অভিজ্ঞরাই জেতালেন, অভিজ্ঞরাই ডুবালেন
বিপিএল ২০২৪
১ম ম্যাচ (টস - চট্টগ্রাম/ফিল্ডিং)
দুরন্ত ঢাকা - ১৩৬/৮, ২০ ওভার (ক্রুপসুলে ৪৬, শুক্কুর ২৭, তাসকিন ১৫, আল-আমিন ২/১৫, বিলাল ২/২৮, ক্যাম্ফার ১/১০)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স - ১৩৭/৪, ১৮.২ ওভার (তামিম ৪৯, নাজিবউল্লাহ ৩২*, দীপু ২২, শরিফুল ২/৪০, কাদির ১/১৬, তাসকিন ১/২৬)
ফলাফল - চট্টগ্রাম ৬ উইকেটে জয়ী
২য় ম্যাচ (টস - খুলনা/ব্যাটিং)
ফরচুন বরিশাল - ১৮৭/৪, ২০ ওভার (মুশফিক ৬৮*, তামিম ৪০, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মুকিদুল ১/৩৪, থমাস ১/৩৮, নাসুম ১/৪১)
খুলনা টাইগার্স - ১৮৮/২, ২০ ওভার (বিজয় ৬৩*, লুইস ৫৩, আফিফ ৪১, ইমরান ২/৩৫)
ফলাফল - খুলনা ৮ উইকেটে জয়ী
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-তামিমের রান পাওয়ার দিনে মালিকের বিদঘুটে ওভার
বরিশালের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা তাদের অভিজ্ঞতা। দলে রয়েছেন বাংলাদেশের তিন অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনজনই আজ রান পেয়েছেন। শুরুতেই উইকেট পড়ে যাওয়ায় তামিম আগের দিনের মত ততটা আক্রমণ না করলেও ৩৩ বলে ৪০ রানে ইনিংস খেলার পথে বিপিএলের ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১৯ বলে ২৭ রানের দারুণ এক ইনিংস; থমাসের গতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেরেছেন এক ওভারে দুটো ছয়। তবে সবাইকে ছাপিয়ে মুশফিক দেখিয়েছেন ইনিংস গড়ার পারদর্শিতা। ৩২ বলে ফিফটি করে শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন।
১৮৮ রানের লক্ষ্য বেঁধে জয় ছাড়া অন্য কিছু বরিশালের ভাবার কথা না। তবে লুইসের ধ্বংসাত্মক ইনিংসে দিশেহারা হয়ে আর ঘুরেই দাঁড়াতে পারেনি তামিমের দল। সেটার জন্য অবশ্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হয় চতুর্থ ওভারে মালিকের বিশৃঙ্খল বোলিং। একজন অফ স্পিনার হয়ে তিন তিনটা নো বল করেছেন, ওভারে যদিও গুনেছেন ১৮ রান। তবে লুইস সেখানেই যে প্রতিপক্ষের ওপর এক হাত নিয়ে ফেলেছেন সেটা তো এখন জানাই। এরপরের ওভারেই রাকিবুলকে তুলোধোনা করে নিলেন ২১ রান। আসরের দ্রুততম ফিফটি করে যেই ভিত তৈরি করে দিলেন, পাওয়ারপ্লেতে আসরের সর্বোচ্চ সংগ্রহ এনে দিয়ে খুলনাকে যেভাবে পথ দেখালেন সেই পথে হেঁটেই বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছেন বিজয়। অধিনায়ক খেলেছেন দারুণ এক ইনিংস, তবে লুইসকে আলাদা করে ধন্যবাদ তিনি দিবেন। আর সেই সাথে অভিজ্ঞ মালিককেও দিবেন ধন্যবাদ।
বোলাররাই নায়ক, বোলাররাই খলনায়ক
বরাবরের মত দিনের প্রথম ম্যাচটাও আজও সেই অর্থে রান ওঠেনি। সেই ১৪০-এর আশেপাশেই ঘুরঘুর করেছে দুই দন। বোলাররাই তাই হেসেছেন ওই ম্যাচে। অনেকটা সেই কারণেই তানজিদ হাসান তামিমের ৪০ বলে ৪৯ রানের ইনিংসের জন্য হয়েছেন ম্যাচ সেরা। ব্যাট হাতে ঢাকা আল-আমিন হোসেন ও শুভাগত হোমকে কোনও জবাবই দিতে পারেননি। মাঝে লাসিথ ক্রুস্পাল্লের ৪৬ রানে যা একটু লড়াইয়ের রসদ পেয়েছিল তারা।
সেই রসদ নিয়েই বোলাররা অবশ্য শুরু থেকেই চেপে ধরেছিলেন। তিন ওভারের মধ্যেই শরিফুলের দারুণ স্পেলে ফিরেছিলেন চট্টগ্রামের দুই ব্যাটার। তবে সেখান থেকে তামিম যে হাল ধরলেন এরপর আর পা হড়কায়নি চট্টগ্রাম; উইকেট বুঝেই লড়ে গিয়েছেন ব্যাটাররা। শেষদিকে অবশ্য সেই বাঁহাতির বিপক্ষে ডানহাতি অফ স্পিনের কৌশল অবলম্বন করতে গিয়েই পস্তাতে হয়েছে ঢাকাকে। খেলা যখন একটু কঠিন হয়ে আসছিল তখন ১৮-তম ওভারে চতুরঙ্গ ডি সিলভাকে আক্রমণে আনা হলে দুই ছয়ে ওই ওভারেই নাজিবউল্লাহ নিলেন ১৪ রান। পরের ওভারে শরিফুলকেও ছয় মেরে আর কোনও সুযোগ দেননি এই আফগান।
রাতের ম্যাচে রান - ফিরবে বিপিএলের জৌলুশ?
রাতের ম্যাচের ফিল্ডিং, আম্পায়ারিং, অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ২ রানে থাকার সময় মুশফিকের স্টাম্পিং থেকে বেঁচে যাওয়া প্রশ্নবিদ্ধ। স্পিনারদের ওপর তামিমের ভরসা নিয়েও শিশিরের রাতে উঠছে প্রশ্ন। তবে উইকেটের মান, ফ্লাডলাইটের নিচে বিচক্ষণ ব্যাটিং - বিপিএলের আজকের রাতটা জাগিয়েছে আশা। বিনোদনের দিক থেকে ম্যাচটা হতাশ করেনি। শুধু বিনোদন নয়, ব্যাটিংও আজ ছিল মানসম্পন্ন। যেভাবে বরিশালের হয়ে অভিজ্ঞ রিয়াদ, মুশফিকরা পথ দেখিয়েছেন এরপর টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজির হটকেক লুইস যেই তাণ্ডব চালিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার। সেই সাথে বিজয়-আফিফ-হোপদেরও প্রশংসা প্রাপ্য। ঝড়ো শুরু হলেও লুইস ফেরার পর ম্যাচের দখল নিতেই পারত বরিশাল। তাদের সেই সুযোগটা দেয়নি বিজয়-আফিফের বিচক্ষণ জুটি। বোলার পড়ে সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে হোপ এসেই আক্রমণের জন্য যেই ওভার বেঁছে নিলেন তাতেও মেলে ক্রিকেটীয় জ্ঞানের ছাপ। আজকের রাতটা তাই বিপিএলের জন্য আশার রাত বলা চলে।