদ দিবে অজিরা। এই দুই উইকেট সত্ত্বেও প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৮০ রান তুলে ফেলে ভারত। তবে তার পরের ওভারেই শ্রেয়াসকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করিয়ে কামিন্স নিজেই অজিদের ম্যাচে ফেরার বার্তাটা দেন।
আর সেখান থেকেই ম্যাচে নিজেদের কর্তৃত্ব ফলাতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। কোহলির সাথে যোগ দিয়ে রাহুল একেবারেই সুবিধা করতে পারছিলেন না। প্রথম পাওয়ারপ্লের পর ৪০-তম ওভার পর্যন্ত ভারত পেয়েছিল মাত্র ২টি বাউন্ডারি! তার মধ্যে প্রথমটা এসেছিল রাহুলের স্কুপে, ৯৭ বল পর! অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মাঝেও প্রান্ত বদল করায় মনোযোগ দিয়ে ঠিকই ৫৬ বলে ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন কোহলি। তবে কামিন্সের বল স্টাম্পে ডেকে ৬৩ বলে ৫৪ রানে কোহলি ফিরলে ম্যাচের মোড়টা শক্তভাবেই ঘুরতে থাকে অজিদের দিকে।
ফিফটি করতে রাহুল ৮৬ বল খরচ করে ফেললে বলও রিভার্স করতে শুরু করে। রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে দারুণ রিভার্স সুইংয়ে জাদেজাকে উইকেটের পেছনের ফাঁদে ফেলেন হেজলউড; তাতেই চাপে পড়ে যাওয়া রাহুলকে দুর্দান্ত এক রিভার্স সুইংয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে একই ফাঁদে ফেলে তাকে থামান স্টার্ক। ১০৭ বলে ৬৬ রানে রাহুল ফেরার পর সেই অর্থে আর কেউ সুবিধা করতে পারেননি। একমাত্রা ভরসা হয়ে সূর্যকুমার মাঠে থাকলেও জাম্পাকে কাট করে একটা চারের বেশি বাউন্ডারি বের করতে পারেননি। হেজলউডের স্লোয়ারের দারুণ ব্যবহারে তাকে আবারও একই ফাঁদে ফেলে ২৮ বলে ১৮ রানে ফেরানো হলে ভারত শেষ দশ ওভারে তুলতে পারে মোটে ৪৩ রান। তবে কুলদীপ-সিরাজের শেষ জুটিতে আসা ১৪ রান ভারতকে এনে দিয়েছে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ; আহমেদাবাদে এই সংগ্রহ টপকাতে অজিদেরও লড়তে হত চোখে চোখ রেখে। সেটাই করে দেখালেন হেড-লাবুশেনরা; দুর্দান্ত এক জুটিতে অজিদের এনে দিলেন হেক্সার স্বাদ।