• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর, ২০২৩
  • " />

     

    নিকোলস-ইয়াংদের প্রায়-সেঞ্চুরিতে বিফলে সৌম্যের রেকর্ড সেঞ্চুরি

    নিকোলস-ইয়াংদের প্রায়-সেঞ্চুরিতে বিফলে সৌম্যের রেকর্ড সেঞ্চুরি    

    ২য় ওয়ানডে, নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ (টস-নিউজিল্যান্ড/বোলিং)
    বাংলাদেশ - ২৯১, ৪৯.৫ ওভার (সৌম্য ১৬৯, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ১৯, ও’রোয়ার্ক ৩/৪৭, ডাফি ৩/৫১, ক্লার্কসন ১/৩০)
    নিউজিল্যান্ড - ২৯৬/৩, ৪৬.২ ওভার (নিকোলস ৯৫, ইয়াং ৮৯, রবীন্দ্র ৪৫, হাসান ২/৫৭, শরিফুল ১/৪৯)
    ফলাফল - নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী


     

    নির্বিষ বোলিংয়ে নিষ্ফলা হয়ে রইল সৌম্য সরকারের রেকর্ড সেঞ্চুরি। নেলসনে নিজেদের আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করে বাংলাদেশের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য সহজেই পেরিয়ে গিয়ে সিরিজটাও নিশ্চিত করে ফেলল নিউজিল্যান্ড।

    ২৯২ রানের লক্ষ্যে কিউইদের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। আগের ম্যাচে রানের খাতা খুলতে না পারার আক্ষেপ ঘুচাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। হাসানকে মাঠছাড়া করে ফিফটি পূর্ণ করতে গিয়েই অবশ্য থামতে হয় তাকে। ডিপ মিড উইকেটে অভিষিক্ত রিশাদ হোসেনের দারুণ ক্যাচে ৩৩ বলে ৪৫ রানে তিনি থামলেও ১৭-তম ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। এরপরে অবশ্য ম্যাচে বাংলাদেশ সেই অর্থে সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ইয়াং; সেই সাথে আগের ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে আরেক ব্যাটার হেনরি নিকোলসও নিজের রানের খাতায় আরও কিছু দাগ কাটতে মুখিয়ে ছিলেন। ৫১ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর ইয়াং একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলে এরপর ৬৪ বলে ফিফটি পেয়ে যান নিকোলস। তবে সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে পিচ ধরে আসায় বলের গতি বুঝতে না পেরে হাসানকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৯৪ বলে ৮৯ রান শেষে থামেন ইয়াং। সেঞ্চুরি মিসের হতাশায় এরপর পোড়েন নিকোলসও; শরিফুলের বলে সেই ডিপ মিড উইকেটে ওই রিশাদকে ক্যাচ দিয়ে ৯৯ বলে ৯৫ রানে থামেন তিনি। তবে ৩৪* রান করে ল্যাথাম ও ২৪* রান করে ব্লান্ডেল বাকি পথটুকু পাড়ি দেন অনায়াসে।

    অথচ গল্পটা বাংলাদেশের জন্য অন্যরকম হলেও হতে পারত। দিনের শুরুটা সেরকম ইঙ্গিত না দিলেও সৌম্যের দৃঢ়তা সেই সুযোগটা তৈরি করেছিল ঠিকই। প্রথম পাওয়ারপ্লের পর মধ্যেই বাংলাদেশের তিন উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিকরা তাদের লজ্জার মুখেই ফেলার ফন্দি আঁটলেও সৌম্যের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। প্রথম ওভারেই যে চার মেরে রানের খাতা খুলেছিলেন তাতেই ছিল অনিশ্চয়তার ছাপ; তবে সময় যত গড়িয়েছে প্রতিকূলতা সামলে সৌম্য ততটাই মেলে ধরেছিলেন নিজেকে। ২ রানে বিজয়, ৬ রানে  শান্ত ও লিটনের বিদায়ের পর ধৈর্য না হারিয়ে বলের গতিকে কাজে লাগিয়ে দারুণ সব বাউন্ডারি বের করে নিয়েছিলেন। তার স্ট্রেইট ড্রাইভটা যখন ক্লার্কসনের ট্রাউজার ছুঁয়ে অন্য প্রান্তে স্টাম্প ভেঙে দেওয়ায় হৃদয়কে ফিরতে হয়েছিল, তখন থেকেই দায়িত্ব নিয়ে বড় কিছু করার চেষ্টাটা পরিস্কার ছিল। সেই সাথে মুশফিক এসে সময় নিলেও পরে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গ।

    ২০১৯ সালের পর এরপর সৌম্য ওয়ানডেতে প্রথম ফিফটি পেয়ে যান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ ফিফটিটাও ছিল এই দলের বিপক্ষে, এই দেশেই। ইনিংসটা অবশ্য বড় নাও হতে পারত ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে। ২১-তম ওভারে সৌম্যের ড্রাইভে ঝাঁপিয়ে পড়েও বল লুফে নিতে পারেননি রাচিন; তিন ওভার পরে ব্যাটে-বলে সংযোগ করতে না পারলেও মিড অফ থেকে মিলনে পেছনে দৌড়ে বল লুফে নিতে না পারায় সেই যাত্রায় বেঁচে যান সৌম্য। এরপরে আবার ডাফির সামান্য বেরিয়ে যাওয়া বলে টোকা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক ৪৫ রানে থামলেও সৌম্য যেন ছিলেন নির্বিকার!

    তার এই ভয়ডরহীন ব্যাটিংটাই দিন শেষে তাকে এনে দিয়েছে সাফল্য। ২০১৮ সালের পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পেয়ে যান ঠিকই; ৩য় ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা আসে ১১৬ বলে। রান রেট বাড়াতে আবারও বেধড়ক পিটুনির পথ বেঁচে নিতে গিয়ে আকাশে বল ভাসালেও আগের দিনে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেওয়া ইয়াং পয়েন্টে তুলনামূলক সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি। সেখান থেকে উইকেটের চারপাশে সব বাউন্ডারি বের করে দেড়শো রানের মাইলফলকও পেরিয়ে যান সৌম্য। শেষ ওভারে ও'রোয়ার্ককে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে যখন ফিরলেন তখন নিউজিল্যান্ডের মাঠে যেকোনো সফরকারী ব্যাটারের হয়েই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ওয়ানডে ইনিংস খেলে ফেলেছেন, যেটা একইসাথে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ; শচীনকে ছাপিয়ে নিউজিল্যান্ডে যেটা যেকোনো এশিয়ান ব্যাটারের জন্য সর্বোচ্চ। দিন শেষে অবশ্য বাংলাদেশের ধারবিহীন বোলিংয়ে কাজে আসেনি ১৫১ বলে ১৬৯ রানের এই অবিস্মরণীয় ইনিংস।