মারাকানায় ব্রাজিলকে থামাতে পারবেন মেসিরা?
ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে আবার মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। বুধবার ভোরের এই এই লড়াই শুধু ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাইভালরিই না, ফিফা র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় দুই দলের লড়াইও।
এখনো ফিফা র্যাংকিংয়ের শীর্ষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাই। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের টেবিলেও শীর্ষে মেসিরাই। যেখানে ব্রাজিলের অবস্থান পাঁচ।
মুখোমুখি লড়াইয়ে
ব্রাজিল: ৪৩
আর্জেন্টিনা: ৪০
ড্র: ২৬
১৯১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০০ বারেরও মুখোমুখি হয়েছে এই দুই ল্যাটিন পরাশক্তি। মুখোমুখি লড়াইয়ে এখনো এগিয়ে আছে ব্রাজিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলই সমান সাফল্য পাচ্ছে এই ফিক্সচারে। সর্বশেষ পাঁচ ও দশ ম্যাচে দুই দল সমান জয় পেয়েছে। সেই জয়গুলোর বেশিরভাগই এসেছে ন্যুনতম ব্যবধানে। তবে ব্রাজিলে হওয়া সর্বশেষ সুপার ক্লাসিকো জিতেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচেও হয়েছিল মারাকানাতেই। ২৮ বছর পর কোনো শিরোপা, মেসির প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা; ২০২১-এর সেই ম্যাচের কথা ভুলবে না কোনো আর্জেন্টিনা সমর্থক।
সাম্প্রতিক ফর্ম
গত চার বছরে মাত্র দুটি ম্যাচে হেরেছে আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের বিপক্ষে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব, এবং সর্বশেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে। মার্সেলো বিয়েলসার দলের বিপক্ষে এই হার বাদ দিলে সাম্প্রতিক সময়ে সব ম্যাচেই জয় তুলেছে আর্জেন্টিনা।
এদিকে ব্রাজিল তাদের সর্বশেষ দুই ম্যাচেই হেরেছে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ডিয়াজের জোড়া গোলে হার। হেরেছে বিয়েলসার দলের কাছেও। কনমেবল টেবিলেও তারা এখন পাঁচে, ফর্মে না ফিরলে তাদের কোয়ালিফিকেশনই ঝুঁকিতে পরে যেতে পারে।
টিম নিউজ
ব্রাজিলের সাম্প্রতিক ফর্মের পিছনে একটি বড় কারণ ইনজুরি সমস্যা। নেইমার ও মিলিতাও ইতোমধ্যে পুরো মৌসুমের জন্য আউট। আগের ম্যাচে উরুর চোট নিয়ে ছিটকে গেছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়রও। হ্যামস্ট্রিং সমস্যার জন্য এই ম্যাচে নাও দেখা যেতে পারে গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে।
ইনজুরি ছাড়াও একজন প্রপার সেন্টার ফরওয়ার্ডের অভাব ব্রাজিলের বেশ কিছুদিনের। কলম্বিয়ার বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন ব্রাইটনের হাইলি রেটেড তরুণ স্ট্রাইকার জোয়াও পেদ্রো এবং ভবিষ্যত মাদ্রিদ তারকা এন্ড্রিক। এই ম্যাচে শুরুও করতে পারেন তাদের একজন।
আর্জেন্টিনার একাদশ প্রায় একই আছে বিশ্বকাপের পর থেকে। ইনজুরির জন্যও বাইরে নেই দলের মূল তারকাদের কেউ।
খেলার ধরন
ব্রাজিল
তিতে দায়িত্ব ছাড়ার পর এক বছরের জন্য ব্রাজিলের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজারের দায়িত্ব পেয়েছেন ফার্নান্দো দিনিজ। তিতের ফরমেশন ও একাদশে তেমন পরিবর্তন আনেননি দিনিজ। তবে ব্রাজিলের প্লেয়িং স্টাইলে এসেছে পরিবর্তন।
ব্রাজিলে আবার সাম্বার ছন্দ ফিরিয়ে আনতে প্রতিজ্ঞ এই ম্যানেজার তার ফ্লুমিনেসের সময়কার কিছু ট্যাকটিকস ব্যবহার করছেন এখানে। যেমন, আক্রমণের সময় ব্রাজিলকে মাঠের এক পাশ, প্রায় সময় টাচলাইনের পাশটা ওভার-ক্রাউড করতে দেখা যায়। কিন্তু এই ট্যাকটিক্সের পরের ধাপটা ঠিকমতো করতে পারছে না ব্রাজিল। পরের ধাপে ওয়ান-টু খেলে উপরে ওঠার কথা। ফ্লুমিনেসেতে সিড়ি ট্যাকটিসও ব্যবহার করেছেন দিনিজ, যাতে সরলরেখা ধরে মাঠের বড় অংশে কয়েকজন খেলোয়াড় দাঁড়ান, এবং সরলরেখা বরাবর বল সামনে পাঠান। ব্রাজিলে এই ট্যাকটিসগুলো মাঝে মাঝে দেখা গেলেও এখনো এতে পাকা হয়ে ওঠেননি মার্টিনেল্লিরা।
আর্জেন্টিনা
স্কালোনির অধীনে আর্জেন্টিনার ট্যাকটিস আগের মতোই আছে। এখনো ৪-৩-৩ ফরমেশনেই খেলছে তারা। পজেশনে থাকাবস্থায় যা ৪-৪-২ এ রূপ নেয় কখনো। লিভারপুলের মতো এখন আর্জেন্টিনারও নাম্বার সিক্স হয়ে উঠেছেন ম্যাক আলিস্টার, তার বল প্লেয়িং এবিলিটির জন্য।
দুই ফুলব্যাক ঘন ঘন উপরে উঠে থাকেন, তখন ডি পল বা এনজো রক্ষণে সিট-ব্যাক করেন। এছাড়া খুবই আগ্রাসী প্রেস করে থাকে আর্জেন্টিনা। প্রেসিংয়ের প্রয়োজনে ফাউল করতেও দ্বিধা বোধ করেন না ডি পলরা।
সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় আর্জেন্টিনাই এগিয়ে আছে। দিনিজের অধীনে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে মাঠে ব্যাপক দুয়ো শুনতে হয়েছে ব্রাজিলকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঘরের মাঠে কখনো বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে হারেনি সেলেকাওরা। সেই রেকর্ড কি এবার ধরে রাখতে পারে ব্রাজিল? নাকি মেসির আর্জেন্টিনা ভেঙে দিবে তাও? জানতে পারবেন বুধবার সকালেই।