• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কেমন হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাট?

    কেমন হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাট?    

    আগামী মৌসুম থেকে পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। থাকছে না কোনো গ্রুপ পর্ব। তবে বাড়ছে দলের সংখ্যা, ম্যাচের সংখ্যা।

    নতুন ফরম্যাটে দলের সংখ্যা ৩২ থেকে ৩৬ করা হয়েছে। এই ৩৬ দলকে কোনো গ্রুপে ভাগাভাগি করা হবে না। সবাইকে নিয়ে হবে একটি লিগ পর্ব। ৩৬ দলের সমন্বয়েই হবে পয়েন্ট টেবিল। তবে রেগুলার লিগের মতো সবার সঙ্গে সবাই খেলবে না। প্রতিটি দল খেলবে আটটি করে ম্যাচ। কোন আট দলের সঙ্গে, তা নির্ধারিত হবে জটিল এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

    লিগ পর্ব: সুইস মডেল  

    ৩৬ দলকে চারটি পটে ভাগ করা হবে। প্রথম পটে থাকবে আগের মৌসুমের ইউসিএল চ্যাম্পিয়ন ও উয়েফা কো-ইফিসিয়েন্ট র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ আট দল। পরের পটগুলোও কোএফিসিয়েন্টের ধারা মেনেই।

    উয়েফা কোএফিসিয়েন্ট র‍্যাংকিং করা হয় সাম্প্রতিক উয়েফা কম্পিটিশনগুলোয় ক্লাবগুলোর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। পূর্বের সব লিগ চ্যাম্পিয়নদের রাখা হতো প্রথম পটে। কিন্তু নতুন ফরম্যাটে উয়েফা কম্পিটিশনের বড় দল কারা, সেই হায়ারার্কি মেনে সাজানো হবে পট।

    প্রতি পট থেকে দুটি করে দল তোলা হবে সব দলের জন্য। এই আট দলের সঙ্গেই হবে তাদের লিগ পর্বের ম্যাচ। আট ম্যাচের চারটি হবে হোমে, আর চারটি অ্যাওয়ে গ্রাউন্ডে। কোন ম্যাচ কোথায় হবে, তাও নির্ধারিত হবে ড্রয়ের সময়েই।

    লিগ পর্বের এই মডেলকে বলা হয় সুইস মডেল। সুইজারল্যান্ডের দাবা টুর্নামেন্ট থেকে ধার করা হয়েছে এই ফরম্যাট। 
     

    বর্তমান ফরম্যাটের সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে গ্রুপ পর্ব যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক না। কারা নক-আউটে যাবে, সিংহভাগ গ্রুপে তা যেন নির্ধারিত হয়ে যায় ড্রয়ের সঙ্গে সঙ্গেই । সুইস মডেলে এই সুবিধা থাকছে না। প্রথম পটের দলগুলোর খেলতে হবে একই পটের আরও দুই দলের সঙ্গে। যার মানে ইউরোপের শীর্ষ দলগুলো লিগ পর্বেই খেলবে একে-অপরের সাথে। 

    তবে এখানেও নিজ দেশের ক্লাবের সঙ্গে ড্র হবে না লিগ পর্বে। তবে এক দেশ থেকে চারটির বেশি দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা পেলে তাদের একটি ম্যাচ নিজ দেশের ক্লাবের সঙ্গে পড়তে পারে।

    সুইস মডেলে ৩৬ দলের সম্মিলিত লিগ টেবিল হবে। সেখান থেকে শীর্ষ ২৪ দল যাবে নক-আউটে। নিচের ১২ দল ইউরোপ থেকে পুরোপুরি বাদ পড়ে যাবে, তাদের জন্য ইউরোপা লিগ বা অন্যকিছু থাকছে না। 

    নক-আউট পর্ব 

    আট ম্যাচ শেষে টেবিলের শীর্ষ ৮ দল সরাসরি শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিবে। আর পরের ১৬ দল খেলবে একটি বাড়তি প্লে-অফ রাউন্ড। 

    প্লে-অফ রাউন্ডে লিগের ৯ থেকে ১৬তম দলকে একটি পটে রেখে এবং ১৭ থেকে ২৪তম দলকে একটি পটে রেখে ড্র অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে হোম-অ্যাওয়ে ভিত্তিতে নক-আউট ম্যাচ খেলবে প্রতিটি দল। এখানে উপরের আট দলের (৯ থেকে ১৬) একটি সুবিধা থাকছে, তারা দ্বিতীয় লেগ খেলবে হোমে। 
     

    প্লে-অফে বিজয়ী ৮ দল জায়গা করে নিবে শেষ ষোলোতে। যেখানে শীর্ষ ৮ দলের সঙ্গে তাদের শেষ ষোলোর ড্র অনুষ্ঠিত হবে। নিজ দেশের ক্লাবের সঙ্গে ড্র হবে না, এরকম কোনো নিয়ম থাকছে না প্লে-অফ বা শেষ ষোলোর ড্রতে। শেষ ষোলো থেকে পরবর্তী ধাপগুলো বর্তমান ফরম্যাটের মতো করেই হবে। 

    নতুন ফরম্যাটে ম্যাচ সংখ্যা প্রায় দেড়গুণ বাড়বে। পূর্বের মডেলে মোট ম্যাচ ছিল ১২৫টি, আর সুইস মডেলে প্রতি আসরে মোট ১৮৯টি ম্যাচ দেখবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। প্রতিটি দল অন্তত আটটি করে ম্যাচ খেলবে। জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে লিগ পর্ব। 

    কেন এই ফরম্যাট ?

    বেশি ম্যাচ মানেই বেশি অর্থ। উয়েফার জন্য, অংশগ্রহণকারী ক্লাবদের জন্যও। আর নতুন ফরম্যাটকে আগের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা হয়েছে। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো লিগ পর্বেই নিজেদের মাঝে খেলবে, যা পূর্বে নক-আউট পর্ব ছাড়া তেমন দেখা যেত না। এছাড়া লিগ টেবিলের অবস্থান- শীর্ষ ৮, শীর্ষ ১৬, শীর্ষ ২৪; প্রতিটির আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। যে কারণে শেষদিন পর্যন্ত লড়তে হবে প্রায় ক্লাবকে।    

    বাড়তি চার দল কীভাবে আসবে? 

    ৩৬ দলের মধ্যে ৩২ দল আগের ধারা অনুযায়ীই নির্বাচিত হবে। বাকি চার স্পটের দুটি পাবে উয়েফা প্রতিযোগিতায় পূর্বের মৌসুমে যেই দুই লিগের ক্লাবরা সবচেয়ে ভালো করেছে, সেই দুই লিগ। কেতাবি ভাষায় একে উয়েফা অ্যাসোসিয়েশন ক্লাব কোএফিশিয়েন্ট র‍্যাংকিং বলে। এই র‍্যাংকিংয়ে বর্তমানে শীর্ষ দুই লিগ বুন্দেসলিগা ও সিরি আ। মৌসুম শেষে তারাই শীর্ষে থাকলে, এই দুই লিগ বাড়তি দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ স্পট পাবে। অর্থাৎ, অটোম্যাটিক চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বাছাই হওয়া দলগুলোর বাইরে যারা টেবিলে সর্বোচ্চ পজিশনে থাকবে, তারা সরাসরি জায়গা পাবে। 

    বাকি দুই স্পটের একটি যাবে ইউয়েফা র‍্যাংকিংয়ের পঞ্চম লিগের তৃতীয় দলের কাছে। গত মৌসুমে যেটি ছিল লিগ ওয়ানের মার্সেই। এই নিয়ম থাকলে মার্সেই এবার সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সুযোগ পেত। সর্বশেষ স্পটটি যাবে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে।