• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    বড়দিনে শুধু ইংল্যান্ডেই ফুটবল কেন হয়?

    বড়দিনে শুধু ইংল্যান্ডেই ফুটবল কেন হয়?    

    পশ্চিমা দেশগুলোয় বছরের সবচেয়ে বড় ছুটির সময় বড়দিন বা ক্রিসমাস। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহকে এক কথায় ‘ফেস্টিভ পিরিয়ড’ বলা হয়। ইউরোপের সব লিগেই এই সময়টায় থাকে শীতকালীন ছুটি। কিন্তু ব্যতিক্রম ইংল্যান্ড। বছরের এই সময়টায় যেন ম্যাচের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে প্রিমিয়ার লিগে। কিন্তু কেন?

     

    সত্যি কথা বলতে ইংল্যান্ডে ক্রিসমাসের সময়টায় ফুটবল খেলার ট্র্যাডিশন অনেক পুরনো। সেই মধ্যযুগ থেকেই চলে আসছে এই প্রচলন। ব্রিটিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম ১৮৬৩ সালে। কিন্তু এর আগেও ফুটবল ছিল। ফুটবলের সেসব ভার্সনকে এখন মধ্যযুগীয় ফুটবল, মব ফুটবল এরকম বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। 


    তো সেই সময় থেকেই ক্রিসমাসের ছুটিতে বড় বড় ম্যাচ আয়োজন করা হতো। কিছু ঐতিহ্যবাহী ম্যাচ এখনো খেলা হয় প্রতিবছর।  
    শুরু থেকেই ফুটবলের মূল প্রাণ ছিল শ্রমজীবি মানুষ। ভিক্টোরিয়ান যুগে ফুটবল তাদের লাইফস্টাইলেরই অংশ হয়ে উঠে। । বছরের সবচেয়ে উৎসবমুখর সময়টায় ফুটবল থাকবে না, তা হতে পারে না।  


    ব্যাপারটা ইংলিশ ডিএনএ’র এতই বড় অংশ, এমনকি যুদ্ধ চলাকালেও আছে ক্রিসমাসে ফুটবল খেলার দৃষ্টান্ত। ১৯১৪’র ক্রিসমাস ইভে ব্রিটিশ ও জার্মান সৈনিকদের এই ফুটবল ম্যাচ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ক্রিসমাস ট্রুস হিসেবে

    ।  
    ক্রিসমাস, বক্সিং ডে এবং এর আশেপাশে দু-একদিন সাধারণত সরকারী ছুটি পেত সবাই। তাই এই সময়টাতে ম্যাচের পর ম্যাচ রাখত ক্লাবগুলো। টানা তিন দিনে তিন ম্যাচ, এমনও হয়েছে অহরহ। 


    যেমন, ১৯১৩ সালে ক্রিসমাস ডে’তে ম্যান সিটির বিপক্ষে খেলে লিভারপুল। হোমে ৪-২ গোলে জেতার পরদিনই তারা আবার রিটার্ন লেগ খেলতে যায় ম্যানচেস্টারে। সেই ম্যাচে হার। পরদিন হোমে আবার ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের মুখোমুখি হয় তারা। 


    বুঝতেই পারছেন, ফুটবল ছিল উৎসবেরই অংশ। তবে, এটা ধর্মীয় হলিডেও। তাই ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য ধরে রাখতে কেউ খেলতে না চাইলে সেটাও মেনে নেওয়া হতো। সে সময়ে এফএ’র একটি আইনই ছিল এমন, ক্রিসমাসে কোনো খেলোয়াড় বা ক্লাবকে খেলতে বাধ্য করা যাবে না।  


    ক্রিসমাসে ফুটবল খেলার এই ট্র্যাডিশন কিন্তু আবার যুক্তরাজ্যের বাইরে ছড়ায়নি। ইউরোপের আর কোথাও এই সময়ে ফুটবল চলে না। এর পিছনে বেশ কিছু কারণ আছে। ইউরোপের বাকি দেশগুলোয় ফুটবল এতো ডিপ-রুটেড না। মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সিংহভাগ দেশে জনপ্রিয় হয়েছে ফুটবল। আর কোনো দেশ এতটা ফুটবল-পাগলও না। 


    দ্বিতীয়ত, আবহাওয়ার দিক বিবেচনায় এই সময়টা ফুটবলের জন্য ঠিক আইডিয়াল না। ইউরোপের প্রায় জায়গায় তীব্র শীত ও তুষারপাত হয় ডিসেম্বরের শেষদিকটায়। যে কারণে, প্রায় লিগেই তখন শীতকালীন ছুটি থাকে। 


    আধুনিক সময়ে ক্রিসমাস বদলেছে। বদলেছে উৎসবের ধরনও। সাধারণ মানুষ আউটডোর প্রোগ্রামের চেয়ে বাসায় পরিবারের সঙ্গে ক্রিসমাস উদযাপনটাই বেশি প্রেফার করে। কিন্তু এখন আর শ্রমজীবি শ্রেণির লাইফস্টাইলের উপর নির্ভর করে ফিক্সচার সাজানো হয় না। লিগের ফিক্সচার পুরোপুরিই ব্রডকাস্টারদের উপর নির্ভরশীল।  


    আর এই ব্রডকাস্টারদের জন্যও ক্রিসমাসের সময়টা বেশ লাভজনক। কারণ তখন সবার ছুটি থাকে, টিভি ভিউয়ারশিপ বেশি থাকে। আর এ সময়টায় ইউরোপের অন্য সব লিগ বন্ধ থাকায় ফুটবলের চাহিদাও বেশি থাকে বৈশ্বিক মার্কেটে। যে কারণে ট্র্যাডিশন ধরে রেখে এই ফেস্টিভ পিরিয়ডে এক গাঁদা ফিক্সচার রাখা অব্যাহত রেখেছে প্রিমিয়ার লিগ।   


    কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসব ফিক্সচার নিয়ে তুমোল সমালোচনা হচ্ছে। এমনিতেই শীর্ষ দলগুলোর জন্য মৌসুমব্যাপী ম্যাচের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তার উপর ক্রিসমাসের এই সময়টায় সপ্তাহে তিন ম্যাচ বা ১০ দিনে ৪ ম্যাচ খেলতে হচ্ছে প্রায় দলের। 


    অনেক ম্যানেজারই দাবি করেছেন, খেলোয়াড়দের রিকভারির জন্য পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে এরকম দু-তিন দিন পর পর ম্যাচ রাখাটা স্বাস্থ্যকর না। এতে খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে পরার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর এত অল্প সময়ে ম্যাচের প্রস্তুতিও ঠিকমতো হয় না।  
    জোসে মরিনহো, পেপ গার্দিওলা, ইয়ুর্গেন ক্লপ, মরিসিও পচেত্তিনো, ডেভিড ময়েসের মতো অনেক ম্যানেজারই এই ফেস্টিভ পিরিয়ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, এবং প্রতি মৌসুমেই জানিয়ে আসছেন।  


    কিন্তু এরপরও এই জায়গায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা খুবই কম। খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের চেয়ে হাজার বছরের ইংলিশ ট্র্যাডিশন ও ব্রডকাস্টারদের অর্থ, এই দুটি জিনিস বেশি মূল্যবান এফএ’র কাছে।