হারের বৃত্তেই ঘুরপাক তামিমের বরিশালের; সিলেটে রংপুরের 'অলরাউন্ড' পারফরম্যান্স
বিপিএল ২০২৪
১ম ম্যাচ (টস - রংপুর/ফিল্ডিং)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স - ১৯৩/৪, ২০ ওভার (আভিষ্কা ৯১, দীপু ৩১, ক্যাম্ফার ২৯*, তাইজুল ২/২৬, কারিয়া ১/৩৩, রাব্বি ১/৪৩)
ফরচুন বরিশাল - ১৮৩/৭, ২০ ওভার (শেহজাদ ৩৯, মিরাজ ৩৫, তামিম ৩৩, ক্যাম্ফার ৪/২০, বিলাল ২/৩৬, আল-আমিন ১/৪৫ )
ফলাফল - চট্টগ্রাম ১০ রানে জয়ী
২য় ম্যাচ (টস - ঢাকা/ফিল্ডিং)
রংপুর রাইডার্স - ১৮৩/৮, ২০ ওভার (বাবর ৬২, ওমরযাই ৩২, নুরুল ২৬, সানি ৩/৩২, তাসকিন ১/১৪, গুনাতিলাকা ১/২৫)
দুর্দান্ত ঢাকা - ১০৪, ১৬.৩ ওভার (রস ৫১, আইয়ুব ১৭, মোসাদ্দেক ১৫, মাহেদী ৩/১১, ওমরযাই ২/১৪, হাসান ২/১৮)
ফলাফল - রংপুর ৭৯ রানে জয়ী
টি-টোয়েন্টির জয়গান যেন বরিশালের হরিষে বিষাদ
সিলেটে আজ প্রথম ম্যাচটা যেন ছিল টি-টোয়েন্টির আদর্শ বিজ্ঞাপন। তা সত্ত্বেও টানা তৃতীয় পরাজয় বরণ করতে হল বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে সাজানো ফরচুন বরিশাল। তামিমের দলকে চট্টগ্রাম ব্যাটিংয়ের ঝলকে হতভম্ব করে দিলেও শেয়ানে শেয়ানে লড়েছিল তারা। তীরে এসে তরি ডোবায় অধিনায়ক নিজের দিকে আঙুল তাক করতেই পারেন। তবে দিনশেষে চট্টগ্রামের আইরিশ অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফারকে অভিবাদন না জানিয়ে উপায় নেই।
শ্রীলঙ্কান ব্যাটার আভিষ্কা ফার্নান্দোর ঝড়ের দিনেও ম্যাচ সেরা ক্যাম্ফার - এটুকুই তার পারফরম্যান্স তুলে ধরতে যথেষ্ট। 'ক্যারি দ্য ব্যাট'-এর কীর্তি এই মৌসুমে তার ব্যাট থেকেই প্রথম দেখল বিপিএল। সেঞ্চুরি হাতছাড়া হলেও ৫০ বলে ৯১* রানের দারুণ ইনিংসে চট্টগ্রামকে এনে দিয়েছিলেন বড় সংগ্রহ। সেঞ্চুরিটা হয়ত হাতছাড়া হত না অন্য প্রান্তে হুট করে মাঝে চাপ তৈরি না হলে। শাহাদাত হোসেন দীপু, নাজিবউল্লাহ জাদরান মাঝে কিছুটা মিইয়ে না গেলে তার গল্পটা অন্যরকম হলেও হতে পারত। তবে ক্যাম্ফার এসে শেষদিকে ঝড় তুলে তাকে সাহায্য করেছেন বটে। ক্যাম্ফারের ৯ বলে ২৯* রানের ইনিংসটা যেন মনস্তাত্ত্বিকভাবেও এগিয়ে দিয়েছিল চট্টগ্রামকে। তবে হুট করে শোয়েব মালিক বিপিএল ছাড়ায় সুযোগ পেয়ে পিএসএল থেকে অবসরের সব ক্ষোভ ঝাড়তেই যেন এদিন পণ করে নেমেছিলেন আহমেদ শেহজাদ। শুভাওগত হোমের ওপর চড়াও হয়ে চট্টগ্রামের আত্মবিশ্বাসের পারদটা নামিয়ে দিয়েছিলেন প্রায়। ১৭ বলে ৩৯ রান করে তিনি ভিত গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই। তবে তামিম ইকবালের ৩০ বলে ৩৩ রানের সাথে অভিজ্ঞ সৌম্য, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের মন্থর ব্যাটিংয়ে লাভ হয়নি। বলা ভালো হতে দেননি ক্যাম্ফার। ৪ উইকেট নিয়ে মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে কার্যত চট্টগ্রামের জয় সিলগালা করে ফেলেছিলেন। তবে হাল না ছাড়া মিরাজ অবিশ্বাস্য কিছু করার প্রত্যয় নিয়েই নেমেছিলেন। সঙ্গের অভাবে তার ১৬ বলে ৩৫ রানের ঝড়টা তাই বৃথাই গিয়েছে।
জয়তু বাবর-ওমরযাই
রংপুরের নায়ক আবারও বাবর আজম ও আজমতউল্লাহ ওমরযাই জুটি। এক ম্যাচ আগে এই দুজনেই ছিলেন জয়ের কারিগর; সিলেটে জয়ের খাতা খোলার দিনেও হল তাই। রংপুরকে আরও একবার দারুণ শুরু এনে দিয়ে আসরে নিজের মাত্র তৃতীয় ম্যাচেই দ্বিতীয় ফিফটি পেয়ে যান বাবর। তবে ১৬.৩ ওভারে বাবর যখন ৪৪ বলে ৬২ রান করে ফিরলেন তখনও রংপুর হয়ত ১৮০+ সংগ্রহের কথা ভাবেনি। তবে ৩ ছয়, ২ চারের দারুণ ইনিংসে ১৫ বলে ৩২ রান করে সেটাই সম্ভব করেছেন ওমরযাই।
ঢাকার জন্য সেটা চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে সন্দেহ ছিল না। সেই সাথে আগের দিনের আভাস ঠিক থাকলে সিলেটে রাতে রান তাড়াটা কঠিন হওয়ার কথা, হলও তাই। রংপুরের বোলারদের কাছে পাত্তাই পায়নি ঢাকা। বল হাতেও হন্তারক আবারও ওমরযাই; মেইডেন দিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ দুটো উইকেট নিয়েছেন। সেই সাথে মাহেদী যেন এদিন দুর্বোধ্য। এক অ্যালেক্স রস ফিফটি করে যা একটু জবাব দিয়েছেন। মাহেদী-নবী-সাকিবদের স্পিনের জন্য আর কারও সেই অর্থে কোনও উত্তর ছিল না।
সিলেটে ফিরছে বিপিএলের প্রাণ?
সিলেটে আজ প্রথম ম্যাচটার মত ম্যাচ দর্শকরা বারবার দেখতে চাইবেন। হ্যাঁ, বরিশালের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বরিশালের খর্বশক্তির বোলিং লাইনআপ বা তামিমের ধরাবাঁধা অধিনায়কত্ব নিয়েও চায়ের কাপে ঝড় উঠতে পারে। তবে ব্যাটে-বলের সমানে সমান এরকম লড়াই বিপিএল নিয়ে দর্শকদের আশাবাদী করবে।
তবে রাতের ম্যাচটা নিয়ে থেকে যাচ্ছে শঙ্কা। গতকালের মত আজও রাতে সময় যত গড়িয়েছে ব্যাটিং তত কঠিন হয়েছে। স্পিনাররা বল হাতে বাইশ গজের মাঝে ছুঁড়তে পারলেই ব্যাটারদের যেন নাভিশ্বাস ছোটার অবস্থা। তবে ঢাকার ব্যাটিংয়ের মান নিয়েও থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন। একইসাথে ব্যাটিং করার সময় মোসাদ্দেক যখন ১০০-এর ওপর স্ট্রাইক রাইট রাখতেই খাবি খাচ্ছিলেন তখন রস দেখিয়েছেন কীভাবে বোলারদের সামলাতে হয়। তাই উইকেটকে আজ গতকালের মত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই।