নিশ্চল শান্ত যেন সিলেটেরই প্রতিচ্ছবি
নাজমুল হোসেন শান্ত ৫ রান করে আউট হয়েছেন দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে। আউট হয়েছেন, ড্রেসিংরুমে চলে যাওয়াই স্বাভাবিক। অথচ পরের ওভারের একটি বল যায়, আরেকটি বল যায়- চারটি বল হয়ে গেল, অনড় শান্ত তখনও সিলেট ডাগআউটের সামনে দাঁড়িয়ে। কী হলো? যা হলো, তা মেনে নিতে পারছেন না বলেই হয়তো অবিশ্বাস কিংবা হতাশা শান্তর চোখেমুখে। সিলেটের সমর্থকদের মনেও এখন একই ধরনের প্রশ্ন। কী হয়ে গেল সিলেট স্ট্রাইকার্সের! টানা চারটি ম্যাচ হেরে গেল মাশরাফির দল। অথচ গেল আসরেই তো টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো পা রেখেই স্ট্রাইকার্স ফ্র্যাঞ্চাইজি শুরু করেছিল টানা পাঁচ জয় দিয়েই।
এবার সেখানে চার ম্যাচ শেষেও সিলেট তাদের সেরা কম্বিনেশন খুঁজে পেতেই ব্যর্থ। চার ম্যাচেই তারা খেলিয়ে ফেলেছে ১৬ জন ক্রিকেটারকে। বারবার পরিবর্তনেও ফলাফলে আসছে না বদল। সেরা একাদশটা ঠিক করার কাজটা তাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে, জাকির হাসানও বলেছেন সেকথাই, ‘কিছুটা বলতে পারেন। এরকম যখন হারতে থাকেন তখন সেরা একাদশ সেট করা কঠিন। তবুও আমরা চেষ্টা করছি সেরা কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়ার। দেখি সামনের ম্যাচে কী হয়।’
হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা দলের কিছুই যেন সঠিক হয় না। একই সুরে কথা শোনা গেল সোমবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে আট উইকেটের হারের পর জাকিরের মুখে, ‘ব্যাটিংয়ে আমরা ভালো স্কোর দিতে পারিনি। শেষ ম্যাচে বোলাররা ভালো বল করেছিল কিন্তু আমরা ওটা চেজও করতে পারিনি। তো হয়তো দ্রুত উইকেট যাওয়ার কারণে আমরা ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছি। তবে এখনও ফিরতে পারি, অপশন আছে। সামনের ম্যাচ থেকে কামব্যাক করতে পারব।’
সিলেট এক ম্যাচ বাদে সবকটি ম্যাচেই শুরুতেই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে পড়ে গিয়েছিল। চট্টগ্রামের বিপক্ষে তাদের মৌসুমের প্রথম ম্যাচে ৬৭ রানের ওপেনিং জুটি পেয়েছিল সিলেট। রংপুরের বিপক্ষে ৩৯ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে এরপর ভোগান্তি শুরু। কুমিল্লার বিপক্ষে ২৮ রানেই ৬ উইকেট খুইয়ে ফেলেছিল। পরে চট্টগ্রামের বিপক্ষেও এদিন ৮ রানেই ২ উইকেট চলে গিয়েছিল স্টাইকার্সের।
সিলেটের মাঠে ছয়দিন হবে বিপিএলের খেলা। সেখানে একদিন বাদে প্রত্যেকদিনই মাঠে নামবে সিলেট স্ট্রাইকার্স। সোমবারের ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে গ্যালারী ফাঁকা দেখা গিয়েছিল অনেকটুকুই। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে শুরু করা মাশরাফির দলের দিক থেকে তাহলে কী মুখ ফিরিয়ে নিবে সিলেটের সমর্থকেরা? প্রশ্নটা উঁকি দিচ্ছে স্টেডিয়ামপাড়ায়। সিলেটে অবশ্য এমনিতে দর্শকদের কোনও অভাব হয় না। সিলেটের ছেলে জাকিরও জানেন সে ব্যাপারে, ‘গতবার পারফরম করেছি দেখেই দর্শকরা এসেছে। এখানে প্রথম ম্যাচে এসেছিল। এবার ডে ম্যাচ বলে হয়তো কম এসেছে। আমরা পারফরম করলে আবার দর্শকরা আসবে। সিলেটে আমাদের হোম, গতবার ভালো করেছিলাম এখানে। কিন্তু এবার পারছি না। চেষ্টা করছি ফাইট ব্যাক করতে।’
দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার খেলা নিয়েই এদিকে উঠে যাচ্ছে প্রশ্ন। আনফিট মাশরাফি ছোট্ট রানআপে বোলিং করে যাচ্ছেন স্পিনারদের মতো। টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য এতে নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কই হয়েছে, মাশরাফিকেও দিতে হয়েছিল জবাব। দলের অধিনায়ককে নিয়ে এমন পরিস্থিতি কী দলের পারফরম্যান্সে কোনও প্রভাব ফেলেছে, এমন প্রশ্নে জাকির উত্তর দিয়েছেন, ‘না ওটা না, উনি তো গতবারও পারফরম করেছিল। আসলে ইস্যু ওটা না।'
মূল সমস্যা তাহলে কোথায়? নতুন কিছু বলেননি বাঁহাতি ব্যাটার জাকির, 'আমরা নিজেদের জায়গা থেকে ডেলিভার করতে পারছি না। এটাই মেইন ইস্যু। সবাই অনুশীলন করছি, ওখানে সব ঠিক আছে কিন্তু ম্যাচে সব ঠিক হচ্ছে না।'
শান্ত যেমন আউট হয়ে অবিশ্বাসমাখা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঠায়, সেরকমই অবস্থা বলা চলে সিলেটেরও। শান্ত যেন এবারের আসরের সিলেটেরই প্রতিচ্ছবি।