• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর, ২০২৩
  • " />

     

    ওয়ার্নার-পরবর্তী যুগে অস্ট্রেলিয়ার নতুন টেস্ট ওপেনার হবেন কে?

    ওয়ার্নার-পরবর্তী যুগে অস্ট্রেলিয়ার নতুন টেস্ট ওপেনার হবেন কে?    

    দারুণ এক ক্যারিয়ার শেষে টেস্ট, ওয়ানডেকে বিদায় জানালেন ডেভিড ওয়ার্নার। ওয়ানডেতে গত বছর থেকেই মিচেল মার্শ, ক্যামেরন গ্রিনদের ওপেনিংয়ে বাজিয়ে দেখায় ওই জায়গাটা নিয়ে এখন অতটা ভাবছে না অস্ট্রেলিয়া। তবে টেস্টে এই বিশাল শূন্যস্থান পূরণে অস্ট্রেলিয়াকে ভাবতে হচ্ছে দ্রুতই। সামনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ;সেই সাথে তাদের দ্রুতই খুঁজতে হবে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। এরকম একটা জায়গা তো অত সহজে পূরণ হবার নয়; সেই সাথে টেস্টে ওপেনারের মত কঠিন এক চ্যালেঞ্জও তো আর যাকে তাকে ছুঁড়ে দেওয়া যায়না। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের তাই মাথা চুলকাতে হচ্ছেই। তবে তাদের জন্য সুখের খবর এটাই - অপশনের অভাবও নেই।

     

    স্টিভ স্মিথ

    তালিকার শুরুতেই এই নামটা দেখে আপনার হয়ত এখনি চক্ষু চড়কগাছ। ভড়কাবার কিছু নেই! হয়ত শেষমেশ তিনি চার থেকে উঠে এসে ওপেন করবেন না। তবে স্টিভ স্মিথ যখন আবদার করেন, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে তো ভেবে দেখতেই হয়। শুধুমাত্র একারণেই এখানে তার নাম। ডেভিড ওয়ার্নারের বিদায়-বাঁশি বাজতেই স্মিথ জানিয়েছেন দলের প্রয়োজনে তিনি ওপেন করতে প্রস্তুত। এমনকি নিজেই জানান দিয়েছেন ব্যাটিং অর্ডারে উঠে এসে ওপেন করতে চান। তর্কসাপেক্ষে এই প্রজন্মের সেরা টেস্ট ব্যাটার, রিকি পন্টিং-পরবর্তী যুগে নিঃসন্দেহে অস্ট্রেলিয়ার সেরা তো বটেই, এমনকি অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসেরই সেরা টেস্ট ব্যাটারদের একজন তিনি। সাফল্যের সিংহভাগ এসেছে তিন, চারে ব্যাট করে। লাবুশেনকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে একবার চারে নেমেছেন; দলের প্রয়োজনে তিনি যে তাই অন্য জায়গায় খেলতে রাজি সেটা বলাই বাহুল্য। বাধা একটাই - অজিদের হয়ে কখনই ওপেন করেননি তিনি। তবুও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই পরীক্ষাটা অস্ট্রেলিয়া করে দেখতেই পারে।

     

    ক্যামেরন গ্রিন

    মিচেল মার্শের কাছে জায়গা খুইয়েছেন সেই অর্থে কোনও দোষ ছাড়াই। তবে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ভাবা হয় তাকে। সেই সাথে টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডেতে দলের হয়ে ওপেন করেছেন। গ্রিন যে দলের প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় ব্যাট করতে পারেন সেটা অস্ট্রেলিয়া দলের সবার জানা। সেই সাথে তার বোলিংটাও অজিদের আক্রমণে ধার জোগাবে।  অ্যাশেজে অসামান্য এক সেঞ্চুরির পর এবারও দুর্দান্ত খেলা মিচেল মার্শ তার ভূমিকায় অটল থাকছেন বলাই যায়। গ্রিনের মত প্রতিভাকে দলে ভেড়াতে কোচ স্বয়ং জানান দিয়েছেন গ্রিনকে দিয়ে ওপেন করানোর ইচ্ছার কথা।

     

    ট্রাভিস হেড

    ওপেনার হিসেবে তিনি কি করতে পারেন সেটা ক্রিকেট বিশ্ব এখন ভালমতই জানে। ফাইনালে তাণ্ডব চালিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হেক্সা-মিশনের নায়ক তো ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন ওপেনার হিসেবে। তবে টেস্টে তিনি সেই অর্থে ওপেন করেননি। এমনকি শিল্ডেও রেডব্যাকসদের হয়ে তিনি মিডল অর্ডারেই খেলেন। অস্ট্রেলিয়া দলেও মিডল অর্ডারে তার ভূমিকা রানের গতি বাড়ানো। টেস্টেও তাই তিনি নিজের স্বভাবজাত খেলাটা খেলেন। তবে ওয়ার্নারের বদলি যখন খোঁজা হচ্ছে তখন কিন্তু হেডের মত কাউকেই চাইবে অস্ট্রেলিয়া। সদ্য সাবেক ওপেনারের ৭০.১৯ স্ট্রাইক রেটটা যে টেস্টের ইতিহাসেই চতুর্থ সর্বোচ্চ। তবে হেড নিজে টেস্টে ওপেন করতে অতটা ইচ্ছুক না। সেই সাথে অস্ট্রেলিয়া হয়ত তার নিজের ভূমিকাতেই হেডকে আরও জরুরী মনে করবে।

    ওপেনার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রেকর্ড:

    ম্যাচ: ৩

    রান: ২২৩

    ব্যাটিং গড়: ৫৫.৭৫

    সেঞ্চুরি: ০

    সর্বোচ্চ: ৯০

     

    ম্যাথিউ রেনশ

    সেই ২০১৬ সালে ব্যাগি গ্রিনটা মাথায় চড়িয়েছিলেন। শুরুটা প্রতিশ্রুতিশীল হলেও এশিয়ার চ্যালেঞ্জটা পরে সেই অর্থে নিতে পারেননি। ভারতের বিপক্ষে ২০১৭ সালে তাদের মাটিতে ফিফটি পেলেও পরে বাংলাদেশ সিরিজে একেবারেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও ব্যর্থ হলে সেখানেই তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। তবে এরপর শেফিল্ড শিল্ডে কুইন্সল্যান্ড বুলসের হয়ে পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করা শুরু করে নিজের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনাটায় চড়িয়েছেন নতুন মাত্রা। সেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই পাঁচ বছর পর ফিরেছিলেন দলে। স্পিনের বিপক্ষে তার দক্ষতার জন্য ভারত সফরেও আবার নিয়ে যাওয়া হল তাকে। বাদও পড়েছিলেন সিরিজের মাঝে; তবে ভাগ্যের কী দারুণ খেল! যেই ওয়ার্নারের বিদায়ে দলে ফেরার সম্ভাবনা নতুন করে জেগেছে সেই ওয়ার্নারের কনকাশন হওয়াতেই ওই সিরিজে আবারও দলে ফিরেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজের আগেই প্রাইম মিনিস্টার একাদশের হয়ে দারুণ এক সেঞ্চুরি করে জোরেশোরেই দলে ফেরার হাঁকডাক দিয়েছেন। তবে প্রতিবন্ধকতা একটাই - বহুদিন ধরেই ওপেন করেন না তিনি। তবে এর আগে ওপেন করেই অজিদের হয়ে তার সেঞ্চুরির কথাটা হয়ত অ্যান্ড্রু ম্যাকডোলান্ডরা মাথায় রাখবেন।

    ওপেনার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রেকর্ড:

    ম্যাচ: ১১

    রান: ৬০৫

    ব্যাটিং গড়: ৩৩.৬১

    সেঞ্চুরি: ১

    সর্বোচ্চ: ১৮৪

     

    মার্কাস হ্যারিস

    শিল্ডে বহুদিন ধরেই রানের বন্যা বইয়েই দলে জায়গা পেয়েছিলেন। তবে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার নিষ্প্রভ ব্যাটিংয়ের মাঝে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়া ছাড়া নামের প্রতি খুব একটা সুবিচার করতে পারেননি হ্যারিস। যেই অ্যাশেজে খাওয়াজাকে জায়গা করে দিতে জায়গা খুইয়েছিলেন সেই সিরিজেই মেলবোর্নের ভয়ঙ্কর এক পিচে ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে অবশ্য নিজের সামর্থ্যটা দেখিয়েছিলেন। তবে শিল্ডেও ফর্মটা কিছুটা পড়তি হওয়ার কারণে দলে ফেরা নিয়ে তিনি হয়ত শঙ্কিত হতে পারেন। শঙ্কা লাঘবের দায়িত্বটাও অবশ্য শেষবেলায় কাঁধে নিয়েছিলেন জায়গা ছেড়ে দেওয়া ওই ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়া যদি তার জায়গায় কোনও প্রচলিত ওপেনার খোঁজে তাহলে বহু বছর ধরে ওপেন করা আসা এই ভিক্টোরিয়ার ওপেনারকেই বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

    ওপেনার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রেকর্ড:

    ম্যাচ: ১৪

    রান: ৬০৭

    ব্যাটিং গড়: ২৫.২৯

    সেঞ্চুরি: ০

    সর্বোচ্চ: ৭৯

     

    ক্যামেরন ব্যানক্রফট

    যেই ওয়ার্নারের শূন্যস্থান পূরণ নিয়ে কথা হয়েছে সেই তারই ওপেনিং সঙ্গী ছিলেন তিনি; কুখ্যাত সেই 'স্যান্ডপেপার-গেট' তাকে দল থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল একইসাথে। ভাগ্যের চক্রপূরণে আবারও পুরনো সঙ্গীর বিদায়েই দলে ফেরার দৌড়ে ফিরেছেন ব্যানক্রফট। এবারের শিল্ডে দলকে ফাইনালের দৌড়ে রেখেছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ৯ ম্যাচে ৫১২ রান করে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। দলে ফেরার জন্য দাবীটা তাই জোরের সাথেই জানাচ্ছেন ব্যানক্রফট। শর্ট লেগ বা সিলি পয়েন্টের দুর্দান্ত এই ফিল্ডার যে দলের স্বার্থে নিজেকে নিংড়ে দেবেন সেটা নিয়ে অজিদের কোনও সন্দেহ নেই। শাপ মোচনের সুযোগ যেমন ওয়ার্নার, স্মিথরা পেয়েছিলেন ব্যানক্রফট আশা করবেন দেরিতে হলেও তারও এবার খুলবে ভাগ্য।

    ওপেনার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রেকর্ড:

    ম্যাচ: ১০

    রান: ৪৪৬

    ব্যাটিং গড়: ২৬.২৩

    সেঞ্চুরি: ০

    সর্বোচ্চ: ৮২*