চলে গেলেন জার্মান কিংবদন্তি বেকেনবাওয়ার
৭৮ বছর বয়সে অনন্তকালের পথে মহাযাত্রায় শামিল হলেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। 'ডের কাইজার' তর্কাতীতভাবে জার্মানির সর্বকালের সেরা তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত ছিলেন তিনি।
ফুটবল ইতিহাসের অনন্য এক প্রথম-এর দেখা মিলেছিল তার সুবাদেই - প্রথম মানব হিসেবে অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। জার্মানির হয়ে ১০৬ ম্যাচ খেলা এই কিংবদন্তি ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জেতার আগে ১৯৭২ ইউরোও জিতেছিলেন। সেসবের সুবাদে ১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে জিতেছিলেন ব্যালন ডি'অর। অধিনায়ক হিসেবে জার্মানিকে তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ এনে দেবার ১৬ বছর পর ইতালির মাটিতে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনাল জিতে কোচ হিসেবে এনে দিয়েছিলেন জার্মানদের তৃতীয় বিশ্বকাপ।
জার্মানির হয়ে বিশ্ব ও ইউরোপ জয় তো করেছিলেন বটেই, সেই সাথে প্রিয় ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের হয়েও ফুটবলে রাজ করেছিলেন। তবে শুধু শিরোপা জয়েই নয়, 'ডের কাইজার' ছিলেন ফুটবলের ইতিহাস বদলে দেওয়া কতিপয় সেই কালোত্তীর্ণ খেলোয়াড়দের একজন। সুইপার পজিশনটা ফুটবলে আনার পাশাপাশি তার পদযুগলেই বিশ্ব পরিচিত হয়েছিল নতুন এক ভুমিকার সাথে।
যাবার কালে তাই শুধু তার সময়ের নয়, তার শিস্য, গোটা এক প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকায় কাঁদালেন সবাইকেই। গিসলিংয়ে জন্ম নেওয়া বাভারিয়ানদের অনুগত সেবক তাই বাভারিয়ানদের হৃদয়ে আছেন আলাদাভাবেই। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউজের কণ্ঠে বিল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক কোচকে নিয়ে তাই হাহাকার, "ফ্রাঞ্জের শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না জানি; তবুও এই শোক সহজেই কাটবার নয়। গোটা জার্মানিই অনেক বড় একটা সম্পদ হারাল; ফুটবলের জন্য এটা বিশাল এক ক্ষতি। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ও কোচ তো বটেই, মাঠের বাইরেও তিনি ছিলেন অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব।"
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে ফুটবলের সাথে সম্পর্কের পাট চুকানোর পর অবশ্য বেকেনবাওয়ার জড়িয়ে পড়েছিলেন বেশ কিছু বিতর্কে। ১৯৯৮ সালে জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হওয়ার পর সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৬ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ আয়োজনের বিড সফল করায় তার ছিল অবদান। পরে অবশ্য এখানেই উঠেছিল ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ। শুধু তাই নয় সুইস অফিশিয়ালরা ২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আয়োজক করার বিডেও পেয়েছিল বেকেনবাওয়ারের ঘুষের প্রমাণ। ২০১৪ সালে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে নব্বই দিনের জন্য ফিফা বরখাস্ত করেছিল তাকে।
তবে এসব ছাপিয়ে জার্মানরা তাকে মনে রেখেছে তাদের মাটিতে জন্ম নেওয়া শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে। শুধু জার্মানরাই নয়, ফুটবল বিশ্ব তাকে মনে রেখেছে খেলাটার অবিসংবাদিত কিংবদন্তি হিসেবে, একজন যুগান্তকারী হিসেবে, আর খেলাটার একজন অগ্রগামী নায়ক হিসেবে। কিংবদন্তির প্রয়াণে তাই পুরো ফুটবল বিশ্বেই নেমেছে শোকের মাতম।