অদম্য ওমরযাই, 'ফিনিশার' মাহমুদউল্লাহ: রংপুরের জয়যাত্রার বিপরীতে সিলেটের টানা পঞ্চম হারের গ্লানি
বিপিএল ২০২৪
১ম ম্যাচ (টস - রংপুর/ব্যাটিং)
রংপুর রাইডার্স - ১৬৫/৫, ২০ ওভার (বাবর ৩৭, ওমরযাই ৩৬*, ফজলে ৩০, রেইফার ২/২০, তানভীর ১/১৯, খুশদিল ১/২৫)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস - ১৫৭/৬, ২০ ওভার (অঙ্কন ৬৩, হৃদয় ৩৯, জাকের ১৮*, ওমরযাই ২/৩১, নবী ১/১৯, হাসান ১/২৩)
ফলাফল - রংপুর ৮ রানে জয়ী
২য় ম্যাচ (টস - সিলেট/বোলিং)
ফরচুন বরিশাল - ১৮৬/৫, ২০ ওভার (শেহজাদ ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ৫১, মুশফিক ২২, হাওয়েল ৩/২১, নাঈম ১/৩৬, এনগারাভা ১/৪৯)
সিলেট স্ট্রাইকার্স - ১৩৭, ১৭.৩ ওভার (জাকির ৪৬, শামসুর ২৫, হাওয়েল ২৪, ইমরান ৪/২৯, মিরাজ ২/২১, খালেদ ২/২৯)
ফলাফল - বরিশাল ৪৯ রানে জয়ী
বিপিএলে চলছে 'ওমরযাই শো'
আজমতউল্লাহ ওমরযাইকে এবার যেন থামানোই দায়। ব্যাটে-বলে একের পর এক ম্যাচ জয়ী পারফরম্যান্সের পসরা সাজিয়ে রংপুর ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। আজও শুরুতে বাবর আজম দলের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু বাবর বা ফজলে মাহমুদ রাব্বিরা কেউই সেই অর্থে গতিময় ইনিংস খেলেননি। রেইমন রেইফারের দারুণ স্পেলের পাশাপাশি দুই স্পিনার খুশদিল শাহ ও তানভীর ইসলামকে আঁটসাঁট লাইনে বল করে যাওয়ার কৃতিত্ব সেখানে দিতেই হয়। তবুও এর মাঝে ওমরযাই দেখালেন ঝলক। ২০ বলে ৩৫* রানের যেই ইনিংসটা খেলেছেন সেটাই দিনশেষে ব্যবধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই ইনিংস যাতে বিফলে না যায় বল হাতে সেটা নিশ্চিত করেছেন নিজেই ৩ উইকেট নিয়ে। মাহিদুল ইসলাম অংকন ফিফটি করে চেষ্টা করেছিলেন। তবে ৫৫ বলে করা তার ৬৩ রানটা শেষমেশ কাজে আসেনি; যার জন্য নিজেকে সংবাদ সম্মেলনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন নিজেই।
শেহজাদের ফিফটি, ইমরানের স্পেল ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে 'ফিনিশার' রিয়াদ
বিপিএলে এলেই যেন অন্য এক আহমেদ শেহজাদের দেখা মেলে। বিপিএলের ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান তিনি। এবার হুট করেই এলেন শোয়েব মালিকের প্রস্থানের পর। অথচ আসার পর থেকেই যেন রানের ফোয়ারা ছুটছে তার ব্যাট থেকে। সিলেটের বেহাল দশার পাশাপাশি বরিশালেরও ভগ্নদশাই ছিল বলতে হয়। তবে এদিন শেহজাদ ঝড়ো শুরু এনে দিয়ে ফিফটি তুলে নিয়ে নিশ্চিত করলেন যেন দল একটা ভালো ভিত পায়। ৪৪ বলে তার ৬৩ রানের পর মাঝে বরিশাল খাবি খাচ্ছিল ঠিকই। অবশ্য মাহমুদউল্লাহ যখন নামলেন সব শঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন। চেপে বসা সামিত পাটেলকে দারুণ দুই চার মেরে ইঙ্গিত দিয়েছেন জ্বলে ওঠার। এরপর রিচার্ড এনগারাভার সাথে যা করলেন তাতে সিলেটের আত্মবিশ্বাস যেন গিয়ে ঠেকেছিল তলানিতে। আগের ওভারে বেরিয়ে এসে এক্সট্রা কাভার দিয়ে দারুণ দুই চার মারার পরের ওভারের শুরুতেই ওয়াইড ইয়র্কার পড়ে বলের লাইনে গিয়ে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে যেই চার মারলেন তাতেই যেন ভেঙে পড়েছিলেন এই জিম্বাবুইয়ান পেসার। সেখান থেকে এলোমেলো লাইনে বল করলে মাহমুদউল্লাহও নেন পূর্ণ সুযোগ। ওভারে ২১ রান তুলে মাত্র ২৩ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। তার বদৌলতে বরিশাল বড় সংগ্রহ পেয়ে গেলে সিলেট যেন মনস্তাত্ত্বিকভাবে সেখানেই হেরে গিয়েছিল। আরও একবার জাকির একাই লোড়েছেন। কিন্তু ম্যাচের কোনও পর্যায়ে তারা জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি। ইমরানের চার উইকেটের সাথে মিরাজ, খালেদের কার্যকর স্পেলে বরিশাল তাই হেসেখেলেই জয় পেয়েছে।
স্ট্রাইকারদের হাতে যেন নেই কোনও নাই স্ট্রাইক!
সিলেটের আসলে সমস্যাটা কোথায় সেটা ঠাহর করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাজমুল হোসেন শান্ত আজ শুরুতে যেই ঢঙ্গে আউট হলেন তা একেবারেই বেমানান। পুরো ম্যাচে মাশরাফি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অধিনায়কত্ব করলেন, হাতও ঘুরালেন না বল হাতে। এক জাকির প্রতিদিন যা একটু রান করে চলেছেন। তবে নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনার ছাপ নেই। এনগারাভার ২১ রানের ওভারটাই ধরুন। রিয়াদ অফে সরে এসে চার মারার পর পায়ের ওপর ফুল টস দিয়ে চার খেলেন এনগারাভা। এরপর ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগ থেকে ফিল্ডার সরানো হলেও সেই পায়ের ওপরেই ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ তো আর ব্যাটটা আলতো করে লাগাতে ভুল করবেন না। শুধু বোলিং, ফিল্ডিং নয় - ব্যাটিংয়েও দিকহারা পথিকের মত এগুচ্ছে সবাই। জাকির হাত খুললে অন্য প্রান্তে আগলে রাখার মত অবস্থা থাকে না কারও। শেষমেশ জাকিরকেই আবার হাল ধরতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাঁচটির পাঁচটিতেই হেরে বসা সিলেটের বাকি যাত্রাটাও বোধহয় বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে চলেছে।