ডানেডিনে দুরন্ত ইয়াং, পূর্ণাঙ্গ বোলিং পারফরম্যান্সে নিউজিল্যান্ডের জয়
১ম ওয়ানডে, নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
নিউজিল্যান্ড - ২৩৯/৭, ৩০(৩০) ওভার (ইয়াং ১০৫, ল্যাথাম ৯২, চ্যাপম্যান ২০, শরিফুল ২/২৮, মিরাজ ১/৫৩)
বাংলাদেশ - ২০০/৯ (লক্ষ্য - ২৪৫), ৩০(৩০) ওভার (বিজয় ৪৩, আফিফ ৩৮, হৃদয় ৩৩, ক্লার্কসন ২/২৪, সোধি ২/৩৫, মিলনে ২/৪৬)
ফলাফল - নিউজিল্যান্ড ৪৪ রানে জয়ী (ডিএলএস মেথডে)
বৃষ্টিস্নাত এক দিনে নিউজিল্যান্ডের কাছে নতি স্বীকার করেই শুরু হল বাংলাদেশের যাত্রা। ভালো শুরু করেও উইল ইয়াংয়ের সেঞ্চুরি, টম ল্যাথামের নব্বইয়ের ঘরের ইনিংসে পাওয়া বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিয়মিত উইকেট খুইয়ে নিউজিল্যান্ডের মাঠে তাদের বিপক্ষে জয়ের খাতা আর খোলা হয়নি বাংলাদেশের।
২৪৫ রানের পরিবর্তিত লক্ষ্যে প্রথম ওভারেই খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে ফেরেন সৌম্য। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে সোধির কাছে স্টাম্প খুইয়ে এরপর শান্ত ফিরলে বিপদে পড়তে পারত বাংলাদেশ। বিজয়-লিটন জুটি সেই বিপদ সামলেছিলেন, নড়বড়ে থাকলেও বিজয় এগিয়ে চলেছিলেন আপন ছন্দে। তবে দারুণ শুরু করে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েও দুজনে ফেরেন অভিষিক্ত ক্লার্কসনের শিকার হয়ে। ১০ ওভারে ৭১ রান উঠে গেলে তার পরের ওভারেই এই পেসারের কিছুটা খাটো লেংথের বল পুল করতে গিয়ে তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৪৩ রানে থামেন বিজয়। ক্লার্কসনের পরের ওভারে স্লো বাউন্সার পড়তে না পরে আগেই ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে এরপর লিটন ২২ রানে ফিরলে আবারও রিভার্স সুইপের ব্যর্থতায় রবীন্দ্রর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক।
আশা যখন আর নেই বললেই চলে তখনই কিছুটা হলেও সেই আশার পালে হাওয়া লাগিয়েছিলেন হৃদয়-আফিফ জুটি। উইকেটে এসেই দারুণ সব আলতো ছোঁয়ায় বাউন্ডারি বের করে নিচ্ছিলেন আফিফ। তবে সোধির গুগলি পড়েও সুইপে সরাসরি ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগে ক্যাচ দিয়ে ৩৩ রানে হৃদয় থামলে পরের ওভারে ডাফিকে উইকেট উপহার দিয়ে ২৮ বলে ৩৮ রানে থামেন আফিফ। শরিফুলের আউট নিয়ে নাটকটাও বোধহয় ম্যাচের শেষাংশের সবচেয়ে উপভোগ্য অংশ ছিল। বাউন্সারে শরিফুলকে আউট দেওয়া হলে হাসান ততক্ষণে মাঠেও ঢুকে গিয়েছেন; তখনই টিভি আম্পায়ার বলের উচ্চতা মেপে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। রিপ্লেতে সেটা ঘাড়ের উপরেই দেখা যায়। তবে ওই ওভারেই মিলনের নাকল বলে বেরিয়ে এসে মাঠছাড়া করতে গেলে দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হন শরিফুল। লং অনে অন্ধকারের কারণে প্রথমে বলটা পড়তে পারেননি ইয়াং। তবে মুহূর্তেই পিছিয়ে গিয়ে এক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ তো নিলেনই, সেই সাথে অবিশ্বাস্যভাবে মাটিতে লুটিয়ে থাকা অবস্থায় শরীর বাকিয়ে দড়ির এপারেই থেকে গেলেন। ইয়াংয়ের দুর্দান্ত সেই ক্যাচের পরে মিরাজের ২১ বলে ২৮* রানের ইনিংসটা ব্যবধানই কমিয়েছে মাত্র।
এর আগে বৃষ্টির কারণে দেরিতে ম্যাচ শুরু হলে প্রথম ওভারেই বাংলাদেশের আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করে দেন শরিফুল। তার বেরিয়ে যাওয়া বল রবীন্দ্র উইকেটের পেছনে ঠেলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরলে এক বল পরে সেই হালকা সুইংয়ে নিকোলসকে সামনে টেনে এনে দ্বিতীয় স্লিপে তালুবন্দি করান শরিফুল। প্রথম স্পেল জুড়েই দারুণ বোলিং করে গিয়েছেন তিনি। ম্যাচ তখন ৪৬ ওভারে আসায় ৯ ওভারের পাওয়ারপ্লেতে নিউজিল্যান্ড তুলতে পেরেছিল ৩৫ রান।
তবে ১৩.৫ ওভারে ৬৩ রান তুলে নিউজিল্যান্ড যখন বৃষ্টিতে আবার দম ফেলার সুযোগ পেল সেটার পর থেকে বাংলাদেশি বোলারদের আর দম ফেলার সুযোগ দেননি ল্যাথাম-ইয়াং জুটি। ৪০০০ ওয়ানডে রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছিলেন ল্যাথাম; আর ১৯.২ ওভারে যেয়ে আরও একবার খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১০৯ রান তুলে ফেলেছিল কিউইরা। সেবার খেলা ৩০ ওভারে নেমে এলে এরপর আরও হাত খুলে খেলা শুরু করে তারা। এর মধ্যে আফিফকে বল দেওয়া হলে তার এক ওভারেই দুজনে মিলে নেন ১৭ রান। সেঞ্চুরির সুবাস পেতে থাকা ল্যাথাম অবশ্য রানের চাকা সচল রাখতে গিয়েই ফেরেন পরের ওভারে; মিরাজের বল স্টাম্পে ডেকে এনে থামেন ৭৭ বলে ৯২ রানের দারুণ ইনিংস শেষে।
তাতে অবশ্য রানের স্রোতে ভাটা পড়েনি একদম। উইকেটে এসেই মিরাজকে চার মেরে শুরু করা চ্যাপম্যান সেই কাজটা করেন ভালোভাবেই। সৌম্যকে বৃষ্টির পর থেকেই এক হাত নিয়ে কিউইরা নিজেদের কর্তৃত্ব ফলান অনায়াসেই। মাত্র ৩১ বলে এই জুটি ৫০ রান তুলে ফেললে ১১ বলে ২০ রানে রান-আউটের শিকার হয়ে ফেরেন চ্যাপম্যান। সেখান থেকেই যেন রান-আউটের হিড়িক পড়ে যায়; সৌম্যের শেষ ওভারে হয়েছে ৩টি রান-আউট! ইয়াং যথারীতি ৮২ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিলে তিনিই রান-আউটের শিকার হয়ে শেষ ওভারে প্রথম থামেন ৮৪ বলে ১০৫ রানের দারুণ ইনিংস শেষে। পরের ব্লান্ডেল ও অভিষিক্ত ক্লার্কসনের একই পরিণতি হলেও কিউইদের পাওয়া শক্ত ভিতে দাঁড়িয়েই জয় বের করে নিয়েছে তারা।