জয় দিয়ে বাবরের প্রত্যাবর্তনের দিনে বিপিএলে দেখা মিলল থ্রিলারের
বিপিএল ২০২৪
১ম ম্যাচ (টস - রংপুর/ফিল্ডিং)
সিলেট স্ট্রাইকার্স - ১২০/৮, ২০ ওভার (হাওয়েল ৩৭, কাটিং ৩৭, শান্ত ১৪, মাহেদী ২/১৮, রিপন ২/১৯, নবী ১/১৭)
রংপুর রাইডার্স - ১২৫/৬, ১৮.২ ওভার (বাবর ৫৬*, ওমরযাই ৪৭*, হেমন্থ ৩/২০, অপু ১/১৮, এনগারাভা ১/২৮ )
ফলাফল - রংপুর ৪ উইকেটে জয়ী
২য় ম্যাচ (টস - কুমিল্লা/ফিল্ডিং)
ফরচুন বরিশাল - ১৬১/৯, ২০ ওভার (মুশফিক ৬২, সৌম্য ৪২, তামিম ১৯, মোস্তাফিজ ৩/৩২, চেইজ ২/২৫, ফোর্ড ২/৩৩)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস - ১৬৫/৬, ১৯.৫ ওভার (কায়েস ৫২, জাকের ২৩*, রিজওয়ান ১৭, ওয়েলালাগে ৩/২৬, খালেদ ১/৩২, আফ্রিদি ১/৪০)
ফলাফল - কুমিল্লা ৪ উইকেটে জয়ী
বিপিএলে স্বাগতম বাবর! অভিনন্দন, ওমরযাই!
পিসিবি হুট করে নতুন নিয়ম করে বেঁকে বসায় বিপিএল এবার হারিয়েছে অনেক পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। তবে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম যখন বিপিএলে পা রাখলেন তখন আর সেসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আর নেই। বাবর সেই সুযোগটাও রাখলেন না। দুর্বিষহ এক নিউজিল্যান্ড সফরে নিজে ব্যাট হাতে রান পেয়েছেন বাবর; বিপিএলে ফেরার দিনটাও স্মরণীয় করে রাখলেন ম্যাচ জয়ী ফিফটিতে। লক্ষ্যটা অবশ্য একেবারেই বড় ছিল না। প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা যেমন মাহেদী-নবীর স্পিনজুটির পাশাপপাশি তরুণ পেসার রিপন মণ্ডলের জন্য কোনও জবাব তৈরি করতে পারেনি তেমনি বাবরের সতীর্থরাও মুষড়ে পড়েছেন দুশান হেমন্থর সামনে। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে স্বল্প রানের লক্ষ্যের দিকে যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল সেটাই করেছেন বাবর। ছয় উইকেট হারিয়ে বসায় তবুও তার সঙ্গীর প্রয়োজন ছিল; সেটা করলেন আজমতউল্লাহ ওমরযাই। বলা যায়, বাবরের কাজটাও সহজ করে দিয়েছেন তিনিই। যথাযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবেই তাই ম্যাচ সেরা হয়েছেন আফগান এই অলরাউন্ডার। ৫৬* রানে থেকে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন বাবর। তবে ৩৫ বলে ওমরযাইয়ের ৪৭* রানের ইনিংসটা না এলে ম্যাচের পাল্লা ঘুরে যেতে পারত অন্যদিকে।
ফ্লাডলাইটের নিচে থ্রিলার উপহার দিয়েই জয়ের খাতা খুলল কুমিল্লা
রাতের ম্যাচটা গতকাল আশা জাগিয়েছিল। আজ সেই আশার পারদ আরও উঁচুতেই চড়িয়ে দিল কুমিল্লা ও বরিশাল। তবে গত রাতের মত আজও পরাজিত দলের নাম ফরচুন বরিশাল। আজও প্রথমে ব্যাট করতে হয়েছে তাদের; আজও আরও একবার ব্যাট হাতে সফল মুশফিকুর রহিম। গতকাল তামিম ইকবালের পর আজ তিনি বিপিএলের ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। সেই সাথে মিডল অর্ডারে নামা সৌম্য সরকার পেয়েছেন রান। তবে সৌম্যর ৪২ রানের সাথে মুশফিক ৬২ রানের ইনিংস খেললেও অন্য আর কেউ সেই অর্থে অবদান রাখতে পারেননি। সংগ্রহটা লড়াকু হলেও মোস্তাফিজের ডেথ বোলিংয়ের সৌজন্যে শেষদিকে খুব একটা রান তুলতে না পারায় বরিশালকে ভাবতেই হত।
ভাবনার সেই জায়গাটায় অবশ্য স্বস্তি দিয়েছিল তাদের প্রথম দিকের বোলিং। ওয়েলালাগের দারুণ বোলিংয়ে নবম ওভারে মাত্র ৫৬ রান তুলে কুমিল্লা হারিয়ে বসেছিল ৩ উইকেট; যার মধ্যে ছিলেন লিটন দাস ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের মত নাম। তবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস প্রতিপক্ষকে চড়ে বসতে দেননি। ৫২ রানের ইনিংস খেলে তিনি যখন ফিরলেন তখনও ম্যাচের ভাগ্য দুলছে পেন্ডুলামের মত, ভালো শুরু করেও জাকের আলী অনিক যখন হাত খুলতে পারছেন তখনও জেগেছিল শঙ্কা। তবে শেষ ওভারে ১৩ রান প্রয়োজন হলেও খুশদিলের ১৭ রানের সাথে শেষ ওভারে ম্যাথিউ ফোর্ডের ৪ বলে ১৩* রানের দারুণ ক্যামিওতে রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচ দিয়েই জয়ের খাতায় নাম লেখাল বিপিএল চ্যাম্পিয়নরা।
কাঠগড়ায় তামিমের অধিনায়কত্ব; প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে দিনের উইকেট নিয়ে
মিরপুরে দিনের আলোয় খেলাগুলো যে কোনোভাবেই শীর্ষস্থানীয় কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের যোগ্য নয় সেটা নিয়ে নতুন করে রব তোলার আর কিছু বাকি নেই। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাটার মাঠে নামলেন ঠিকই; তবে উইকেট ও খেলার মান থেকে গেল সেই গড়পড়তা মানেরই। সেই তুলনায় টানা দুই দিনে রাতের খেলায় মিলল আশা। আজ তো দেখা মিলল থ্রিলারের। তবে ম্যাচটা থ্রিলার হওয়ার পেছনে হয়ত তামিমের ধরাবাধা অধিনায়কত্ব নিয়েও কথা উঠতে পারে। খালেদ আহমেদের ডেথ বোলিং সবসময় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তবে তার সিম পজিশনিংয়ের জন্য ফ্লাডলাইটের নিচে নতুন বল হাতে তিনি যে ভালো করতে পারেন তা তিনি দেখিয়েছেন। আজও শুরুটা ভালো করেছিলেন। নবম ওভারে তাকে আক্রমণে আনলে তিনি প্রথম ওভারেই ফেরান লিটনকে; খালেদের পূর্ণ ব্যবহার না করে তাকে শেষ ওভারেই বল করানোর জন্য বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে তাই প্রশ্ন থেকেই যায়। এরপর বিশেষ করে বলতে হয় ওয়েলালাগের কথা। প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত বল করে ফেরালেন রিজওয়ানকে। এরপরের বলেই হৃদয়ও ফিরলে উইকেটে আসেন বাঁহাতি কায়েস। ওয়েলালাগের পরের ওভারেই কায়েস একটা ছয় মারলেই তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বাঁহাতির বিপক্ষে বাঁহাতি অফ স্পিনার বল করাতে না চাওয়ায় সেই চিরচেনা বাংলাদেশি মানসিকতাটাই আবার দেখালেন তামিম; কায়েসও যেন সেটা পড়েই রয়েসয়েই খেলেছেন। শেষমেশ ঠিকই কায়েসের সামনেই আনতে হয়েছে ওয়েলালাগেকে; সেটাও তেরো ও পনেরো ওভারের কোঠায়। সিদ্ধান্তগুলোর মাশুল গুণতে হয়েছে তাদের টানা দ্বিতীয় হারেই।